আপন চাচা কর্তৃক

ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে শেরপুরে মানব বন্ধন 

শাহ মুহাম্মদ ইমতিয়াজ চৌধুরী | ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ২১:৩৪

আপন চাচা কর্তৃক ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে শেরপুরে মানববন্ধন 

বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুর ১২ টায় শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়নের কামারের চর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আপন চাচা কর্তৃক ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

স্থানীয় উম্মে সালমা বিদ্যানিকেতনের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী গত ১২ নভেম্বর সকাল আনুমানিক ১০.৩০ টায় তার ফুপা শেখ ফরিদের বাড়িতে ফ্যানের সাথে গায়ের উর্ণা পেচিয়ে আত্মহত্যা করে৷ ফারিয়ার মা কমলা বেগমের দাবি তার মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে।

গত ১২ নভেম্বর দুপুরে শেরপুর সদর থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে৷ কিন্তু নিহতের মা কমলা বেগম এতে সন্তুষ্ট না হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর অধীনে মেয়ের আপন চাচা, ফুপু, ফুপা, দাদা-দাদীকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। আদালতের নির্দেশে পুনরায় লাশ ময়না তদন্তের পর পরিবারের কাছে তুলে দেয়া হয়। নিহতের পিতা ওমর ফারুক প্রায় ৮ বছর আগে ঢাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। মা কমলা বেগম পাশের বাড়ির সজীবুলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ঢাকায় চলে যায়। তারপর থেকে ভুক্তভোগী ও তার ছোট ভাই দাদা-দাদি এবং তার চাচা রকিবুল ইসলামের নিকট লালিত পালিত হয়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় ৬ মাস ধরে নিহত শিক্ষার্থী তার আপন চাচা মোঃ রকিবুল হাসান মিন্টু(২৪) কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়ে আসছিলো। নিহতের মা কমলা বেগমের দাবি এর আগে বেশ কয়েকবার তার মেয়ে তার দাদা দাদি, ফুপু-ফুপা সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জানিয়েছে। কিন্তু কোন প্রকার প্রতিকার পায় নাই৷ পরবর্তীতে নিহত শিক্ষার্থী বিষয়টি তার বান্ধবী এবং শিক্ষকদের জানালে পরিবারের সকলে মিলে তার উপর উল্টো চুপ থাকতে চাপ প্রয়োগ করে এবং নানাভাবে নির্যাতন করে। বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার উদ্যেশ্যে ঘটনার তিন-চারদিন আগে থেকে তাকে তার দশকাহনিয়ার দাদার বাড়ি থেকে বড় ফুপা কামারের চর বাজারের স্থানীয় বেসরকারি স্কুল উম্মে সালমা বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক শেখ ফরিদের বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।

ঘটনার দিন তার চাচা ঐ স্কুলেরই শিক্ষক রকিবুল ইসলাম মিন্টু আবারো তাকে বাড়িতে গিয়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে চাপ প্রয়োগ করায় সে নিরুপায় হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এর আগে, তার ফুপা শেখ ফরিদ, তার স্ত্রী মর্জিনা বেগম ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা মিলে তাকে চুপ করাতে বহুবার মারধর করেছে।

মানববন্ধনে কামারের চর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক মোহতাসিম বিল্লাহ বলেন, চাচা ভাতিজীর সম্পর্ক বাবা-মেয়ের সম্পর্কের মতোই পবিত্র। এই পবিত্র সম্পর্ক যে কলুষিত করেছে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া অত্যাবশ্যক। ভুক্তভোগীর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এই নিকৃষ্ট ঘটনা বন্ধ করতে পারতো। তারাও তার পক্ষে দাঁড়ায়নি। তারা সঠিক পদক্ষেপ নিলে হয়তো আজ তাকে আত্মহননের পথ বেছে নিতে হতো না। সুতরাং এটা আত্মহত্যা নয়, বরং ধর্ষক রাকিবুল ও তার পরিবারের সকলে মিলে তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে। এর সঠিক তদন্ত ও কঠোর বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

চরমোচারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার খন্দকার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ১২ তারিখ সকাল আনুমানিক ১০.৪৫ টায় খবর পেয়েই আমি ঘটনাস্থলে চলে আসি এবং শেরপুর সদর থানায় অবহিত করি। পরে থানা থেকে এসআই জালাল মাহমুদ এসে লাশ নামায়। এসময় লাশের ঠিক নিচেই হাতে লেখা একটা চিঠি পাওয়া যায়, যা এসআই জালাল মাহমুদ আমাকে পড়ে শুনিয়েছিলা। চিঠিতে লেখা ছিলো আমি জানি আত্মহত্যা মহাপাপ, কিন্তু আমি কোন সঠিক বিচার পেলাম না৷ তাই আত্মহত্যা করা ছাড়া আমার উপায় নেই। আমাকে সবাই ক্ষমা করে দিয়েন। আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক সর্বোচ্চ বিচার চাই৷

খোশগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাকিবের দাবি , আমার বোন কেন আত্মহত্যা করলো তার সঠিক তদন্ত চাই। দোষীদের শাস্তি চাই। এভাবে যেন আর কোন বোনকে মরতে না হয় তার নিশ্চয়তা চাই।

উম্মে সালমা বিদ্যানিকেতনের শিক্ষক উমর ফারুক জানান, শিক্ষার্থী হিসেবে সে অন্তত মেধাবী এবং নম্র ভদ্র ছিলো। কখনো কোন নেতিবাচক কোন কিছু তার মাঝে দেখি নাই বা শুনি নাই। আমি ওর শিক্ষক হিসেবে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও কঠোর বিচার চাই।

শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাসির আহমেদ বাদল বলেন, তারা থানায় কোন অভিযোগ দেয় নাই, আদালতে অভিযোগ করেছে। আদালাতের নির্দেশে তদন্ত কার্যক্রম চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মানববন্ধনে তিনটি ইউনিয়নের ১৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


জনপ্রিয় খবর