বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে লড়াই করছে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহল। এখন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাহসী স্কুলছাত্রীদের নিজের বাল্যবিয়ে নিজে রোধ করার উদাহরণ অহরহ। বাল্যবিয়ে হচ্ছে— এমন খবর পেলেই ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে খবর যাচ্ছে, সেই বিয়ে বন্ধও হচ্ছে।
কিন্তু একি কাণ্ড ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বাঁচোর ইউনিয়নের ? এখানকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) তুলা রায় অষ্টম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে (১৪) পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছেন।
তার পরিপেক্ষিতে ইউপি সদস্য (মেম্বার) তুলা রায়কে অপরাধমূলক কার্যক্রম স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ আইন, ২০০৯-এর ৩৪(৪) ঘ ধারা অনুযায়ী তার স্বয়ং পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন স্থানীয় সরকার উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউপি -১ শাখা (সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার)।
স্থানীয়রা বলছে, একজন ইউপি সদস্য যেখানে বাল্যবিয়ে ঠেকাবেন, সেখানে ইউপি সদস্য তুলা রায় নিজে অপরাধমূলক কাজ করেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়,পালিয়ে নিয়ে বাল্যবিয়ে করা জুই রাণী উপজেলার রাতোর ইউনিয়নের গোবিনাথপুর গ্রামের সুঠিন চন্দ্র রায়ের মেয়ে। ওই শিক্ষার্থীকে নানাভাবে ফুসলিয়ে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন ইউপি সদস্য তুলা রায়। এর পর ওই ইউপি সদস্য গোপনে বিয়ে করেন। ১৪ বছর আগে তুলা রায় প্রথম বিয়ে করেন। তার স্ত্রী ও দুই স্কুল পড়ুয়া সন্তান রয়েছে।
বাল্যবিয়ের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম দরিদ্রতা, যৌতুক, সামাজিক প্রথা, সামাজিক চাপ, অঞ্চলভিত্তিক রীতি, নিরক্ষরতা ইত্যাদি। বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ভূমিকার কথা উল্লেখ রয়েছে। বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন-২০১৭ তে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়, ‘সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের নিমিত্ত, জাতীয়, জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা এবং স্থানীয় পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তির সমন্বয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি গঠন এবং উহাদের কার্যাবলি নির্ধারণ করিতে পারিবে।’
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, একজন জনপ্রতিনিধি তাঁর কর্তব্য পালন না করে বাল্যবিয়ে করে অপরাধ করেছেন। তাঁর শাস্তি হওয়া উচিত।
রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন,‘
বিষয়টি লজ্জাজনক। আজ সোমবার স্হানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক ইউপি সদস্য তুলা রায়ের বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তের একটি একটি চিঠি পেয়েছি।
ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে'।
উল্লেখ্য, এই ঘটনার পরিপেক্ষিতে গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার এ সংবাদ প্রকাশিত হলে উপজেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে তদন্ত রিপোর্ট পাঠানো হয় স্থানীয় সরকার উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে। পরে সার্বিক পর্যালোচনা করে জনস্বার্থেের বিবেচনায় স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ আইন,২০০৯-এর ৩৪(৪) ঘ ধারা অনুযায়ী ওই ইউপি সদস্যকে তার পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: