সাত বছরের শিশুপুত্রের সামনে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার এক নারী। তিনি দুই সন্তানের মা (৩২)। পীরগঞ্জ উপজেলার শ্বশুরবাড়ি থেকে হরিপুরে বোনের বাড়িতে যাচ্ছিলেন তিনি। পথে কামারপুকুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ব্যাটারিচালিত একটি ইজিবাইকের চালক তাঁর কাছে গন্তব্যের কথা জানতে চান। তিনি গন্তব্যের কথা বললে তাঁকে তুলে নেন চালক।
ওই সময়ে ইজিবাইকে আরও চারজন যাত্রী ছিলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর তাঁরা ওই গৃহবধূ ও তাঁর ছেলেকে জোর করে বকুয়া ইউনিয়নের চাপধাবাজার এলাকার একটি আমবাগানে নিয়ে যান। ওই সময় গৃহবধূ ধস্তাধস্তি করলে ছেলের গলায় ছুরি ধরে হত্যার ভয় দেখিয়ে চুপ থাকতে বলা হয়। পরে সেখানে ওই গৃহবধূকে দল বেঁধে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চোখের সামনে এমন নৃশংস ঘটনা দেখেছে শিশুটি, চার দিন পেরিয়ে গেছে, এখনো ভয়ে সিঁটিয়ে থাকছে শিশুটি। আর লজ্জায় সন্তানের সামনে দাঁড়াতে পারছেন না ধর্ষণের শিকার হওয়া মা।
শনিবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে ওই গৃহবধূর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। পরে তাঁকে তাঁর বাবার বাড়ি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় নিয়ে যান স্বজনেরা।
আজ সোমবার সকালে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পাড়িয়া ইউনিয়নের জিল্লুর পাড়া গ্রামে ধর্ষণের শিকার ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে জানা যায় ঘটনার বিস্তারিত।
তাঁর ভাই বলেন, ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে অনেকেই তাঁদের বাড়িতে আসছেন। এতে তাঁরা বিব্রত হচ্ছেন। তাঁর বোনও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
ঘটনার পর থেকে ওই গৃহবধূ কান্নাকাটি করছেন জানিয়ে তাঁর ভাই আরও বলেন, ধর্ষণ না করার জন্য হাত-পা ধরে নির্যাতনকারীদের কাছে অনুরোধ করেছিলেন তাঁর বোন। একপর্যায়ে ছেলের গলায় ছুরি ধরে তাঁকে চার-পাঁচজন মিলে ধর্ষণ করেন।
গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর এ ঘটনায় ওই দিন রাত ১২টার দিকে ওই গৃহবধূকে রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় ফজলুর রহমান নামের এক তরুণকে আটক করেন স্থানীয় লোকজন। পরে তাঁরা ঘটনাটি জরুরি সেবা ৯৯৯-এ জানান। হরিপুর থানার পুলিশ এসে ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে। এরপর ফজলুর রহমানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী রাতে অভিযান চালিয়ে রিসাদ ও আকাশ নামের দুজনকে আটক করা হয়।
এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে গত শনিবার সকালে হরিপুর থানায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন ।
মামলায় হরিপুর উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের চাপধা হাটপুকুর গ্রামের সলেমান আলীর ছেলে ফজলুর রহমান, চাপধা পিপলা গ্রামের করিমুল ইসলামের ছেলে রিসাদ, একই এলাকার গুচ্ছগ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে আকাশ, রকিম ও লস্করকে আসামি করা হয়েছে।
ওই দিনই পুলিশ আটক তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
পরে রবিবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে ভোরবেলা পালিয়ে থাকা রকিম ও লস্কর কে হরিপুর উপজেলার পশ্চিম বনগাঁও গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন— হরিপুর উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের চাপধা হাটপুকুর গ্রামের সলেমান আলীর ছেলে ফজলুর রহমান, চাপধা পিপলা গ্রামের করিমুল ইসলামের ছেলে রিসাদ, একই এলাকার গুচ্ছগ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে আকাশ, রকিম ও লস্কর।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হরিপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অভিযুক্ত পাঁচ আসামির মধ্যে তিনজনকে ঘটনার রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ২২ ধারায় জবানবন্দিতে তাঁরা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেন। আদালতের নির্দেশক্রমে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য দুই আসামিকে রবিবার দিবাগত রাতে গ্রেপ্তার করা হয় ।’ আজ সোমবার আটক দুইজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।
ওই নারীর বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও ৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রকিবুল আলম বলেন, ‘ভুক্তভোগী ওই নারী পরীক্ষার জন্য এসেছিলেন। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়া হবে।’
ধর্ষণ ও মারপিটের শিকার ওই নারীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: