পাবনা শহরের শ্রী শ্রী জয়কালীবাড়ি মন্দির কমিটির সভাপতি বিনয় জ্যোতি কুন্ডু এবং সাধারণ সম্পাদক প্রলয় চাকী’র পদত্যাগ ও বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকান্ড, নিয়মতান্ত্রিকভাবে পূজা-অর্চনা না করা ও বিগত ৩ বৎসর মন্দিরের হিসাব প্রদান না করা, বহিরাগত সন্ত্রাসী দ্বারা ভক্তবৃন্দের উপর হামলাসহ স্বেচ্ছাচারী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে করেছেন মন্দির কমিটির সদস্য, আজীবন সদস্য এবং সনাতন ভক্তরা এই কর্মসুচীতে অংশ নেন।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শ্রী শ্রী জয়কালীবাড়ির সামনে সৌমেন সাহা ভানুর সভাপতিত্বে এবং শুভ সান্যালের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, আশীষ কুমার বসাক, প্রভাস ঘোষ দুখু, সৌহার্দ্য বসাক সুমন, বাপ্পি সান্যাল, তপন সরকার হরি, শুভ বসাক, সঞ্জয় সাহা, জীবন কুমার সরকার, শ্যামল দেবনাথ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ভক্তবৃন্দের আর্থিক অনুদান ও মন্দিরের নিজস্ব আয় হতে এই মন্দির পরিচালিত হয়। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মন্দিরের বিপুল পরিমাণ অর্থ ও বিভিন্ন দেবতা-বিগ্রহের বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার সহ ভক্তবৃন্দের অনুদান আত্মসাৎ করার কারণে বিগত ৩ বছরের কোনো আয় ব্যয়ের হিসাব প্রদান করতে ব্যর্থ হয়৷ সে কারণে মন্দিরের সকল সদস্য ও সাধারণ ভক্তবৃন্দের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
মন্দিরের সকল কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে কোনরূপ কার্যকরী পরিষদের মিটিং না ডেকে নিজ ইচ্ছামতো দায়সারাভাবে মন্দিরপ পূজা-পার্বন করছে। সে কারণে মন্দিরের স্বাভাবিক পূজা-পার্বন ও উন্নয়ন কাজ ব্যহত হচ্ছে। যা পাবনার সাধারণ হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগের সৃস্টি করেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষ্যে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কার্যকরী পরিষদের কোনরূপ সভা না ডেকেই বা সদস্যদের সাথে কোন আলোচনা না করেই অগঠনতান্ত্রিকভাবে আবারও তাদের হিনস্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্য এবং অর্থ আত্মসাথের জন্য নতুন করে পায়তারা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের।
মানববন্ধন শেষে তারা ৬ দফা দাবি সহ পাবনার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করে।
এ বিষয়ে জয়কালীবাড়ি মন্দির কমিটির সভাপতি বিনয় জ্যোতি কুন্ডু বলেন, তারা যেসব অভিযোগ করেছে তার কোনো ভিত্তি নেই। ওই মানববন্ধনে আমাদের ৫১ সদস্যের মধ্যে মাত্র ৫ জন উপস্থিত ছিলেন, বাকি সবাই বহিরাগত। যে স্মারকলিপি দিয়েছে সেটিতেও ভুয়া স্বাক্ষর দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের হিসাব সব আপ টু ডেট আছে। আমাদের কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়নি। এখনও তিন মাস সময় আছে। স্বর্নালঙ্কারের হিসেবও সব তালিকা করা আছে। আর মন্দিরের এমন কোনো অর্থ নেই যে সেটা আত্মসাত করতে হবে। তাদের মিথ্যা মামলায় আমি পাঁচদিন জেলও খেটেছি। পরে চুড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের সুনাম ক্ষুন্ন করে মুলত মন্দির জবর দখল করতে তারা উঠেপড়ে লেগেছে।
উল্লেখ্য, শ্রী শ্রী জয়কালীবাড়ি মন্দির পাবনা জেলার একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্রীয় মন্দির। আবহমানকাল ধরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সকল পূজা-পার্বন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। শ্রী শ্রী জয়কালীবাড়ি মন্দির নিজস্ব গঠনতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হয়। যা জেলা প্রশাসন কর্তৃক অনুমোদিত।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ২ আগস্ট বিনয় জ্যোতি কুন্ডুকে সভাপতি ও প্রলয় চাকীকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট তিন বছর মেয়াদী পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়। যার মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে, সবার সম্মতিতে আরও ৩ মাস কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: