মোংলায় বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে পালিত হয়েছে বিশ্ব বাঘ দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ছিলো "বাঘ আমাদের অহংকার, রক্ষার দায়িত্ব সবার"।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) সকালে এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে মোংলার সুন্দরবন সংলগ্ন পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করা হয়। দিবসটির মধ্যে ছিলো র্যালী, আলোচনাসভা ও চিত্র প্রদর্শনী।
প্রতিবছরের ২৯ জুলাই পালিত হয় বিশ্ব বাঘ দিবস। ২০১০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘ অভিবর্তনে এই দিবসটির সূচনা হয়। পুরো বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালন করা হলেও বাংলাদেশ, ভারত, নেপালসহ ১৩টি দেশে বাঘের ঘনত্ব বেশি থাকায় এসব দেশে গুরুত্ব সহকারে দিবসটি পালন করে।
বক্তারা বলেন, বনের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাঘের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাঘের সংখ্যা কমে গেলে বনের পরিবেশের ভারসাম্য হারাবে। সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান ও টিকে থাকার জন্য বাঘের ভূমিকা অনন্য। উপকূল টিকে আছে সুন্দরবনের জন্য। আর সুন্দরবন টিকে আছে বাঘের জন্য। আর এই বাঘ বিলুপ্ত হলে বাস্তুসংস্থান নষ্ট হয়ে সুন্দরবন উজাড় হবে। খালে বিষ দিয়ে মাছ মারা, বৃক্ষ নিধন, বন্যপ্রাণী হত্যা, চোরাচালান সিন্ডিকেট ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে বাঘ এবং সুন্দরবন বিপর্যস্ত। বাঘ এবং বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবন রক্ষায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, সরকার এবং বন সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক হতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান, করমজল বন্য প্রানী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির।
বিশ্ব বাঘ দিবসে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন'র সভাপতিত্বে প্রধান অতিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বন্যপ্রাণী প্রকৃতি বিভাগ খুলনা নির্মল কুমার পাল।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,মোংলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার, মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বক্তারা বলেন, সরকার বাঘ এবং বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবন রক্ষায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার সুন্দরবন এবং বাঘ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।
এছাড়াও মোংলা উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও পশুর রিভার ওয়াটারকিপার আয়োজনে মোংলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মিলনায়তনে "বাঘ ও বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবন রক্ষায় করণীয়" শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভার আগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মিলনায়তনে সকাল সাড়ে ৯টায় "সুন্দরবনের বাঘ" শীর্ষক শিশু চিত্রাংকণ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভা শেষে শিশু চিত্রাংকণ প্রতিযোগিতার বিজয়ী মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়া বাঘ ও বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবন রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি বর্নাঢ্য র্যালী মোংলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বাগেরহাটের আহ্বায়ক পশুর রিভার ওয়াটারকিপার মো. নূর আলম শেখ'র পরিচালনায় ও উপজেলা নির্বাহি অফিসার কমলেশ মজুমদার'র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)'র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন, মোংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান।
আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আমেরিকা থেকে আগত পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক তরুন গবেষক ইভান টিমস, বাপা'র কেন্দ্রিয় নেতা তোফাজ্জেল সোহেল, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল ভদ্র, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, জিটিভি'র সিটি এডিটর রাজু আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাকিলা পারভীন রুমা, সমাজ কল্যান ও উন্নয়ন সংস্থার জেসমিন প্রেমা, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার ভলান্টিয়ার আব্দুর রশিদ হাওলাদার, সুন্দরবনের মৎস্যজীবি বেলায়েত সরদার, বাপা নেতা ইস্রাফিল বয়াতি, কমলা সরকার, শেখ রাসেল, নদীকর্মী হাছিব সরদার প্রমূখ।
এছাড়াও বন বিভাগের ওয়াইল্ডটিম সদস্য, সিপিজি, ভিটিয়ারটি টিমের সকল সদস্য ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: