সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলা সহ জাফলং ও নলজুরী জুড়ে প্রশাসনের ছত্র ছায়ায় দেদারছে চলছে চেরাকারবার। ভারত হতে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বিভিন্ন ব্যান্ডের বিড়ি-সিগারেট, মাদকজাত দ্রব্য ইয়াবা, ফেন্সিড্রিল, বিভিন্ন ব্যান্ডের মদ, ভারতীয় মোবাইল হ্যান্ডসেট, মটর সাইকেল, ভারতীয় শাড়ি, কসমেট্রিক্স, চা-পাতা ও ঔষধ সামগ্রী। এসব পণ্য পরিবহন করতে গিয়ে অহরহ ঘটছে দূর্ঘটনা। মৃত্যু সহ পঙ্গুত্ব বরণ করছে সাধারণ জনগণ।
গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং সোনাটিলা, তামাবিল, নলজুরী, জৈন্তাপুর উপজেলার আলুবাগান, মোকামবাড়ি, শ্রীপুর, মোকামপুঞ্জি, আদর্শগ্রাম, কাটালবাড়ি, মিলাটিলা, কেন্দ্রীহাওর, ডিবিরহাওর, ডিবিরহাওর (আসামপাড়া), ফুলবাড়ি, ঘিলাতৈল, টিপরাখলা, কমলাবাড়ি, গুয়াবাড়ী, বাইরাখেল, হর্নি, কালিঞ্জি, দেওয়াল, লালমিয়া ও অভিনাশের টিলা, জঙ্গীবিল, আফিফানগর, বাঘছড়া, বালিদাড়া, সিঙ্গারীরপাড় এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় চেরাকারবারী দলের সদস্যরা কতিত সোর্স বা লাইনম্যানরা মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ, ডিবিপুলিশ ও মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে।
দিন কিংবা রাত সমানভাবে বিশেষ কৌশলে বালু কিংবা পাথর দিয়ে বোঝাই করে বড় বড় ট্রাক যোগে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ব্যবহার করে জাফলং হতে রাজধানী ঢাকা ও সিলেট শহর। গোয়াইনঘাট-সারীঘাট-তামাবিল রাস্তা ব্যবহার করে সিলেট কিংবা ঢাকা। উপজেলার আঞ্চলিক সড়ক লালাখাল-সারিঘাট রাস্তা ব্যবহার করে দরবস্ত ও হরিপুর বাজার। লালাখাল-চতুল বাজার রাস্তা ব্যবহার করে কানাইঘাট। ইটাখাল-রামপ্রসাদ রাস্তা হয়ে দরবস্ত ও হরিপুর বাজার। জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন আঞ্চলিক রোড ব্যবহার করে দরবস্ত ও হরিপুর বাজারে ভারতীয় পণ্য সামগ্রী পরিবহণ করা হয়। উপজেলার আঞ্চলিক সড়ক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে দ্রুত গতিতে ডিআই নামক ট্রাক চলাচল করছে। অবৈধভাবে ভারত হতে নিয়ে আসা পণ্য সামগ্রী নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। চোরাকারবার সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ডিআই ট্রাক, বড়-ছোট কাভার্ড ভ্যান এবং টোকন পরিচালিত সিএনজি অটো রিক্সা। বেপরোয়া গতির গাড়ি চালনার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। মৃত্যু সহ পঙ্গুত্ববরণ করছে রোডে চলাচলকারী সাধারণ জনতা। শ্রমিকের বাঁচার দোহাই দিয়ে চোরাকারবারি ও প্রশাসনের কিছুসংখ্যক সদস্যরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ পরিণত হচ্ছে। কিন্তু শ্রমিক, শ্রমিকই থাকছে হচ্ছে না তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাস হতে গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং, নলজুরি, তামাবিল এবং জৈন্তাপুর উপজেলা সবকয়টি রোড চোরাচালানের নিরাপদ হয়ে উঠে। এছাড়া রাত হলেই এই রুটগুলো চোরাকারবারিদের দাপটে আতঙ্কের রোড পরিণত হয়ে উঠে সাধারণ জনগণ জরুরি প্রয়োজনে কিংবা রোগিবহন করতে আতংঙ্কে চলাচল করতে হয়। সচেতন মহল নাজিম উদ্দিন, ফয়জুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, আব্দুর রশিদ, রুবেল, এখলাছ মিয়া, আব্দুল আহাদ, মাসুক আহমদ, শাহেদ আহমদ, নজির আহমদ, ইসমাইল আলী, ইব্রাহিম আলী জানান, অতিতে জৈন্তাপুর উপজেলা সহ বিভিন্ন সীমান্তবর্তী উপজেলা গুলোতে কমবেশি চোরাকারবার হয়েছে। অতি সম্প্রতি জৈন্তাপুর উপজেলায় যেভাবে খোলামেলা চোরাকারবার হচ্ছে তাতে জনগণ আতংঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। তারা বলেন স্বাধীনতার পরবর্তীতে এরকম চোরাকারবার দেখেননি। তাদের দাবি সীমান্ত এলাকা পুরো নিয়ন্ত্রণ করছে চোরাকারবারি দলের সদস্যরা, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। তারা আরও বলেন সর্বশেষ ১ সেপ্টেম্বর ২০২২ দিবাগত রাত ০৮:০০ ঘটিকায় ভারতীয় কসমেট্রিক্স ও নাসির বিড়ি বোঝাই ডিআই ট্রাক চাপায় গুরুতর আহত হন ১৯ বিজিবি জৈন্তাপুর ক্যাম্পের টহলরত সদস্য।
একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজেসে গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং, তামাবিল, নলজুরী এবং জৈন্তাপুর উপজেলার সর্বত্র জুড়ে চোরাচালানের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, সিলেটের ডিআইজি, জেলা পুলিশ সুপার, পুলিশ কমিশনার, বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমদ বলেন, মাদকমুক্ত ও চোরাচালান মুক্ত জোরদার করতে আইন শৃঙ্খলা বৈঠকে কঠোরভাবে বলা হয়েছে। আমরা মাদক ও চোরাচালান মুক্ত একটি সুন্দর জৈন্তাপুর চাই।
এবিষয়ে জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম দস্তগীর আহমেদ বলেন, থানা পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ১ সেপ্টেম্বর বালু বোঝাই ট্রাক সহ কসমেটিক্স আটক করি। আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: