বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও পরিবেশ আন্দোলনকে গুরুত্ব দিয়ে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে জনপদ প্রাণ ও প্রকৃতি ফাউন্ডেশন কর্তৃক সাদামাটির অঞ্চলখ্যাত বিজয়পুরের জগৎকুড়ায় প্রাথমিকভাবে দীর্ঘ ০১ কিলোমিটার রাস্তায় তালবীজ রোপণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় । শুক্রবার বিকেলে এ কার্যক্রমের শুভ সূচনা করেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম। আয়োজনে অন্যানদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উক্ত ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রভাষক জনপদ চৌধুরী,স্থানীয় ইউপি সদস্য জনাব মোফাজ্জল হক রিপন, দুর্গাপুর সাংবাদিক সমিতির সভাপতি কবি সজীম শাইন, নগর বিডি ডটকমের সম্পাদক মামুন রনবীর, স্থানীয় আদিবাসী প্রতিনিধি প্রলয় হাজং, তরুণ গণমাধ্যমকর্মী মো.নূর আলম এবং আরও উপস্থিত ছিল জনপদ প্রাণ ও প্রকৃতি ফাউন্ডেশন সদস্য কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মো.রমজান আহমেদ সৌরভ ,অমিত দাস,মো.সারোয়ার আহমেদ,মেহরাব হোসেন আকাশ,মোশারফ হোসেন, সাদিকুল ইসলাম প্রমূখ ।
তালবীজ রোপণ কার্যক্রম শেষে আয়োজন করা হয় এক উঠান বৈঠকের । বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব শফিকুল ইসলাম বলেন-পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তালগাছের গুরুত্ব অনেক । বজ্রপাতরোধসহ নানাবিধ উপকার আমরা এই তালগাছের মাধ্যমে পেয়ে থাকি, তাই প্রভাষক সাহেবের এ কার্যক্রম এ অঞ্চলে আরও ছড়িয়ে পড়ুক সেই প্রত্যাশা করি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জনাব মোফাজ্জল হক রিপন বলেন, আমি অসুস্থ তারপরও তালগাছ রোপণের কথা শুনে চলে এসেছি ,আমাদের চারপাশে এখন প্রায় তালগাছ নেই বললেই চলে। সেখানে জনপদ প্রাণ ও প্রকৃতি ফাউন্ডেশন দীর্ঘ ১ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে যে অসংখ্য তালবীজ রোপণ করলো, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
দুর্গাপুর সাংবাদিক সমিতির সভাপতি কবি সজীম শাইন বলেন- সব গাছই উপকারি, তবে আমার কাছে তালগাছের গুরুত্ব অনেক বেশি । আমরা ছোটবেলায় এই তালগাছের ছড়া কেটেই বড় হয়েছি। তাছাড়া তালগাছের সাথে পাখির, বিশেষত বাবই পাখির রয়েছে এক অবিচ্ছেদ সম্পর্কে । তালগাছ দিয়ে কী না হয় ঘরের ছাউনি থেকে পিঠাপুলি ,সবই আমরা এর মাধ্যমে পেয়ে থাকি। আজ তালগাছও নেই,পাখিও নেই,উপরন্তু বেড়ে চলেছে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও ভয়াবহ বজ্রপাত। তাই জনপদ প্রাণ ও প্রকৃতি ফাউন্ডেশনের এ কার্যক্রমে থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি ।
আদিবাসী নেতা প্রলয় হাজং বলেন -আমাদের বিজয়পুরের বর্ডার রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে আজ প্রায় দীর্ঘ পাঁচ বছর । এ পর্যন্ত এখানে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কোন প্রকার বৃক্ষ রোপণ করা হয়নি। অথচ আজ জনপদ প্রাণ ও প্রকৃতি ফাউন্ডেশন দীর্ঘ ১ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে যে তালবীজ রোপণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে ,তা সত্যিই অনন্য , এটা কাল সাক্ষী হিসেবে থাকবে। তবে,এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তাদের কাছে আমার অনুরোধ-কুজিউড়া থেকে দুর্গাপুর শেষ সীমানা মাধুপাড়া পর্যন্ত যেন এই তালবীজ রোপণ করা হয়। তাহলে এই আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাটি একটি ব্যতিক্রম তালউদ্যান অঞ্চল হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠবে এবং দিনদিন আমাদের এখানে পর্যটক আগমনের সংখ্যা বাড়বে ।
নগর বিডি ডটকমেট সম্পাদক জনাব মামুন রনবীর বলেন , জনপদ চৌধুরী ও তাঁর প্রতিষ্ঠানসমূহ ইতোমধ্যে দুর্গাপুরে বেশ নতুন নতুন ধ্যান ধারণার কাজ উপহার দিচ্ছে। আর তাতে এ অঞ্চলের তরুণদের মধ্যে যেমন স্বদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার আগ্রহ বাড়ছে , তেমনি দুর্গাপুরের মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষেত্রেও তাদের স্বেচ্ছাশ্রম কাজের মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। যা অত্যন্ত শুভবোধের লক্ষণ ।
গণমাধ্যমকর্মী নূর আলম বলেন , জনপদ চৌধুরী শুধু একজন প্রভাষক নন, সামাজিক কর্মকাণ্ডে তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদের সাথে একটা বন্ধুভাব গড়ে তুলেছেন, এটা আমার বেশ ভাল লেগেছে । আমার প্রত্যাশা জয় হোক এ তারুণ্যের।
আয়োজনের শেষাংশে জনপদ প্রাণ ও প্রকৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রভাষক জনপদ চৌধুরী সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একজন সচেতন মানুষ হিসেবে প্রত্যেকেরই বিশ্বব্যাপী বিপর্যস্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখা দরকার। সে লক্ষ্যেই আমি আমার শিক্ষার্থীদের শুধু শ্রেণিকক্ষেই নয়, সামাজিক কর্মকাণ্ডেও যুক্ত করে চলেছি। আজ আমরা বিজয়পুরের নীলপানির হ্রদ স্পট ও জগৎকুড়ায় প্রাথমিকভাবে ১ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে তালবীজ রোপণ করেছি। পরবর্তীতেও এ কাজ আমরা অব্যাহত রাখব।
রাস্তা গুলোতে তালবীজ রোপণে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতার করেন বিজয়পুর বিট কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিনুল হক।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: