টাঙ্গাইল জেলাজুড়ে শীতের তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলছে। হাড় কাঁপানো এই কনকনে শীতে নানা ধরণের পিঠা বিক্রির পাশাপাশি সিদ্ধ ডিমের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। শীতে লেয়ার মুরগির ডিমের পর্যাপ্ততা থাকলেও শীতে ক্রেতাদের কাছে দেশি হাঁস-মুরগির ডিমের স্বাদ বেশি হওয়ায় চাহিদা একটু বেশি । জেলা সদর ও উপজেলা শহরের অলিগলি, হাট-বাজার ও পথে-ঘাটে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে কিংবা পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে সিদ্ধ ডিম। এদিকে, বাড়তি আয়ের আশায় এ পেশায় যুক্ত হচ্ছে অনেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লেয়ার মুরগির ডিম স্থানীয় ফার্ম থেকে বর্তমানে ৪০-৪৫ টাকা হালি দরে কিনে এনে প্রতি পিস বিক্রি করছেন ১৫ টাকা। এতে প্রতিটি সিদ্ধ ডিমে লাভ হচ্ছে ৪ থেকে ৫ টাকা। অপরদিকে, দেশীয় জাতের হাঁস-মুরগির ডিম সুস্বাধু হওয়ায় ৬০ টাকা হালি গ্রাম থেকে সংগ্রহ করার পর সেগুলো সিদ্ধ করে প্রতি পিস বিক্রি করছে ২০ টাকা দরে। এ ডিমেও তারা প্রতি পিসে লাভ করছেন ৫ টাকা। ডিম বিক্রেতাদের মধ্যে অনেকে শিক্ষার্থী, দিন মজুর, অটোভ্যান চালক ও বৃদ্ধ লোক রয়েছে। এরা শীতকালে বাড়তি আয়ের আশায় বিকাল হলে মধ্যেরাত পর্যস্ত সিদ্ধ ডিম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। বিক্রি শেষে লাভ হয় ৬’শ থেকে ৮’শ টাকা।
ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী স্কুলের রোডের সিদ্ধ ডিম বিক্রেতা ইদ্রিস আলী বলেন,শীত শুরুর আগে থেকে প্রতিদিন রাস্তার পাশে ডিম সিদ্ধ করে বিক্রি করেন। বর্তমান শীতকালে ডিমের চাহিদা বেড়েছে। ফলে বিক্রিও হচ্ছে ভালো। তার দোকানে বসে ডিম খাচ্ছেন সোহেল। প্রতিদিন সন্ধ্যায় তিনি ডিম সিদ্ধ খান। এতে তার শরীরের পুষ্টিগুণ যেমন বাড়ে তেমনি ক্যালারিও পূরণ হচ্ছে বলে তার দাবি। তারমতে, প্রতিদিন সন্ধ্যায় বিকাল থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত সিদ্ধ ডিম খাওয়ার জন্য দোকানে প্রচুর ভিড় লেগে থাকে।
ভূঞাপুর-এলেঙ্গা সড়কের সিংগুরিয়া বাসস্ট্যান্ড মোড়ে ৬৫ বছর বৃদ্ধ কদ্দুস আলী। ছোট পাতিলে করে প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় সিদ্ধ ডিম করে থাকেন। তিনি বলেন, শীতের কারণে সিদ্ধ ডিমের চাহিদা বেড়েছে। দৈনিক দেড় শতাধিক ডিম বিক্রি করা যায়। লেয়ার মুরগির ডিম ১৫ টাকা, দেশি হাঁস-মুরগি ডিম ২০ টাকা করে বিক্রি হয়। প্রতি ডিমে ৪-৫ টাকা করে লাভ হয়। এতে প্রতিদিন দিন গড়ে ৬’শ থেকে ৮’শ টাকা লাভ হয়ে থাকে।
গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক ট্রেড ইন্সট্রাক্টর (পোল্ট্রি রিয়ারিং এন্ড ফার্মিং) আব্দুল লতিফ তালুকদার বলেন, পুষ্টিগুণে ভরপুর লেয়ার ডিমে। দেশীয় হাঁস-মুরগির ডিম সুস্বাধু হলেও লেয়ার ডিমে প্রায় ৩০ শতাংশ পুষ্টিগুণ বেশি রয়েছে। একটি দেশি মুরগির ডিম ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম হয়ে থাকে। অপরদিকে, একটি লেয়ার মুরগির ডিম ৬৫ থেকে ৮০ গ্রাম থাকে। যারফলে পুষ্টিগুণও বেশি থাকে। তাই লেয়ার ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের উপকারী। সাধারণ মানুষের ধারণা, লেয়ার মুরগির চেয়ে দেশি হাঁস-মুরগির পুষ্টিগুণ বেশি। এটি মানুষের ভ্রান্ত ধারণা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্তকর্তা ডা. মো. সোবহান বলেন,শীত এলে অনেকে সিদ্ধ ডিম খেয়ে থাকেন। সিদ্ধ ডিমের মধ্যে নানা ধরণের উপকারিতা রয়েছে। এটি নিয়মিত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তারমধ্যে লেয়ার মুরগির চেয়ে দেশি হাঁস-মুরগি ডিমে পুষ্টিগুণ অনেকটা বেশি। সিদ্ধ ডিম খেলে শরীরের বাড়তি ক্যালরি যোগ হয়। তবে, অনেকে নানা ধরণের বিট লবণ দিয়ে সিদ্ধ ডিম খেয়ে থাকেন। সেই বিট লবণে মুখরোচক কোনো দ্রব্য মেশানো হয় তাহলে শরীরের জন্য উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হতে পারে।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
জনপ্রিয় খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: