পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুরে সরকারি বিনামূল্যের বই ফেরিওয়ালাদের কাছে কেজি দরে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৌশিক আহমেদ বইগুলো জব্দ করেছেন। এ সময় ট্রাকে থাকা প্রায় ৪ টন বই জব্দ করেন, যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৫ লক্ষ টাকা ধার্য্য করা হয়।
রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলার মহিপুর থানার মোয়াজ্জেমপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক মাধ্যমিক স্তরের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি, ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, ক্যারিয়ার শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, চারুপাঠ, কৃষি শিক্ষা, আনন্দপাঠ, গার্হস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ের বই ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি করেছেন।
সূত্র জানায়, উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর সালেহীয়া আলিম মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক একেএম আবুবকর সিদ্দিক ও বাংলা প্রভাষক হাসান এবং অধ্যক্ষের ছেলে অফিস সহকারী মিরাজ ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে গোপনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের সরকারি বিনামূল্যের বই কেজি দরে ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি করেন।
স্থানীয়রা ফেরিওয়ালাদের কাছে সরকারি বই দেখতে পেয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জবাবে তারা প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে বইগুলো কিনেছেন বলে জানান।
ফেরিওয়ালা কাওছার শেখ জানান, তিনি বইগুলো মোয়াজ্জেমপুর ছালেহিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে ক্রয় করেছেন।
বইগুলোর গায়ে ‘২০২১ শিক্ষাবর্ষ' ও ‘২০২২ শিক্ষাবর্ষ' লেখা রয়েছে তামিম নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আমরা সন্ধ্যার পরে মাদ্রাসার সামনে একটি ট্র্যাক ও কয়েকজন লোককে দেখতে পাই। বিষয়টি আমাদের সন্দেহজনক মনে হলে আমরা স্থানীয় কয়েকজনকে খবর দেই, তারা বিষয়টি টের পেয়ে দ্রুত স্কুল মাঠ ত্যাগ করেন আমরা পরবর্তীতে এক কিলো দূরে গিয়ে ট্রাক সহ তাদের আটক করি। সেখানে কেন এসেছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘এই স্কুল থেকে কিছু বই কিনেছি'। দেখতে চাইলে তারা উপস্থিত লোকজনের সামনে বইগুলো দেখান।”
তিনি আরও বলেন, “বইগুলোর গায়ে ‘২০২১ শিক্ষাবর্ষ' ও ‘২০২২ শিক্ষাবর্ষ' লেখা রয়েছে।
মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের বাসিন্দা বনি আমিন বলেন “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এত সংকটের মধ্যেও শিক্ষার্থীদেরকে বিনামূল্যে বই দিয়েছেন। অথচ প্রধান শিক্ষক চাহিদার অতিরিক্ত বই এনেছেন। তাই অতিরিক্ত বই তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। এই অসৎ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
সরকারি বই বিক্রির বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আবুবকর এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আমি একা নই স্কুলের অন্য শিক্ষকদের সাথে রেজুলেশন করে বইগুলো বিক্রি করেছি। সরকারি বই বিক্রি করা বৈধ কিনা? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, “আমরা বিক্রি করা বইগুলো জব্দ করেছি। অধ্যক্ষকে (আবুবকর সিদ্দিক) কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পাঁচ দিনের মধ্যে প্রধান শিক্ষককে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এরপর তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সহকারী কমিশনার ভূমি কৌশিক আহমেদ বলেন, মহিপুর থেকে সরকারি বিক্রি করা বই জব্দ করি, পরে ট্রাক সহ বইগুলো মহিপুর থানাকে হস্তান্তর করি। এবং একাডেমি সুপারভাইজার মনিরুজ্জামানকে নিয়মিত মামলা করার নির্দেশ দেই।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন “স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৌশিক আহমেদ কে পাঠিয়ে বইগুলো জব্দ করা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জেলা প্রশাসক (শিক্ষা আইসিটি) মরিয়ম বেগম বলেন, “তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বই বিক্রির ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
জনপ্রিয় খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: