দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার (পানি পরিমাপক) হিসেবে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পেছনে গোয়ালের ঘাট পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি পরিমাপ করতেন খোকন মিয়া। এ জন্য তাকে মাসিক মাত্র দুই হাজার টাকা বেতন দেওয়া হতো। কিন্তু দুই যুগেরও বেশি সময় চাকরির পর তার চাকরি সরকারিকরণ না করে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তিনি চাকরি হারানোর পর তার স্থানে আর কেউ পানি পরিমাপ করছেন না। এদিকে চাকরি হারিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন খোকন মিয়া। তাই চাকরি ফিরে পেয়ে রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন খোকন মিয়া।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও খোকন মিয়া জানান, ১৯৯২ সাল থেকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পেছনে গোয়ালের ঘাট পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি পরিমাপ শুরু করেন খোকন মিয়া। এজন্য তাকে বর্ষার আগে ও পরে চার থেকে পাঁচ মাস বেতন দেওয়া হতো দুই হাজার টাকা করে। এই টাকা দিতেন কখনো নির্বাহী প্রকৌশলী আবার কখনো ঠিকাদার।
খোকন মিয়া বলেন, দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে মাসে মাত্র দুই হাজার টাকা সম্মানীর বিনিময়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের হয়ে তিস্তা নদীর পানি পরিমাপক হিসেবে চাকরি করেছি। এই সামান্য টাকায় সংসার চলে না। তাই সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনে ছোট্ট একটি মুদি দোকান দিয়ে কোনমতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে। খুব কষ্টে দিন কাটছে। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচও ঠিকমতো চালাতে পারিনা। এরই মধ্যে আবার ২০১৯ সালের মাঝামাঝি বর্ষার সময় চাকরিটা চলে যায়। ফলে এখন আরও কষ্টে দিন কাটছে। আর তাই ২৭ বছর সরকারের এই দপ্তরে চাকরি করায় খোকন মিয়া তার চাকরি ফিরে পেয়ে চাকরি সরকারিকরণ করার অনুরোধ জানিয়েছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে।
সুন্দরগঞ্জের বেলকা এলাকার স্কুলশিক্ষক আবদুল মান্নান আকন্দ বলেন, সুন্দরগঞ্জের তিস্তা নদীতে দীর্ঘ ২৭ বছর নামমাত্র টাকায় চাকরির পর খোকন মিয়ার চাকরি সরকারিকরণ না হওয়াটা অমানবিক। তার মধ্যে আবার তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাই অনতিবিলম্বে খোকন মিয়াকে চাকরি ফিরিয়ে দিয়ে তার চাকরি সরকারিকরণ করা উচিত পাউবোর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান জানান, গোয়ালের ঘাট পয়েন্ট যেহেতু মূল তিস্তা নদী না তাই আমার পূর্বের কর্মকর্তা তার কাছ থেকে পানির পরিমাপ নেওয়া বন্ধ করেছেন। তিনি যেহেতু সরকারি চাকরিজীবী নন তাই তাকে আর পানি পরিমাপের কথা বলা হয়না। তবে আরও আগে সতর্ক হওয়ার জন্য সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর পানির পরিমাপ রংপুরের কাউনিয়া থেকে করা হয় বলে জানান এই কর্মকর্তা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: