পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মেঝেতে রেখে বীর মুক্তিযোদ্ধা হরি শংকর (৭১) কে চিকিৎসা দেওয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে মুক্তিযোদ্ধাসহ সচেতন মহলের মধ্যে বইছে সমালোচনা ঝড়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা হরি শংকর পাবনা পৌর সদরের বলরামপুর মহল্লার বাসিন্দা। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ৭১ পাবনা জেলা শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আব্দুর রহিম পাকন এ বিষয়ে ছবিসহ তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দুষছেন সাধারণ মানুষ।
এ প্রসঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আব্দুর রহিম পাকন বলেন, শুক্রবার (১৯ আগস্ট) সকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা হরি শংকর অসুস্থ হয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। খবর পেয়ে তিনি তাকে হাসপাতালে দেখতে যান। তিনি গিয়ে দেখেন তাকে শুধুমাত্র একটি স্যালাইন দিয়ে মেঝেতে শুইয়ে রাখা হয়েছে।
সকালে হাসপাতালে গিয়ে তিনি দেখতে পান পেইং ওয়ার্ডে তখনও তিনটি শয্যা ফাঁকা ছিল। অথচ তাকে (হরি শংকর) একটি শয্যা দেয়া হয়নি। তখন তিনি নিজে মুক্তিযোদ্ধা হরি শংকরকে একটি শয্যায় তুলে দেন। এ সময় কোনো চিকিৎসককেও তিনি পাননি বলে অভিযোগ করেন।
এদিকে এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি নিজের ফেসবুক পেজে ছবিসহ একটি পোস্ট দেন। জানাজানির পর নিন্দার ঝড় ওঠে।
আলমগীর কবির হৃদয় নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘এগুলো দেখার বা বলার জন্য কেউ নেই। যারা দায়িত্বে আছেন তারাও যেন অনেকাংশে কিছুই জানি না ভাব নিয়ে চলেন।’
মাহমুদ আলম নামের একজন লিখেছেন, ‘উনি বারান্দায় কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের সংরক্ষিত সিট তাহলে আছে কাদের জন্য?’
তারেক রহমান লিখেছেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য ডিসি, এসপি, এমপির সুপারিশ লাগবে কেন? যারা নিজেদের জীবনকে বাজী রেখে দেশকে স্বাধীন করলেন তাদের অধিকার সবার আগে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আব্দুর রহিম পাকন বলেন, তিনি হাসপাতালে যাওয়ার পরে শোনেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দকৃত একমাত্র পেইং বেডটি অন্য একজন অসুস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অন্য তিনটি সাধারণ শয্যাতো খালি ছিল। তিনি নিজে খালি শয্যাগুলোর ছবিও তোলেন। শয্যা খালি থাকা সত্ত্বেও ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মেঝেতে শুইয়ে রাখা অমানবিক ও ন্যাক্কারজনক।
অসুস্থ্য মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বরাত দিয়ে আসম আব্দুর রহিম পাকন শনিবার দুপুরে জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা হরি শংকর এখন তার নিজ বাড়িতে রয়েছেন। তাকে তিনটি স্যালাইন দিয়ে ‘রিলিজ’ করে দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক তাকে একটি টেস্ট দিয়েছিলেন। সে টেস্টও হাসপাতাল থেকে না করে বলা হয়েছিল বাইরে থেকে করে আনতে হবে।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি ওই সময় হাসপাতালে ছিলেন না। তবে শয্যা থাকা সত্ত্বেও এমনটি হওয়ার কথা নয়। পুরা বিষয়টি তিনি জানেন না। এ সময় যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা ভালো বলতে পারবেন।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. ওমর ফারুক মীর বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা হরি শংকর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে তাকে মেঝেতে চিকিৎসা দেওয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি জানান, একজন রোগীকে অন্যত্র সরিয়ে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শয্যা দেওয়া হয়েছিল। এখানে বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার বা তার স্বজনদেরও অবহেলা আছে। তারা হাসপাতালে ভর্তির পর যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললে এ সমস্যা হতো না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: