মধ্যরাত থেকে মাছ ধরা শুরু, সাগরে যেতে প্রস্তুত মোংলার জেলে

আলী আজীম, মোংলা (বাগেরহাট) | ২৪ জুলাই ২০২২, ০২:০৫

সংগৃহীত

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে শনিবার মধ্যরাতে। এরই মধ্যে সাগরে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মোংলা উপজেলার জেলেরা। কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও জেলে পল্লীগুলোতে। রাত ১২টার পর থেকেই মাছ ধরতে ফের সাগরে যাওয়া শুরু করেছেন উপকূলের জেলেরা। মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, মোংলা উপজেলায় প্রায় ৬৬৫৫ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে এ উপজেলায়। যাদের অধিকাংশই সাগরে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়াতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরছে জেলেদের মাঝে। দীর্ঘদিন সাগরে মাছ না ধরায় জেলেদের জালে বিপুল মাছ ধরা পড়ার আশা করছেন জেলেরা। এরই মধ্যে অনেকেই এখন বরফ নেওয়ার জন্য ট্রলার নিয়ে খালে অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ ট্রলার মেরামত শেষে এখন রঙের কাজ করছেন, আবার কেউ কেউ জাল বুনছেন, কেউ কেউ ট্রলারে জাল, কন্টেইনার ও গ্রাফিসহ মালামাল উঠাচ্ছেন।

জেলে পল্লীগুলো ঘুরে জানা যায়, এই ৬৫ দিনে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া অপ্রতুল খাদ্যসহায়তা নিয়েও রয়েছে জেলেদের ক্ষোভ। দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞা সমুদ্রে নামার আগে তাই জেলেদের চোখে-মুখে নতুন আশা জালে ধরা পড়বে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। 

তবে মৌসুমের শেষ ভাগে বিনিয়োগে ঝুঁকি নিতে নারাজ অনেক আড়তদার ও জেলেরা। এদিকে বরফকল মালিকরা জানিয়েছেন, বছরের পুরোটাই তাদের টেকনিশিয়ানসহ শ্রমিকদের বেকার বসিয়ে টাকা গুনতে হয়। মৌসুমের চার মাসে তারা আয় করে তা পুষিয়ে নিয়ে থাকেন। কিন্তু ভরা মৌসুমে দুই মাসেরও বেশি সময় নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেকেই বরফকল চালু করতে চাচ্ছেন না। 

মৎস্য সংশ্লিষ্টরা জানান, সাগরে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় মোংলার অনেক মৎস্য ব্যবসায়ী ও শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। জেলেরা জানান, তালিকার বাইরে থাকা কয়েক হাজার জেলে সরকারি কোনো সহযোগিতা পায়নি।

স্থানীয় জেলে মোহাম্মদ কবির বলেন, ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় সাগরে যেতে পারিনি। অবশেষে নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে। সাগরে যেতে পারবো বলে খুশি লাগছে।

আরেক জেলে মো. রশিদ বলেন, দীর্ঘদিন নৌকা স্থলে পড়ে থাকায় ভাঙন ধরেছে। সেগুলো মেরামত করে সাগরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি।

নৌকা মিস্ত্রী আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে নৌকা মেরামতের কাজ করে আসছি। দীর্ঘদিন ধরে নৌকা বন্ধ থাকায় অনেক নৌকা ভেঙে গেছে। সেগুলো মেরামত করার জন্য মালিকরা আমাকে নিয়ে আসছে। ঘাটের অনেক নৌকার কাজ করতে হচ্ছে আমাকে।

মো. আলম, এমাদুল, রিয়াজসহ একাধিক জেলে বলেন, ট্রলার মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। গত রাতেই বাজার-সদয় করেছি। আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। তাছাড়া সবগুলো ট্রলার মাছ ধরার জন্য সাগরে যেতে এখন প্রস্তুত রয়েছে। তারা আরও বলেন, মাঝারি কিংবা বড় সাইজের ট্রলার নিয়ে সাগরে নামতে খরচ হয়ে থাকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। এবার ৬৫ দিন বেকার থাকায় পুঁজি শেষ করে ধার-দেনায় জর্জরিত আমরা। 

মালিক ও আড়তদাররা বলেন, প্রতি মৌসুমে তারা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন লাভের আশায়। কিন্তু করোনাসহ মৌসুমের শেষভাগে বিপুল টাকা বিনিয়োগে অনেকেরই অনীহা। এছাড়াও মাত্র দুই মাস পরই ফের মা-ইলিশের ২২ দিনের জন্য সাগর এবং নদীতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। 

মৎস্যজীবী সমিতি ও ট্রলার মালিক সমিতি বলছে, এই মোংলার জেলেরা ৬৫ দিনের সরকারি নির্দেশনা পালন করেছে। নিষেধাজ্ঞার সময় কোনো ট্রলার সাগরে যেতে দেওয়া হয়নি। তাই রাত ১২ টার পরপরই জেলেরা গভীর সাগরে মাছ শিকার করতে যাচ্ছেন।

মোংলা সহকারী মৎস কর্মকর্তা এ জেড এম তৌহিদুর রহমান, বলেন, ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল উপলক্ষে সাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। তা ২৩ জুলাই শেষ হচ্ছে। এই সময়ে দেশের সামুদ্রিক জলসীমানায় সব ধরনের মৎস্য আহরণ, পরিবহণ ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। মাছের প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সাগরে মাছের প্রাচুর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ২০১৯ সাল থেকে প্রথমবারের মতো ছোট নৌকাগুলোকেও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসে। যদিও বা ইলিশের প্রজননকাল উপলক্ষে ছোট ট্রলারগুলো ২০১১ সাল থেকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। যেটি অক্টোবর মাসে এখনও কার্যকর রয়েছে। তবে ২০১৫ সাল থেকে কেবল বড় বড় বাণিজ্যিক ট্রলারগুলোর জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


জনপ্রিয় খবর