নোয়াখালী সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নে ইটভাটার দাদনের টাকা পরিশোধের মানুষিক চাপ সইতে না পেরে মো.রনি নামের এক কিশোর শ্রমিক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার অভিযোগ ওঠেছে। নিহতের স্বজনদের দাবি, ইটভাটার দুই মাঝি রনিকে মানুষিক নির্যাতন করায় সে চাপ সইতে না পেরে গলায় ফাঁস দেয়।
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলার পশ্চিম এওজবালিয়া গ্রামের ফারুকের বাড়ি থেকে গাছের সঙ্গে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় পুলিশ নিহত রনির লাশ উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এরআগে বুধবার দিবাগত রাতের কোন এক সময় রনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
নিহত রনি উপজেলার পশ্চিম ্ওজবালিয়া গ্রামের মো. ফারুক হোসেনের ছেলে। জন্ম সনদ অনুযায়ী রনির বয়স ১৮ বছর হলেও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে রনি এখনো শিশু বয়স পার করেনি।
নিহত রনির মামা আলমগীর হোসেন বলেন, তার ভাগিনা মো.রনি অভাবের তাড়নায় ইটভাটার স্থানীয় মাঝি দুলালের কাছ থেকে ৭২ হাজার টাকা দাদন নিয়ে কক্সবাজার এলাকার একটি ইটভাটায় কাজ করতে যায়। সেখানে ভাটার মাঝি রনিকে দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করালে রনি কাজের ছাপ সইতে না পেরে তিন মাসের মাথায় ওই ইটভাটা থেকে বাড়ি চলে আসে। পরে ভাটার মাঝি দুলাল রনিকে পুনরায় তাদের ভাটায় কাজ করতে যেতে বলে। রনি রাজি না হওয়ায় তারা তাদের কাছ থেকে নেয়া দাদনের টাকা পরিশোধ করার চাপ প্রয়োগ করে। রনি ওই দাদনের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়ে স্থানীয় আরেক মাঝি নুরুল আমিনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা পুনরায় দাদন নিয়ে দুলাল মাঝির পাওনা দিয়ে নুরুল আমিনের ইটভাটায় কাজ করতে যায়। সেখানেও রনির ওপর চলে অতিরিক্ত কাজ আদায়ে মানুষিক নির্যাতন। কাজের চাপ সইতে না পেরে গত ৫ ফেব্রুয়ারী রাতে দেড় মাসের মাথায় সেখান থেকেও পালিয়ে বাড়ি চলে আসে রনি।
আলমগীর হোসেন আরো বলেন, পরের দিন সোমবার সকালে দুলাল মাঝি রনির কাছে আরো ২২ হাজার টাকা পাওনা দাবি করে তার বাড়িতে গিয়ে ওই টাকা পরিশোধের জন্য হুমকি দিয়ে আসে। একইদিন নুরুল আমিন মাঝির ছেলে হারুনও রনিকে বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করে হুমকি দেয়। রনি মাঝি হারুনের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে বুধবার রাতে রনি বাড়িতে ফিরে ঘরে ঘুমাতে যায়। বৃহস্পতিবার ভোরে রনির নানি সুজিয়া খাতুন বাড়ির পূর্ব পাশে তেঁতুল গাছের সঙ্গের রনির ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
নিহত রনির মামি মোবাশে^রা আক্তার বলেন, তার ভাগিনা রনি দুলাল মাঝি ও নুরুল আমিন মাঝির ছেলে হারুনের মানুষিক অত্যাচারে গলায় ফাঁস দিয়েছে। রনির মোবাইলে তিনটি রেকর্ডিং ছিল। রনি মৃত্যুর আগে তার ফোনে রেকর্ড করে বলে গেছে, ‘আমি যদি মারা যায়- মা তোমার কোন দোষ থাকবে না, আমার মৃত্যুর জন্য দুলাল মাঝি ও হারুন মাঝি দায়ী। দুই মাঝি আমাকে নির্যাতন করেছে।’ রনির মৃত্যুর পর সকালে তার ব্যবহৃত মোবাইলটি ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার আবু নিয়ে গেছে। পরে শুনেছি পুলিশ ওই মোবাইল থানায় নিয়ে গেছে।
নিহত রনির স্বজনদের দাবি, দুলাল মাঝি এবং নুরুল আমিন মাঝি ও তার ছেলে হারুন মাঝির অমানুষিক নির্যাতন, দাদনের টাকা পরিশোধে হুমকি প্রদানের চাপে রনি গলায় ফাঁস দিয়েছে। তারা (মাঝিরা) রনিকে মেরে ফেলেছে। আমরা গরিব মানুষ, কে এর বিচার করবে, আমরা কার কাছে যাবো? অভিযুক্ত দুই মাঝির বিচার দাবি করেন নিহতের স্বজনরা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দুলাল মাঝি ও নুরুল আমিন মাঝির ছেলে হারুন অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, নিহত রনি দুই মাঝির থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণা করে আসছে। তার আত্মহত্যার সাথে এ ঘটনার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
সুধারাম মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুধন দাস বলেন, গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। দাদনের টাকার জন্য মানুষিক চাপ প্রয়োগের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। তার পরও আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: