সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে দুই দিনে পৃথক পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় আহত ১০, প্রতিদিন ঘটছে দূর্ঘটনা, মৃত্যু সহ পঙ্গুত্ব বরণ করছে শতশত মানুষ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব, আইন থাকলেও নেই সুষ্ঠ প্রয়োগ।
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার তথা বৃহত্তর উত্তর-পূর্ব সিলেটের তিন উপজেলার চলাচলের একমাত্র মহাসড়ক সিলেট-তামাবিল। এই রাস্তা ব্যবহার করে জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলার সর্বসাধারণ ব্যবহার করছে।
সিলেটের সর্ববৃহৎ তামাবিল স্থল বন্দর থাকায় মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করছে। সম্প্রতি সময়ে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে প্রতিদিন ঘটছে দূর্ঘটনা। দূর্ঘটনায় শিকার হয়ে মৃত্যু সহ পঙ্গুত্ব বরণ করছে শতশত লোকজন। সচেতন মহলের দাবি আইন থাকলেও সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে আইনের নেই সুষ্ঠ ব্যবহার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ নিরব দর্শকের ভূমিকায়, যেন দেখার কেউ নেই।
সরেজমিনে সিলেট টু তামাবিল, সিলেট টু গোয়াইনঘাট, সিলেট টু কানাইঘাট সড়ক ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে আলাপকালে জানা যায়, বৃহত্তর জৈন্তাপুর তথা উত্তর-পূর্ব সিলেটের তিন উপজেলার একমাত্র চলাচলের রাস্তা সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক। এছাড়া জেলার সর্ববৃহৎ আমদানি রপ্তানি স্থল বন্দর হওয়ায় মহাসড়কটিতে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করছে। সম্প্রতি মহাসড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। দূর্ঘটনায় অকালে ঝরে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের প্রাণ, পঙ্গুত্ব বরণ করছে শত শত মানুষ। মহাসড়ক ব্যবহারকারীর কানাইঘাট উপজেলার বাসিন্দা মারুফ আহমদ বলেন, সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক এখন অঘোষিত মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে। সড়কের আইন থাকলে তার সুষ্ঠ প্রয়োগ নেই।
জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম, শোয়েব আহমদ, আব্দুস সালাম, হানিফ আহমদ, রহিম উদ্দিন, ফরিদ আহমদ, গোয়াইনঘাট উপজেলার শামিম আহমদ, কুতুব উদ্দিন, সাদ উদ্দিন, মুহিবুর রহমান, নজির হোসেন, জাফলং এর বাসিন্দা জাকির হোসেন, সুমন মিয়া, আব্দুল মালেক, রিয়াজ উদ্দিন সহ বিভিন্ন ভাবে শতাধিক লোকজনের সাথে আলাপকালে তারা প্রতিবেদককে জানান, সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। বর্তমানে সড়কটিতে লক্ষর ঝক্কর লেগুনা, হিউম্যান হুলার, নাম্বারবিহীন টোকেন পরিচালিত সিএনজি (অটোরিক্সা), গ্যাস ও ব্যাটারিচালিত টমটম, ইজিবাইক ও বেপরোয়া নাম্বারবিহীন মোটর সাইকেল এবং শিশু চালকদের কারণে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা ঘটে চলছে।
তারা আরও বলেন, সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে নিরাপত্তা ও যান চলাচলের আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সুষ্ঠ তদারকির অভাবে এসব দূর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে। যদিও মহাসড়কের যান চলাচলের বেশ কিছু নিময়-কানুন মেনে চলার বিধি বিধান রয়েছে কিন্তু তার সুষ্ঠ প্রয়োগ নেই। আইন বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টরা মহাসড়কে কি করছেন তিন উপজেলার সর্বসাধারণ প্রতিনিয়ত দেখতে পায়। তারা দাবি জানান দ্রুত সময়ের মধ্যে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে নাম্বারবিহীন টোকেন পরিচালিত সিএনজি (অটোরিক্সা), গ্যাস ও ব্যাটারিচালিত টমটম, অদক্ষ ও লাইসেন্স বিহীন চালকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
অপরদিকে ১৭ ও ১৮ জুলাই সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে তিনটি পৃথক পৃথক দূর্ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের অবস্থা মর্মান্তিক। সুস্থ হলেও বেশির ভাগ আহতরা পঙ্গুত্ব বরণ করতে হবে। ১৭ জুলাই রবিবার বিকাল সাড়ে ০৪ টায় সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের চিকনাগুল আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মুখে নাম্বারবিহীন সিএনজি (অটোরিক্সা) ও নোহা গাড়ির মধ্যে সংঘর্ষে ০৪ জন আহত হন। তাদের মধ্যে নুরুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন। এদিকে ১৮ জুলাই সোমবার জৈন্তাপুর উপজেলার প্রবেশ গেইট ঘাটেরচটিতে ০১ ঘন্টার ব্যবধানে দুটি দূর্ঘটনায় ৯ বছরের শিশু সহ ৬ জন আহত হন। আহতদের নাম ঠিকানা জানা যায়নি, তবে প্রত্যেকে আশংঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। গত ০৩ জুলাই সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের পানিছড়ায় মোটর সাইকেল ও বেপরোয়া ট্রাকের সংঘর্ষে মোটর সাইকেলের তিন বন্ধু নিহত হয়।
দূর্ঘটনার বিষয়ে জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম দস্তগীর আহমেদ বলেন, থানা পুলিশ উপজেলার আইন শৃঙ্খলার বিষয়ে কাজের পাশাপাশি মহাসড়কে দূর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা সহ কাজ করে আসছে। তবে মহাসড়কের বিষয়টি হাইওয়ে পুলিশ দেখাশোনা করছে।
জৈন্তাপুর ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত সার্জেন্ট পার্থ্ব দেব বলেন, ট্রাফিক পুলিশ নিয়মিত উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ করছে। পাশাপাশি ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। এছাড়া তিনি আরও বলেন, অভিবাবক ও গাড়ির মালিকবৃন্দরা সচেতন হওয়ার জন্য আহবান জানান। তারা যেন সামান্য অর্থের জন্য অল্প বয়সী শিশু চালকের হাতে গাড়ি না তুলে দেন।
তামাবিল হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত (ওসি) পরিমল চন্দ্র দেব বলেন, নাম্বারবিহীন টোকেন পরিচালিত সিএনজি (অটোরিক্সা) বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে মামলা নিচ্ছে। তামাবিল মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের কোনো প্রকার টোকেন বাণিজ্য নেই। কেউ আমাদের নাম ভেঙ্গে টোকেন বাণিজ্য করলে তাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। দূর্ঘটনা রোধে আমরা নিয়মিত সর্তকবার্তা জানিয়ে আসছি। একশ্রেণির মালিক ও চালক অর্থের লোভে ট্রাফিক আইন মেনে চলছে না। আমরা তাদের বিরুদ্ধে সোচ্ছার আছি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: