হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে কাবু হয়ে পড়েছেন রাণীশংকৈল উপজেলার দুস্থ ও হতদরিদ্র মানুষ। হিমেল হাওয়া, কুয়াশা আর শীতের তীব্রতার কারণে ঘরের বাইরে কেউ তেমন বের হচ্ছেন না। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ।
শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কুয়াশার কারণে গত পাঁচ থেকে ছয় দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল রাণীশংকৈলে।
রবিবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় বলে জানায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
শীতল সমীরণ, যা হাড় কাঁপিয়ে দিচ্ছে। গত কয়েকদিনের তুলনায় এই সপ্তাহে শীতের অনুভূতিও বেশি ছিল। কনকনে শীতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
বিশেষ করে খেটে খাওয়া ও অসহায় মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। শীত নিবারণে মানুষকে বিভিন্ন স্থানে আগুন পোহাতে দেখা গেছে। পাশাপাশি বেড়েছে সোয়েটার, জ্যাকেট, শাল-চাদর, মাফলার-কানটুপিসহ গরম জামা-কাপড়ের কদর। ফলে বাজারে গরম পোশাকের চাহিদা বেড়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতে কাবু হয়ে পড়েছেন দুস্থ ও হতদরিদ্র মানুষ। দিনভর পর্যন্ত কুয়াশায় ঢেকে থাকে চারদিক। শীতবস্ত্রের অভাবে অনেকে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। বেড়েছে বৃদ্ধ ও শিশুদের জ্বর, সর্দি ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ ।
নেকমরদ এলাকার খোকা মিয়া বলেন, ‘ঠান্ডা গাওত কাটি বইসোছে। ঘরোত একটা কম্বলও নাই। রাইতোত খুব কষ্ট হয়। নদী থাকি হু-হু করি ঠান্ডা বাতাস আইসে। এই ঠান্ডা শুরু হইলে হামার গরিবের কামাই কমে, কষ্ট বাড়ে।’
পৌরশহরের রিকশাচালক আব্দুল মালেক বলেন, ‘কয়েক দিন থেকে ঠান্ডার কারণে সকাল সকাল দোকানপাট খুলছে না। যেখানে দুপুরের আগে আমি দেড়-দুই শ টাকা ভাড়া পাই, এখন পঞ্চাশ টাকাও হাতে
আসছে না।’
এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে যানবাহন। শীতে কাতর মানুষেরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে; বিশেষ করে ছিন্নমূল মানুষগুলো শীতের তীব্রতায় দুর্ভোগে পড়েছে।
কাজে বের হতে পারছে না শ্রমজীবী মানুষ। দুর্ভোগ বাড়তে শুরু করেছে হতদরিদ্র পরিবারগুলোর শিশু ও বৃদ্ধদের। বাজার ও বাস টার্মিনালে ছিন্নমূল মানুষ অতিকষ্টে শীত নিবারণ করছে।
রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামাদ চৌধুরী বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে শীতের তীব্রতা বাড়ায় সর্দি-জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে বেশি আসছেন।’যার অধিকাংশ শিশু।
চিকিৎসকেরা বলছেন, শিশুদের বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে। নতুবা ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখা বাড়বে।
তবে শীতকালীন ফসল সরিষা, গম, আলু, বেগুন, পেঁয়াজ, মরিচ ও বোরো ধানের বীজতলা শীত বা কুয়াশায় থেকে রক্ষা পেতে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ ও লিফলেট দেওয়ার কথা জানান রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম।
ধর্মগড় এলাকার সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ছয় দিন ধরে সূর্যের দেখা পাইনি। কুয়াশায় চারদিক অন্ধকার হয়ে আছে। এত ঠান্ডা যে, ঘরে থাকা যায় না। বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)
রকিবুল হাসান জানান, ‘দরিদ্র শীতার্তদের জন্য বরাদ্দ পাওয়া সাড়ে ৪ হাজার কম্বল বিতরণ করেছি। আরও বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে।’
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
জনপ্রিয় খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: