পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে দীর্ঘ দিন পর অবৈধ দখলদারিত্ব, অবৈধ বালু উত্তোলন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, রিজার্ভ ল্যান্ডের তসদিক বাতিল সহ বেশ কিছু জনবান্ধব পদক্ষেপ নিয়েছেন সদ্য যোগ দেওয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম রব্বানী সরদার। উপজেলায় দীর্ঘ দিন এই পদে নিয়মিত কর্মকর্তা না থাকায় প্রশাসনের তদারকিতে তাই ধীর গতি এসেছিল। ২০২০ সালের ০৩ জুনের পর থেকে উপজেলায় এসি ল্যাণ্ড পদে কেউ নিয়মিত দায়িত্বে ছিলেন না।
দেবীগঞ্জে যোগদানের পর থেকে অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন দেবীগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম রব্বানী সরদার। সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর দায়িত্বশীল ও সাহসী ভূমিকায় স্বস্তি এসেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র এক মাসের মধ্যেই উপজেলার বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে দখলমুক্ত করেছেন বেশ কিছু সরকারি সম্পত্তি, আইনের আওতায় এনেছেন অপরাধীদের।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, যোগদানের পরই অনুমোদনহীন ক্লিনিক পরিচালনার দায়ে মায়া ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী আতাউর রহমানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। পৌর ভবনের জন্য নির্ধারিত উপজেলা ভূমি অফিসের জমিতে অবৈধভাবে দোকান ঘর স্থাপন করা হলে তা উচ্ছেদ করেন। দেবীগঞ্জ অলদিনি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তরপাশে সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন একটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন।
দেবীগঞ্জ কালীস্থানের সন্নিকটে অবৈধ দখলদারের কব্জায় থাকা ১০ শতক সরকারি জমি উদ্ধার করেন। টেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়নের ভাউলাগঞ্জের তোহা বাজারে (হাটের উম্মুক্ত স্থান) স্থানীয় প্রভাবশালীরা ১টি দোকান ঘর তৈরী করে অন্যজনের কাছে বিক্রি করে দেয়, খবর পাওয়া মাত্র সেই জমি উদ্ধার করেন তিনি। এছাড়াও একইদিন ভাউলাগঞ্জ বাজারেই আরো দুটি অবৈধভাবে গড়ে উঠা দোকান ঘর উচ্ছেদ করেন এসিল্যান্ড। যার একটি ঘর স্থানীয় কিছু যুবলীগ নেতা-কর্মী পার্টি অফিসের নাম করে দখল করে পরে বিক্রি করে দেন।
উপজেলার সোনাহার বাজারে রিক্সা-ভ্যান শ্রমিকলীগের দখলে নেয়া অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
পৌরসভার টিঅ্যাণ্ডটি অফিসের সামনে রিজার্ভ ল্যাণ্ডের ১১ শতক জমি অবৈধ ভাবে তসদিক করা হয়। সেটিও বাতিল করেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম রব্বানী সরদার।
ময়নামতি চরে তফসিলের নির্ধারিত জমির বাইরে বালু উত্তোলন করছিল ইজারাদারের লোকজন। সেখানেও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন এসিল্যান্ড এবং জরিমানা করেন ৫০ হাজার টাকা। দারারহাটে অবৈধ বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ড্রেজার ধ্বংস করেন।
উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী চতুর্থ বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সেতুর দুই পাশে বালু উত্তোলনের ফলে ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা ছিল। সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেতুর উত্তর ও দক্ষিণ পাশে বালু উত্তোলন বন্ধ করে সীমানা নির্ধারণ করে দেন।
দীর্ঘদিন থেকে উপজেলার সোনাপোতা এলাকায় নিলামকৃত ড্রেজিংয়ের বালুর পরিবর্তে অবৈধভাবে চরের বালু উত্তোলন করছিল ইজারাদার। গতকাল সোমবার সেখানে অভিযান পরিচালনা করে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।
অবৈধ দখলদারিত্ব থেকে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার, অবৈধ বালু বাণিজ্যে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি পাচারে স্বস্তি মিলেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। রাজনীতিকে ঢাল বানিয়ে যারা এই সব অপকর্ম করছেন তাদের দৌরাত্ম বন্ধে এসি ল্যাণ্ডের এমন পদক্ষেপে স্বস্তি মিলেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
দেবীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা বিমল কুমার রায় বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, সরকারি জমি দখল রাষ্ট্র বিরোধী কাজ। এসব অন্যায়ের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও সাধারণ শ্রমিকদের আর্থিক অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। কারণ অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে শ্রমিকেরা তাদের নির্ধারিত মজুরীর বাইরে কোন বাড়তি টাকা পায় না। এক্ষেত্রে সুবিধাভোগীরা সবসময় শ্রমিকদের ব্যবহার করেন।
পৌরসভা এলাকার শমসের নামে এক ব্যক্তি বলেন, নিষেধ থাকলেও করতোয়া সেতুর দুই পাশ থেকে অবাধে বালু উত্তোলন হয়ে আসছিল। এসি ল্যাণ্ডের শক্ত অবস্থানের কারণে তা বন্ধ হয়েছে।
শুধু তাই নয়, গোলাম রব্বানী সরদার যোগদানের পর থেকে উপজেলা ভূমি অফিস সহ দশ ইউনিয়নের ভূমি অফিসগুলোকে দালাল মুক্ত করতে নিয়েছেন বেশ কিছু পদক্ষেপ। সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর পক্ষে সাধারণ মানুষদের দালালের সহযোগিতা না নিয়ে ভূমি অফিসে সেবা গ্রহণের বার্তা দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে হয়রানি বা অনিয়মের অভিযোগ থাকলে সেটিও আমলে নেয়া হচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম রব্বানী সরদার বলেন, আইনের মধ্যে থেকে অনিয়ম দূর করতে চাই। এই অনিয়ম দূর করতে গিয়ে হয়তো অনেকের বিরাগভাজন হতে হবে। তবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমার অবস্থান দৃঢ় থাকবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: