নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৭নং মুছাপুর ইউনিয় পরিষদ চেয়ারম্যান আইযুব আলীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে খাস জমি দখল ও বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (২৭ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের চৌধুরী হাট বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম চৌধুরী শাহীন। মুছাপুর ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে ৭নং মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী যোগসাজশে ভুয়া ভূমিহীন সাজিয়ে মুছাপুর ক্লোজারের পর্যটন এলাকার ৬০০ একর খাস জমি দখল এবং ছোট ফেনী নদী থেকে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করছে। এরই মধ্যে অবৈধ ভূমি বাণিজ্য করে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। পুরো কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জুড়ে গড়ে তুলে অবৈধ বালু বিক্রির সিন্ডিকেট। তার দাফটের কাছে স্থানীয় এবং জেলা প্রশাসন রহস্যজনক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। শতাধিক গণমাধ্যমে মুছাপুর ক্লোজারের পর্যটন এলাকার ৬০০ একর খাস জমি দখলের খবর প্রকাশিত হলে, স্থানীয় ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে মুছাপুর ক্লোজারের পর্যটন এলাকার দখল হওয়া ভূমি উদ্ধারে অভিযান চালায়। কিন্তু সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান আলীর জলদস্যু বাহির সদস্য জাহাঙ্গীর মেম্বার ও তার ভাই জালাল ইন্ধনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ভূমি কর্মকর্তা লাল মিয়াকে মারধর করে তারা। কিন্তু এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, বরং পার পেয়ে এই ভূমিদস্যু, বালু খেকো সিন্ডিকেট দুটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে তাদের কার্যক্রম আরও দ্রুত গতিতে চালিয়ে যাচ্ছে বীরদর্পে। এ ভাবে ছোট ফেনী নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নদীগর্ভে বিলীন হবে বাংলা বাজার টু মুছাপুর ক্লোজার সড়ক,কয়েক হাজার কৃষি জমি এবং শতাধিক বসত বাড়ি,জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়বে,বালু উত্তোলনের ফলে মৎস্যসম্পদও কমে যাচ্ছে। কারণ মাসের আবাস ও প্রজননস্থল ধ্বংস হচ্ছে। বালু উত্তোলনে নদীর কাঠামোও নষ্ট হচ্ছে। যেখানে বালু তোলা হচ্ছে, তার ভাটিতে চর পড়তে পারে।। এক সময় এই উপকূল এলাকায় মারাত্মক ভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে।
বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে শাহীন অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার রামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাগনে সিরাজীস সালেকীন রিমন উপজেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর যোগসাজশে ৬০০ একর খাস জমি দখন ও অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করলে সেখানে হট্রগোল ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপরও খাস জমি দখল ও বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলা প্রশাসন কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এভাবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে নাম ভাঙ্গিয়ে সে পুরো উপজেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েক করেছে। অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,কিছু দিন আগে মুছাপুর ইউনিয়নের রংমালা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। ওই নিয়োগে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের খরচ আছে উল্লেখ করে ছয় লক্ষ টাকা ঘুষ বাণিজ্য করে আইয়ুব আলী। সে পূর্ব মুছাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মালিকানা দোকানঘর থেকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজে মাসিক ঘর ভাড়া আদায় করছে। সে চাকরি দেওয়া ও আমেরিকা নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েও অনেকর থেকে নগদ অর্থ হাতিয়ে নেয়। এসব অভিযোগে এনে অনেকে ইতিমধ্যে ফেইসবুকে লাইভ করেছে। মুছাপুর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার হেদায়েত উল্যাহ মানিকের থেকে আমেরিকা নেওয়ার কথা বলে নগদ অর্থ হাতিয়ে নেয়। ইতিপূর্বে চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী তার বাহিনী দিয়েছে মুছাপুর ৭নম্বর ওয়ার্ডের রুহুল আমিনের জমি থেকে ১০ লক্ষ টাকার তরমুজ ছিনিয়ে নেয়।
এ সময় উপস্থিত এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম চৌধুরী শাহীন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। একই সঙ্গে ভুয়া ভূমিহীন সাজিয়ে ৬০০ একর খাস জমি দখল করে বিক্রি এবং অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের তড়িৎ হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে দাবি করেন,তিনি খাস জমি দখল ও বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত নেই।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন,মুছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক চৌধুরী, মুছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমাইল হোসেন হেঞ্জু, সাবেক ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন প্রমূখ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: