র্যাব-৪ এর পরিচালক ও সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত ডিআইজি (হাইওয়ে পুলিশ ইউনিট, ঢাকা) মোঃ মোজাম্মেল হক বলেছেন, সুস্থ্য সংস্কৃতির চর্চা না থাকার ফলে আমাদের সমাজে সাম্প্রদায়িকতা বেড়ে গেছে। চিত্রাঙ্কন স্কুলে যারা আসছে তারা কিন্তু মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান পরিচয়ে পরিচিত না।
ওরা সবাই বন্ধুর পরিচয়ে পরিচিত। একইভাবে খেলার মাঠে গেলে সেখানেও একই পরিচয়ে পরিচিত থাকে। এই ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যেটা প্রয়োজন সেটা না করে যখন সরাসরি সন্তানদের প্রাইমারী বা প্রি প্রাইমারী স্কুলে দিচ্ছি, তখন ধর্মীয় ভিত্তিতে বিভাজন হচ্ছে। ধনী-গরীবে বিভাজন হচ্ছে। এটা আমাদের সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে পাবনার চাটমোহর উপজেলার একমাত্র চিত্রাঙ্কন বিদ্যালয় ‘চিত্রগৃহ চাটমোহর’ পরিদর্শণ শেষে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মোজাম্মেল হক বলেন, শিশুদের মধ্যে বন্ধুত্বের চর্চা না থেকে, অসুস্থ্য চর্চা তার মধ্যে চলে আসছে। তার পৃথিবীটা ছয় ইঞ্চি একটি মোবাইলের মধ্যে চলে আসছে। মোবাইলে সে ভিডিও গেম বা অন্যকিছু দেখে সময় কাটছে, নিজেকে অন্যদের চেয়ে পৃথক করে ফেলছে। এক পর্যায়ে বাবা-মায়ের থেকেও পৃথক হয়ে যায়। সন্তান ও বাবা-মার দূরত্ব বেড়ে যায়। এই দূরত্ব এতটাই এক সময় বেড়ে যায় যে, সেই দূরত্ব কাটানোর জন্য এক পর্যায়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। এইভাবে আমাদের সমাজে মাদকাসক্ত, ইভটিজিং, সাম্প্রদায়িকতা, কিশোর অপরাধ এগুলো বেড়ে যাচ্ছে। এসব অপরাধ থেকে সন্তানদের দূরে রাখার জন্য সবচেয়ে ভাল যেটা কাজ সেটা হলো চিত্রাঙ্কন। যদি চিত্রগৃহ চাটমোহরের মতো এমন প্রতিষ্ঠান আরো গড়ে উঠে তাহলে সমাজে প্রকৃত মানবিক মুল্যবোধ সম্পন্ন মানুষও গড়ে উঠবে। তা না হলে আমাদের সমাজ বিভক্ত হয়ে যাবে।
ডিআইজি মোজাম্মেল বলেন, আমরা আমাদের সন্তানকে আইনস্টাইন, কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রতিথযশা মানুষ করতে চাচ্ছি। এই প্রত্যাশা কোমলমতী শিক্ষার্থীর উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে। এই চাপের কারণে তার মানবিক মুল্যবোধ ও মানসিক বিকাশ হচ্ছে না। মানসিক বিকাশের প্রথম স্তর হচ্ছে তার চিন্তাশক্তির স্ফুরণ যেটা, সেটাই কিন্তু চিত্রাঙ্কন। চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে একজন মানুষের চিন্তা চেতনার প্রকৃত প্রতিফলন আস্তে আস্তে করে। এভাবে যদি আপনার সন্তান তার বিভিন্ন স্তর দেখে শিখে যদি আপনার সন্তান বাস্তব জীবনে আসে তাহলে প্রকৃত অর্থে একজন ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।
মোজাম্মেল হক বলেন, সমাজে যে বিভক্তি আজকে দেখতে পাচ্ছি আমি মুসলিম, আমি হিন্দু এই পরিচয়। এটা শুধু আমাদের দেশেই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। ধর্মীয় উগ্রবাদ যেটি জেগে উঠেছে, এটা ছোটবেলায় দেখিনি। ছোটবেলায় দেখেছি, একদিনে মহরমের সিন্নি বিতরণ হয়েছে, অন্যদিকে লক্ষীপূজার নাড়– বিতরণ হয়েছে। তখন একসাথে উঠেছি, চলেছি, মিশেছি। তখন ধর্মীয় পরিচয়ে মানুষ পরিচিত হয়নি। এটা এখন চলে আসার কারণ আমাদের মধ্যে থেকে সুস্থ্য সংস্কৃতির চর্চাটা ধীরে ধীরে অবলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। আগে স্কুল কলেজগুলো প্রতি বৃহস্পতিবার বিতর্ক প্রতিযোগিতা হতো, সংস্কৃতি অনুষ্ঠান, নাটক হতো, সেগুলো শেষ। খেলার মাঠে খেলাধূলা হতো, সেটাও শেষ। যারা চিত্রাঙ্কন স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করেছেন তাদের স্যালুট জানাই এই কারণে যে, আপনার সন্তানরা সঠিক মুল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। তার চিন্তা শক্তি বিকশিত হবে। এভাবেই দেশটা সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত, সন্ত্রাস মুক্ত, মাদক মুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে।
এর আগে চিত্রগৃহ চাটমোহরের পক্ষ থেকে ডিআইজি মোজাম্মেল হককে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান শিশু শিক্ষার্থীরা। পরে চিত্রগৃহ চাটমোহরের প্রাক্তণ শিক্ষার্থী সঞ্চারী হকের আঁকা মোজাম্মেল হকের একটি ছবি অতিথির হাতে তুলে দেয়া হয়। এ সময় চিত্রগৃহ চাটমোহরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেমান আসাদ, চিত্র শিল্পী সঞ্চারী হক, সাংবাদিক শাহীন রহমান, এম এ জিন্নাহ, সঞ্জিত চক্রবর্তী সোনা সহ অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: