কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন ছাড়াই বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: জুনাব আলীকে দাফন করা হয়েছে। মৃত্যুর পরে রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত এ সম্মানটুকু তার ভাগ্যে জোটেনি। এ নিয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহত মুক্তিযোদ্ধার ৫ ছেলে, আত্মীয় স্বজন ও এলাকাবাসী।
শনিবার বিকেল পৌঁনে ৪টায় তিনি পৌর এলাকার উত্তর ফালগুনকরা গ্রামে নিজ বাড়িতে ইন্তেকালের পর রাত ৯টায় নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুক্তকালীন সময়ে তৎকালিন চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি কমান্ডার আলী আশরাফের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন মো: জুনাব আলী। ওই সময় তিনি মাটিরাঙ্গা তবলছড়ি বড়বিল এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছিলেন। মৃত্যুকালে মো: জুনাব আলীর বয়স হয়েছিলো ৭৩ বছর। তাঁর মুক্তিযোদ্ধা পরিচিতি নং-০১১৯০০০৫৫৩২, বেসামরিক গেজেটে নং-২৫২, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকায় তার পরিচিতি নং-২১৭৫৫ এবং লাল মুক্তিবার্তায় পরিচিতি নং-২০৮০৫০১১৩। তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সহ সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। মো: জুনাব আলী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। শনিবার বিকেল পৌঁনে ৪টায় চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার উত্তর ফালগুনকরা গ্রামের নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। অভিযোগ উঠেছে, মৃত্যুর পরপরই পরিবারের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করলেও রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
মুক্তিযোদ্ধা মো: জুনাব আলীর পুত্র শাহ আলম বাবু জানান, ‘বাবার মৃত্যুর পরপরই আমি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মোঃ ইয়াছিনকে অবগত করি। আধা ঘন্টা পরে তিনি আমাকে জানান, ইউএনও’কে জানানো হয়েছে। তিনি বলেছেন, রাতের বেলায় রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের বিধান নেই। এ কথা শোনার পর আমরা খুবই মর্মাহত হয়েছি।’
একই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও বিশিষ্ট ব্যাংকার আবুল হাসান আরিফ বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: জুনাব আলীকে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফন করা হয়েছে-এ খবর জানার পর আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে ব্যথিত ও মর্মাহত হয়েছি। লাল-সবুজের পতাকার জন্য যারা জীবন বাজি রেখেছেন, যারা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তাদের প্রতি এই অবহেলা কোনভাবেই কাম্য নয়।’
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম বলেন, ‘সূর্যাস্তের পর রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের কোন নিয়ম নেই। আমরা খবর পেয়েছি-সূর্যাস্তের একটু আগে। তবে, আলোচনা সাপেক্ষে পরদিন সকালে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা যেতো বলেও জানান তিনি।’
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: তানভীর হোসেন বলেন, ‘প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাই রাষ্ট্রীয় সম্মান পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা মো: জুনাব আলীর মৃত্যুর সংবাদটি কেউ আমাকে অবগত করেনি। মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: