পাবনার সুজানগরে প্রতিপক্ষের গুলিতে এরশাদ শেখ (৩২) নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। সোমবার দুপুরে নিহতের বাবা মোয়াজ্জেম হোসেন বাদি হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে সুজানগর থানায় মামলা দায়ের করেন।
এদিকে, ঘটনার পরপর রাতেই অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। পরে ওই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে সোমবার বিকেলে তাদেও আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, হামলাকারী হালিম বিশ্বাসের পিতা ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আজম আলী বিশ্বাস (৭৫), রফিক বিশ্বাস (৫০) ও মামুন বিশ্বাস (২৫)।
রোববার রাত নয়টার দিকে উপজেলার ভায়না ইউনিয়নের চর মানিকদিয়ার গ্রামে ব্রিজের কাছে সংঘর্ষেও এ ঘটনা ঘটে। নিহত এরশাদ শেখ চর মানিকদিয়ার গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, রোববার বিকেলে ছাগলে জমির ফসল খাওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় গোলাপ শেখ ও আক্কাস বিশ্বাসের পরিবারের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় হালিম বিশ্বাস নামের এক যুবক বন্দুক দিয়ে এরশাদ শেখকে গুলি করে। তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেবার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর নিহতের বিক্ষুব্ধ স্বজনরা আক্কাস বিশ্বাসের বাড়ি ও আজম আলী বিশ্বাসের গরু-মুরগীর খামার ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়।
অপরদিকে, হত্যার বিচার দাবিতে ও জড়িতদেও ফাঁসির দাবিতে সোমবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল করে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী। চর মানিকদিয়ার গ্রাম থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে সুজানগর থানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করা হয়। এ সময় পুলিশ তাদের ব্যবস্থা নেবার আশ্বস্ত করলে ফিরে যায়।
এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুই থেকে আড়াই মাস পূর্বে আক্কাস বিশ্বাসের বাড়ির পাশে রয়েছে তাদের একটি দোকান। সামান্য দুরে শেখ পরিবারের আত্মীয় চাদু প্রামানিকের বাড়ির সামনে একটি দোকান নির্মাণ করেন। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। কারণ চাদু প্রামানিকের দোকান দেবার পর আক্কাস বিশ্বাসের বেচাকেনা কমে যায়।
নিহত এরশাদের মা মরিয়ম খাতুন, ভাবী মুন্নী খাতুন সহ অন্যরা জানান, রোববার বিকেলে গোলাপ শেখের জমিতে আক্কাস বিশ্বাসের ছাগল বেধে দেয়া নিয়ে প্রথমে দুই পরিবারের মহিলাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। আক্কাস বিশ্বাস প্রথমে গোলাপ শেখের লোকজনকে মারপিট করে। সেখান থেকে পুরুষদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও সংঘর্ষের সুত্রপাত।
নিহতের পাঁচ মাসের অন্ত:স্বত্তা স্ত্রী সুমনা খাতুন বলেন, সংঘর্ষের সময় এরশাদ শেখ বাজারে ছিল। তাকে ফোন করে জানানো হয়। আমি তাকে ঝামেলার মধ্যে আসতে নিষেধ করি। কিন্তু সে শোনেনি। এসে মারামারি দেখে সবাইকে থামানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাকে হালিম বিশ্বাস কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে। হত্যায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন নিহতের স্বজনরা।
সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান বলেন, ঘটনার পরপরই আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি এবং হত্যায় জড়িত অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়। পওে সোমবার দুপুরে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার এজাহার দেখার পর তাদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
সুজানগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, হত্যার পর হালিম বিশ্বাসের পিতা আজম বিশ্বাসের বাড়ি থেকে তার লাইসেন্সকৃত বন্দুকটি জব্দ করা হয়েছে। হত্যায় ব্যবহৃত বন্দুকটি লাইসেন্সকৃত সেই বন্দুক কিনা সেটি ময়না তদন্ত রিপোর্ট ও গুলির ব্যালাস্টিক রিপোর্ট দেখে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: