জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর সদস্য সবুজ হোসেন এর বাবা ও মাকে হাত পা বেঁধে মারপিট এর অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই সেনা সদস্যের চাচাতো ভাই ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৬ (সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার উপজেলার আওয়ালগাড়ী শেখ পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় সেনা সদস্যের বাবা ভুক্তভোগী আতাউর রহমান (৬০) বাদী হয়ে ৮ জনের বিরুদ্ধে আক্কেলপুর থানায় একটি অভিযোগ করেন। অভিযুক্তরা হলেন, বাদীর আপন ভাই সিরাজুল ইসলাম এর ছেলে ১.ইমাম হোসেন বাবু (৩৫), ২. শাহানুর (২৫), ৩. মেয়ে রুমা (৩০), ৪. স্ত্রী রেহেনা (৫৫), ৫. ইমাম হোসের এর স্ত্রী রুমি খাতুন (৩২), ৬. এনামুলের স্ত্রী নাদিরা (৩৫), ৭. মৃত ওহাব এর ছেলে সুলতান (৪০), ৮. আব্দুল হামিদ এর ছেলে আজুহান (৪০)।
অভিযুক্তরা সেনা সদস্যের বাবা আতাউর রহমান ও মা রিনা বেগম কে হাত পা বাঁধতেছে এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নজরে আসলে ৯ (সেপ্টেম্বর) শুক্রবার সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ওই সেনা সদস্যের বাবা আতাউর রহমান ও সিরাজুল ইসলাম দুজনের মধ্যে ভাইয়ের সম্পর্ক। সেনা সদস্যের বাবা ও চাচা দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক জমাজমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে চলছে ঝামেলা। ঘটনার দিন দু'পক্ষের নতুন বাড়ি নির্মানের জায়গা নিয়ে ঝগড়ার এক পর্যায়ে অভিযুক্ত ইমাম হোসের সহ বাকিরা সেনা সদস্যের বাবা ও মাকে হাত পা বেঁধে রাখে এবং বাড়ি নির্মানের কাজ চলমান রাখে। আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সেনা সদস্যের বাবা ও মাকে রশি দিয়ে হাত পা বাঁধার ঘটনাটি দেখা গেছে।
এবিষয়ে সেনা সদস্য সবুজ হোসেন মুঠোফোনে জানান, আমি বাংলাদেশ সেনা সদস্যতে কর্মরত আছি। আমার বাবা ও মাকে এভাবে প্রকাশ্যে হাত-পা বেঁধে মেরেছে আমার চাতাতো ভাইয়েরা ও ওই পরিবারের সদস্যরা। আমি কিছুই করতে পারছি না, কারন চাকুরী জনিত কারনে বাহিরে আছি এবং আমার বাড়িতে কেউ নাই। আমার বাবা ও মাকে একা পেয়ে তারা এমন অমানবিক নির্যাতন করেছে। আমার বাবা ও মা এখন আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছে। আমি আমার বাবা ও মায়ের সাথে এই অমানবিক নির্যাতনের সুষ্ঠ বিচার চাই।
আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেে গিয়ে ভুক্তভোগী আতাউর রহমান এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ভাতিজারা, ভাতিজি, ও ভাই বউ মিলে হাত পা বেঁধে মারপিট করেছে কারন আমাকে হত্যা করলে আমার জমিগুলো তারা নিতে পারবে। তিনি আরো বলেন, আমার জমিতে তারা জোরপূর্বক ঘর নির্মাণ করতেছে আমি বাঁধা দিতে গেলে তারা আমাকে ও আমার স্ত্রীকে হাত পা বেঁধে অমানবিকভাবে নির্যাতন করে। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই।
স্ত্রীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমাকে হাত পা বেঁধে মারপিট করেছে এবং আমার শাড়ি ছিড়ে ফেলেছে, গলাই টিপে ধরেছে আমার শরিরের বিভিন্ন স্থানে কিল ঘুষি মেরেছে আমি এখন ব্যথায় উঠতে পারতেছি না।
হাসপাতালে থাকা ভুক্তভোগীর মেয়ে সাথী জানান,
আমার বাবা মাকে হাত পা বেঁধে মারপিট করে অন্যায়ভাবে আমাদের জমি দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে তারা আমি জানিনা আমার বাবা মায়ের কি হবে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবি করছি।
ভুক্তভোগীর আতাউরের বোন আজুফা বেগম বলেন, আমার দুই ভাইয়ের মধ্যে এই জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা চলছে। আমার বড় ভাইয়ের ছেলেরা, ছেলের বউ সহ সবাই মিলে ছোট ভাই ও তার বউ কে হাত পা বেঁধে মারপিট করেছে আমি ভয়ে তাদের বাঁধা দিতে পারিনি কারন আমাকেও মারপিট করবে গেলে ইতিপূর্বে তারা আমাকেও মারপিট করেছিলো। ওই জায়গা ওরা পাবেনা অথচ জোর করে দখলের চেষ্টা করে।
অপরদিকে এ ব্যপারে অভিযুক্তদের সাথে কথা বলতে গেলে বাড়িতে তাদের পাওয়া যায়নি। তাদের পিতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছি আমি আমার ছেলেদের নিষেধ করেছি মারামারি করতে তারা কোন মারামারি করেনি তবে তাদের চাচাকে আটকাতে রশি দিয়ে হাত পা বেঁধেছে মাত্র।
ওই পরিবারের মহিলা সদস্যরা জানান, পৈত্রিক সূত্রে তারা যতোটুকু জায়গায় মালিক আমরাও ততোটুকু জায়গার মালিক। কিন্তু তারা এক জায়গায় তাদের অংশ দাবি করে দখল অবস্থায় আছে আর আমাদের কে তিন খন্ডে অংশ দিয়েছে। আমরা আমাদের জায়গায় ঘর করতেছি এমতাবস্থায় আতাউর এসে সব কিছু ভেঙ্গে দিতে লাগলে আমাদের লোকজন তাকে নিষেধ করে কিন্তু তিনি না শুনে ভাতিজাদের মারধর করতে লাগলে ভাতিজারা চাচার গায়ে হাত দিবেনা জন্য হাত পা বেঁধেছে।
এ ব্যপারে স্থানীয় নজরুল, শাহিনুর রহমান ও আলম বলেন, দুই পরিবারের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে চলছে এই ঝগড়া। কোন মারামারি হয়নি তবে হাত পা বেঁধেছে কারন আতাউর এসে তাদের সবকিছু ভেঙ্গে দিচ্ছিলো। পরে তারা নিজেরাই ব্লেট দিয়ে হাত পা কেটে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
স্থানীয় রুকিন্দিপুর ইউপির সাবেক সদস্য সিদ্দিকুর রহমান বলেন, দুই পরিবারের এই জায়গা নিয়ে অনেকদিন ধরে ঝামেলা পৈত্রিক সূত্রে আতাউর ও সিরাজুল সমান অংশীদার কিন্তু আতাউর এক জায়গায় তার নিজের অংশ নিয়ে সিরাজুল কে তিন জায়গায় দিয়েছে। ইতিপূর্বে আমিও তাদের প্রস্তাব দিয়েছিলাম যে সিরাজুলের যেহেতু ছেলে বেশি তুমি তার বাড়ির অংশ পুরোটা নিয়ে পাশে যে পুষ্কনি আছে সেদিকে ওদের জায়গা ছেড়ে দাও তাহলে আর কোন ঝামেলা হবে না। কিন্তু আতাউর ও তার সেনা সদস্য ছেলে তা মানে না, তারা এভাবেই জায়গায় দখল নিতে চায়। এই নিয়ে ঘটনার দিন ঝামেলা হলে চাচা আতাউর এসে সব ভেঙ্গে দিলে তাকে ভাতিজারা বারবার নিষেধ করে তারপরেও না শুনলে অবশেষে হাত পা বেঁধে রাখে। কারন সিরাজুলের পরিবার চেয়েছিলো যেহেতু জায়গা নিয়ে ঝামেলা সেহেতু ঘর তুলি তারপর দুই পক্ষে বসে একটা সমাধানে আশা যাবে। আসলে ওইদিন কোন মারামারি হয়নি, মারামারি ঘটনা পুরাটা মিথ্যা।
আক্কেলপুর থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি আমাদের তদন্ত অফিসার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বিষয়টি মিমাংসা করবেন বলে জানিয়েছেন যদি মিমাংসা না হয় সেক্ষেত্রে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: