কারচুপি-জালভোটের অভিযোগে

পাবনা-৩ আসনে পুনঃনির্বাচনের দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থীর

স্টাফ রিপোর্টার, পাবনা | ৯ জানুয়ারী ২০২৪, ২১:৩৫

কারচুপি-জালভোটের অভিযোগে পাবনা-৩ আসনে পুনঃনির্বাচনের দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থীর

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র দখল করে ভোট কারচুপি, জালভোটসহ নানা অভিযোগ এনে পাবনা-৩ আসনের ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার সকল ভোট কেন্দ্র এবং চাটমোহর উপজেলার ৬টি ভোট কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আব্দুল হামিদ।

মঙ্গলবার (০৯ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করে এ দাবি করেন তিনি।

লিখিত অভিযোগে ট্রাক প্রতিকের প্রার্থী আব্দুল হামিদ বলেন, গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে পাবনা-৩ আসনে ব্যাপক অনিয়ম ভোট কারচুপি করা হয়েছে। ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার ভোট কেন্দ্র থেকে নৌকার প্রার্থীর ছেলে ও তাদের সমর্থকরা আমার এজেন্টদের জোর করে বের করে দিয়ে জাল ভোট দিয়েছে, অবাধে ভোট কেটে নিয়েছে। ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার ও সহকারি প্রিজাইডিং অফিসারের সহযোগিতায় এসব অনিয়ম করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক ভোট কেন্দ্রের আমার পোলিং এজেন্ট এসব অভিযোগের সত্যতা জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ব্যালট পেপার নিয়ে জোর করে সিল মেরেছে নৌকার লোকজন। অনেক কেন্দ্রের ভোটারদের তুলনায় ভোট বেশি কাটা হয়েছে মর্মে প্রতিয়মান হয়েছে। ফলাফল পর্যালোচনা করলে তার প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া ব্যালটের মুড়ি বই অংশ পরীক্ষা করলে দেখা গেছে সেখানে ভোটারদের কোনো নম্বর বা স্বাক্ষর নেই। আবার অনেক ভোট কেন্দ্রের বাইরে থেকে নৌকার সমর্থকরা আমার ট্রাক প্রতিকের সমর্থিত ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাঁধা দেয়া হয়েছে। অনেককেই ভোট দিতে দেয়া হয়নি। আবার অনেক ভোট কেন্দ্রের ভোটার ও গ্রহণকৃত ভোটের সংখ্যা যাচাই বাছাই করলে অসামঞ্জস্য ধরা পড়বে। কারচুপি ও জালভোটে বিজয়ী হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় আমার অনেক সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও মারধর করা হয়েছে। ৩০ জনের মত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। অন্তত দেড় শতাধিক বাড়িতে ভাঙচুর করেছে নৌকার লোকজন।

জেলা আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, এবারের নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং উৎসবমুখর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন তা প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে ভোটের ফলাফল নিয়ে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। পরাজয় নিশ্চিত জেনে ফলাফল নিজের পক্ষে নিতে নৌকার প্রার্থী ও তার ছেলে নির্বাচনে নানা অনিয়ম ও ভোট জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।

পুন:নির্বাচনের দাবি করে তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে পাবনা-৩ আসনে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে মনে করি। আমি ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার সকল ভোট কেন্দ্রের এবং চাটমোহর উপজেলার ৬টি ভোট কেন্দ্রের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি। তাই যাচাই বাছাই করে পাবনা-৩ আসনে ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার সকল ভোট কেন্দ্র এবং চাটমোহর উপজেলার ৬টি ভোট কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জিয়াউর রহমান টিটু, রিংকু সাহা, সুমন নূরসহ স্থানীয় প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত সংবাদকর্মীরা।

এ বিষয়ে কথা বলতে সদ্য বিজয়ী নৌকার প্রার্থী মকবুল হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তিনি ‘জরুরী প্রয়োজনে ঢাকায় যাচ্ছেন, এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান।’

উল্লেখ্য, পাবনা-৩ আসনে বেসরকারি ফলাফলে নৌকার প্রার্থী মকবুল হোসেন বিজয়ী হয়েছেন। মোট ১৭৬ কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে তিনি ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৬৯ ভোট পেয়েছেন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতিকের আব্দুল হামিদ পেয়েছেন ১ লাখ ১৫৯ ভোট। মকবুল হোসেন এর আগে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। অপরদিকে আব্দুল হামিদ চাটমোহর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য।

পাবনা-৩ আসনে মোট কেন্দ্র ১৭৬টি। এর মধ্যে চাটমোহর উপজেলায় ৮৭টি, ভাঙ্গুড়া উপজেলায় ৪৫টি এবং ফরিদপুর উপজেলায় ৪৪টি কেন্দ্র রয়েছে। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৭৭১ জন। গ্রহণকৃত ভোট ২ লাখ ২২ হাজার ৬৪৭ ভোট। বাতিল হয়েছে ৩৭৪৫ ভোট। ভোট পড়েছে ৪৯.৪০% ।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


জনপ্রিয় খবর