পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাত। বয়স মাত্র ১২ বছর। কয়েকদিন আগেও দূরন্তপনা প্রাণোচ্ছ্বল ছিল তার জীবন।তার পদচারণায় মুখর ছিল ক্লাসরুমের সামনের বেঞ্চ , স্কুলের মাঠ, বাড়ির আঙ্গিনা। রিফাত সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়নের ৩৬ নং পুন্ডুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র।
বাবা হতদরিদ্র আরিফ হোসেন একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতা।স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পাঁচজনের সংসার তাঁর। কখনো পথে পথে আবার কখনো স্কুলের পাশে দাড়িয়ে ঝালমুড়ি বিক্রি করে প্রতিদিন দুই থেকে তিনশত টাকা আয় করেন তিনি। এই অল্প আয়ের সংসার ভালো চলে না।এরই মধ্যে সংসারের বড় ছেলে রিফাত হোসেনের ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে।
স্থাণীয় চিকিৎসকেরা জানিয়েছে রিফাতের প্রাণ রক্ষা পেতে পারে, যদি দ্রুত তার মস্তিস্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। ঢাকার কোনো হাসপাতালে ভর্তি ও অস্ত্রোপচার করতে প্রয়োজন হবে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা।
এত টাকা কোথায় পাবেন। কিভাবেই বা জোগাড় হবে,সামর্থ্যও নেই বলে জানান বাবা আরিফ হোসেন মা রিতা খাতুন। বাধ্য হয়েই তাই ছেলেকে বাঁচাতে তার চিকিৎসার জন্য অর্থ সাহায্যের আশায় তাঁরা বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছেন।কিন্তু যে সাহায্য পাচ্ছেন তা একেবারেই অপ্রতুল।এ জন্য তাঁরা দেশের বিত্তবানদের সাহায্যের আকুতি জানিয়েছেন।
কাঁদতে কাঁদতে আরিফ হোসেন বলেন, প্রায় ছয় মাস আগে মাঝে মধ্যে মাথা ব্যাথা করত রিফাতের। এখন এমন হয়েছে যে তীব্র মাথাব্যথায় সব সময় ছঁফট আর কান্না করে। বাবা হয়ে সন্তানের এমন কষ্ট দেখা সম্ভব না। রাতে ঘুমাতে পারে না ,কিছু খেতে পারে না,সামান্য কিছু খেলেই বমি কমে দেয়। ডাক্তারেরা বলেছে অপারেশন করতে হবে। এই রোগের অপারেশন করতে পাঁচ লাখ টাকা লাগবে। কিন্তু এত টাকা আমি কোথায় পাব।তাই টাকা জোগাড় করতে আমি আর ওর মা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাহায্য চাচ্ছি।আমার ছেলেটাকে বাঁচাতে আমাকে সাহায্য করুন স্যার আল্লাহ আপনার ভালো করবে।
পুন্ডুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ছেলেটি অত্যন্ত ভদ্র ও মেধাবী ছাত্র ছিল। ব্রেইন টিউমারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে আমাদের চোখের সামনে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে বিষয়টি আসলেই খুবই কষ্টদায়ক।
আমার স্কুল এবং আমি ব্যাক্তিগতভাবে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।কিন্তু সেটা এই ব্যয়বহুল চিকিৎসায় তা সামান্য।তাই রিফাতের চিকিৎসার জন্য সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহায়তা কামনা করছি।
বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ফাতেমা তুর্য্ জান্নাত বলেন, ‘রিফাতের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ও পরিক্ষার কাগজপত্র দেখেছেন। তাতে দেখা গেছে সে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে তার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউিট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের মতো বড় কোনো হাসপাতালেই এধরনের রোগের অস্ত্রোপচার সম্ভব’।
রিফাত বাবা আরিফ হোসেন ও রিতা খাতুন জানিয়েছেন,প্রায় ছয় মাস আগে হঠাৎ রিফাতের প্রচন্ড মাথা ব্যাথা শুরু হলে প্রথমে স্থানীয় উপজেলা স¦াস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মানসিক ও ব্রেন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাহরিমা মোস্তারীকে দেখানো হলে তিনি জানিয়েছেন রিফাতের ব্রেনে টিউমার ও ব্রেনে ইনফেকশন হয়েছে। সে ক্ষেত্রে অপারেশন ছাড়া তাকে বাঁচানো সম্ভব নয় এবং জরুরি ভিত্তিতে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শও দেন। অন্যথায়, তার প্রাণ নাশের আশংকা রয়েছে।
তারা আরও বলেন, ছেলের চিকিৎসা বাবদ এপর্যন্ত ৫০/৬০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে যা সবই কিস্তি আর ধারদেনায়করা হয়েছে। একদিন ঝালমুড়ি বিক্রি না করলে সংসার চলে না। কিভাবে এত টাকা দিয়ে ছেলের চিকিৎসা করাবো।
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ আলম বলেন, উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরে থেকে শিশুটির চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করা হবে। আমি তার খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি তার চিকিৎসা করার জন্য আর কি ধরনের সহযোগিতা করতে পারি।
রিফাতের উন্নত চিকিৎসার জন্য কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা প্রয়োজন। চিকিৎসার্থে সহযোগিতা করতে রিফাতের মা রিতা খাতুনের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর পুন্ডুরিয়া এজেন্ট শাখা হিসাব নং- ২০৫০৭৭৭০২১৫৯৭০৫০১, বিকাশ ও নগদ নম্বর: ০১৭৮৪-৮৯৯১২০,নগদ: ০১৭০৯-০১০৬৪০
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: