কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি)'র ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ২য় পর্যায়ের উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৩৪টি প্রকল্পে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যাপক দূর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এলাকাবাসীর পক্ষথেকে।
জানা গেছে, সরকারের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে উপজেলার অতিদরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসৃজনের লক্ষ্যে ৭টি ইউনিয়নে ৩৪টি প্রকল্পে মোট ২কোটি ৩৯লক্ষ ৪ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়।ওইসব প্রকল্পের মধ্যে তালজাঙ্গা ইউনিয়নে ৬টি প্রকল্পে ৩০লক্ষ ৭২হাজার,রাউতি ইউনিয়নে ৬টি প্রকল্পে ৩৭লক্ষ ৭৬হাজার,ধলা ইউনিয়নে ৩টি প্রকল্পে ৩২লক্ষ ৪৮হাজার,জাওয়ার ইউনিয়নে ৬টি প্রকল্পে ৩২লক্ষ ৯৬হাজার,দামিহা ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্পে ৪২লক্ষ ৫৬হাজার,দিগদাইড় ইউনিয়নে ৪টি প্রকল্পে ৩০লক্ষ ৫৬হাজার এবং তাড়াইল-সাচাইল (সদর) ইউনিয়নে ৪টি প্রকল্পের বিপরীতে ৩২লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দেয় সরকার।
কিন্তু ওইসব প্রকল্পে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান যোগসাজেসে কোনও কোনও প্রকল্পে আংশিক কাজ করেই পুরো টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এলাকাবাসীর পক্ষথেকে। তাছাড়া এরকম প্রকল্পও আছে যেখানে বিন্দু পরিমান কাজ হয়নি।অথচ বিল উত্তোলন করেছেন স্ব-স্ব প্রকল্পের সভাপতি।
সরেজমিনে বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রকল্পগুলিতে দেখা যায়,স্থানীয়ভাবে অতিদরিদ্রদের দিয়ে ৪০দিন কাজ করানোর কথা থাকলেও ভেকু দিয়ে কিছু কিছু প্রকল্পে আংশিক মাটির কাজ করানো হয়েছে।কোনও কোনও প্রকল্পে ৭০জন শ্রমিক ৪০দিন কাজ করার কথা থাকলেও ৮-১০জন শ্রমিক দিয়ে ৪থেকে ৫দিন নামমাত্র কাজ করেই বিল উত্তোলন করা হয়েছে।এলাকাবাসীর অভিযোগ,প্রশাসনের নজরদারি ও তদারকির অভাবে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি'র সদস্যরা মিলে অতিদরিদ্রদের টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে নিজেরা লাভবান হয়েছেন। প্রতিটি প্রকল্পের একজন করে ট্যাগ অফিসার তদারকি করার কথা থাকলেও উপজেলার ৩৪টি প্রকল্পে কখনও কেউ তদারকি করতে দেখা যায়নি।
অভিযোগের ভিত্তিতে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওইসব প্রকল্পের কয়েকজন ট্যাগ অফিসার বলেন,আমরা শুনেছি বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রকল্প তদারকির জন্য আমাদের ট্যাগ অফিসারের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে।কিন্তু ওইসব প্রকল্পের সভাপতিগন কখন কাজ করেছে বা আদৌ করেছে কিনা আমরা জানিনা।আমাদেরকে জানানোর দরকার মনে করেন না ওইসব প্রকল্পের সভাপতিগন।শুধু বিল তোলার আগে আমাদের স্বাক্ষর দিতে হয়।কোনও কোনও ক্ষেত্রে আমাদের স্বাক্ষরও নেয়া হয়না।দূর্নীতি রোধ করার জন্য সরকার প্রতিটি শ্রমিকের নিজ নিজ মোবাইল একাউন্টে প্রতিদিন ৪শত টাকা করে ৪০দিনের কাজের টাকা দেয়ার কথা। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের প্রকল্পে সম্পৃক্ততা করা বিভিন্ন শ্রমিকের নাম ঠিকানা বের করে কথা বলে জানা গেছে,শ্রমিকদের টাকার লোভ দেখিয়ে
চেয়ারম্যান ও স্ব-স্ব প্রকল্পের ইউপি'র সদস্যগণ শ্রমিকদের দিয়ে নিজ নিজ এনআইডি দিয়ে মোবাইলের সিম কিনে জমা দেয়ার কথা বলে।সেই অনুযায়ী শ্রমিকরা সিম কিনে প্রকল্প সভাপতির নিকট জমা দেয়।কিন্তু ইউপি সদস্যগণ টাকা উত্তোলনের পর যার তার সিমের মালিকদের ২-৩শ টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে বিভিন্ন ইউপি'র চেয়ারম্যানের সাথে কথা হলে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার কথা স্বীকার করে বলেন,আমাদের এলাকায় বন্যার কারনে ৪০দিনের কর্মসূচীর কাটছাট করা হয়েছে।কোনও কোনও প্রকল্পে ১০দিন বা ২০দিনের কাজ হয়েছে এবং আমরা বিলও পেয়েছি ওইভাবেই।
এলাকার বিভিন্ন সুশীল সমাজের কয়েকজন জানান,এমনিতেই ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানগণ সরকারি বরাদ্ধের শতকরা ৩০ভাগও কাজ করেনা।তার উপড় আকষ্মিক বন্যা ৪০দিনের কর্মসূচী আশির্বাদ হয়ে এসেছে।এবার কাজ না করেই টাকা আত্মসাত করার একটা বিশাল সুযোগ প্রকৃতিগত ভাবেই পেয়ে ধন্য হয়েছে।তবে কারো কারো অভিমত,প্রশাসন যদি সঠিক নজরদারির মাধ্যমে কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকতো তাহলে আমাদের উপজেলার গ্রামীন অবকাঠামোর চিত্র বদলে যেতো এবং স্থানীয় অতিদরিদ্ররা কাজ করে তাদের সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে পারতো।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস এম আবু মোতালেব এর কাছে উপজেলার ৩৪টি প্রকল্পের বাস্তব চিত্র জানতে চাইলে তিনি বলেন,বন্যার কারনে ৪০দিনের কাজ কাটছাট করা হয়েছে।কোথাও ১০দিন বা ২০দিন কাজ হয়েছে এবং সেভাবেই বিল দেয়া হয়েছে।আপনারা নাকি প্রতিটি প্রকল্প থেকে নিদৃষ্ট একটা সম্মানী পেয়ে থাকেন বলে লোকজন বলাবলি করে।এটা কি ঠিক.? এরকম প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,এটা ঠিক না।প্রকল্প সভাপতিগণ যতটুকু কাজ করেছে আমরা ততটুকুই বিল প্রদান করেছি বাকি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে।তবে তিনি কত টাকা বিল দিয়েছেন এবং কত টাকা ফেরত গেছে তা নিদৃষ্ট করে বলতে পারেননি।শ্রমিকদের তালিকা চাইলে তিনি প্রথমে দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।পরক্ষণেই সিস্টেম মোতাবেক দরখাস্ত করার পরামর্শ দেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: