গৌরীপুরে সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের উপকরণ, ধুলাবালির উপর প্রাইমকোড

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি | ২৭ জানুয়ারী ২০২৪, ১৮:১০

গৌরীপুরে সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের উপকরণ, ধুলাবালির উপর প্রাইমকোড
গৌরীপুরে সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের উপকরণ ও ধুলাবালির ওপর চলছে প্রাইমকোড!নিম্নমানের ইটের খোয়া আর ধুলাবালি-মাটির মিশ্রণে তৈরি হচ্ছে কোটি টাকা ব্যয়ে ‘পাকাসড়ক’। আর সেই ধুলাবালি আর মাটির স্তপের ওপরে অল্প বিটুমিন ও কেরোসিন মিশ্রিত প্রাইমকোড দিয়ে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার গজন্দর-শাহবাজপুর সড়ক নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
 
এ প্রাইমকোডের ওপরে কার্পেটিং করলে রাস্তাটি স্বল্প দিনেই ভেঙে যাওয়ার শংকা করেছেন গ্রামবাসী। প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কের নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। কাজ শেষ হওয়ার আগেই নির্মানাধীন সড়কের ইউ ড্রেনের দু’পাশ ফেটে গেছে। সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম সর্বসাধারণকে অবহিতকরণ ও দুর্নীতিরোধ কল্পে প্রত্যেকটি প্রকল্প এলাকায় প্রকল্পের নাম, কাজের ধরণ, প্রাক্কলিক ব্যয়ের পরিমাণ, কাজের পরিমাণ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও বাস্তবায়নকারী সংস্থা, অর্থযোগান সংস্থার তথ্যসহ প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য সমন্বিত প্রজেক্ট প্রোফাইল সাইনবোর্ড করে টাঙানো বাধ্যতামূলক।
এ প্রজেক্ট প্রোফাইল স্থাপনের নির্ধারিত ব্যয়ের অর্থ বরাদ্দ প্রকল্পে থাকলেও লুটপাটের চিত্র প্রকাশ হওয়ার ভয়ে এ প্রকল্পেও খোঁজে পাওয়া যায়নি ‘প্রজেক্ট প্রোফাইল।’
 
জানা যায়, উন্নয়ন প্রকল্পের নাম গজন্দর সরকারি প্রাইমারী স্কুল থেকে শালিহর কুড়পাড় উন্নয়ন সড়ক। প্রকল্পের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন সাবেক এমপি।ঘটনার সত্যতা যাছাইয়ে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাহাবাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে পাকা সড়ক নির্মানে ২ও ৩নং ইটের খোয়া ব্যবহার করায় রোলার মারার পর তা রাবিশে পরিনত হয়েছে। ধুলা বালি মাখা রাবিশের উপর তড়িঘড়ি করে চলছে প্রাইমকোড। এলাকাবাসী একাধিকবার প্রতিবাদ করার পরেও ধুলাবালি ও মাটির স্তুপ সরিয়ে নেয়নি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা।
 
প্রকৌশল বিভাগের কাজ তদারকিতে থাকা কার্যসহকারী মো. জহিরুল ইসলাম তিনিও ছিলেন নিশ্চুপ। এ প্রতিনিধির উপস্থিতিতে এলাকাবাসী দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। বিক্ষুব্দ গ্রামবাসীকে তখন শান্ত রাখতে এগিয়ে আসেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টি এইচ এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মো. আল আমিন। প্রাইমকোডকৃত স্থানের ধুলাবালি সরিয়ে নেয়ার জন্য শ্রমিকদের তাগিদ দেন। আবারও শুরু হয় মাটির স্তুপ ও ধুলাবালি সরানোর কাজ। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাস্তার ওইপাশে পরিস্কার আছে এ প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেখানে আবারও প্রাইমকোড শুরু করে।
 
এবার পরিস্কার স্থানে প্রাইমকোডকৃত সড়কে এলাকাবাসী জুতা দিয়ে সরিয়ে দেখান যে, প্রাইমকোডের নিচে ৩ থেকে ৪ইঞ্চি স্তুরের ধুলাবালি ও মাটির স্তুপ রয়েছে। নতুনকরে এখানে প্রায় একশত ফুট সড়কে প্রাইমকোড করা হয়। যেখানে দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র ছিলো আরো ভয়াবহ। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যেটুকুস্থানে প্রাইমকোড সরিয়ে দিলোছিলো গ্রামবাসী। তা আড়াল করতেই তাড়াহুড়া করে সেখানে আবারও প্রাইমকোড করে ফেলেন। তখনও নিশ্চুপ ছিলো প্রকৌশল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ।
 
 ঠিকাদারের নিকট থেকে প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘাটেঘাটে কমিশন নেয়, কাজ ছাড়াই বিল নিতে পারে, যেটুকু করছে সেটাই তো ভাগ্য আমাদের। তাহলে এক কোটি টাকার কাজ এমন রাবিশ দিয়ে করে কিভাবে? শাহবাজপুর গ্রামের জনৈক ব্যক্তি জানান, রাস্তার কাজ শুরুর সময় ইউ ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ৮ইঞ্চি পুরুত্ব থাকার কথা। অথচ এলাকাবাসীকে বুঝানোর জন্য ৪ইঞ্চি করে দু’পাশে  ৮ইঞ্চি করেছে যা সম্পূর্ণ দুর্নীতি। তিনি আরও বলেন, ইউ ড্রেনের দু’পাশে ফাটল ধরেছে। রাস্তার নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ধসে পড়ার শংকা রয়েছে। কাজে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি হলেও তদারকি থাকা উপপ্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মনি-কে প্রকল্প এলাকায় পাওয়া যায়নি।
 
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে দায়িত্বরত প্রকৌশল বিভাগের কার্য্য সহকারী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদেরকে আমরা বারবার বলেছি পরিস্কার করে তারপর প্রাইমকোড করতে। শ্রমিকরা তাড়াহুড়া করার জন্য এমনটা করেছে। ঠিকাদার মো. আল আমিন বলেন, যেখানে অভিযোগ ছিলো, সেখানে আবারও পরিস্কার করে এখন প্রাইমকোড করছি। উপজেলা প্রকৌশলী অসিত বরণ দেব জানান, ইউ ড্রেনের ফাটলের বিষয়ে একজন অভিযোগ করেছে। রাস্তার খোয়াও পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। এরপরেও যেসব ত্রুটি পাওয়া যাবে, সেগুলো সংশোধন করে দেয়া হবে।উক্ত ঠিকাদারের বিরুদ্বে ২৩ সালে রাস্তা ও স্কুলের কাজের অনেক দূর্নিতী ফেসবুক ও পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও আইনানুগ ব্যবস্হা গ্রহন হয়নি বিধায় একের পর এক লুটতরাজ চলছে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


জনপ্রিয় খবর