কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা, পাল্ট হামলার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাত (০৭ জুলাই)১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটা এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ৭ জন আহত হয়ে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, বরিশাল সদর আসনের সাংসদ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ অনুসারী হয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের প্রধান দুটি পক্ষ রয়েছে। এরমধ্যে একটি পক্ষের সাংসদের অনুসারীদের নেতৃত্বে অমিত হাসান রক্তিম ও ময়িদুর রহমান বাকি এবং মেয়র পন্থীদের নেতৃত্বে আহমেদ সিফাত ও সৈয়দ রুম্মান ইসলামসহ বেশ কয়েকজন রয়েছেন। উভয় পক্ষই দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নামে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয় প্রায়ই।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানাগেছে, মঙ্গলবার বিকেলে বরিশাল নগরের সিএন্ডবি রোডের কলেজ এভিনিউ তিন মাথা এলাকায় তুচ্ছ ঘটনার জ্বের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র রাইদুল ইসলাম নিরবকে মারধর করে স্থানীয় যুবকরা। যার প্রতিবাদে সেখানে সড়ক অবরোধও করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে হামলাকারীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের আশ্বাসে ঘন্টাখানেকের মধ্যে সড়ক অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা। যদিও এরআগেই শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ দুভাগে বিভক্ত হয়। যা নিয়ে বেশ কয়েকবার তাদের মধ্যে সামনা সামনি ও মুঠোফোনে তর্ক –বিতর্কও হয়। একপর্যায়ে রাত ১ টার দিকে হঠাৎ করেই ছাত্রলীগের পৃথক দুই গ্রুপের মধ্যে প্রকাশ্য উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। এসময় হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটলে গোটা ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে।আর এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ৭ জন গুরুত্বর আহত হয়।
যাদের মধ্যে ছাত্রলীগের একাংশের নেতা ময়িদুর রহমান বাকিসহ তার অনুসারী ছাব্বির হোসেন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অপরদিকে অপরাংশের ছাত্রলীগ নেতা আহমেদ সিফাত ও সৈয়দ রুম্মান ইসলামসহ তাদের অনুসারী তমাল, মেহেদি হাসান ও আল সামাদ শান্ত নামে মোট ৫ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যদিও এদের মধ্যে মেহেদি হাসান ছাড়া বাকি সবাই শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের খাতায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি দেখিয়েছেন।
তবে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরে অবস্থান করায় এভাবে ভর্তির কারন সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন অমিত হাসান রক্তিম। তিনি বলেন, সিফাত গ্রুপের হামলায় আহত হয়ে তাদের সহপাঠী মহিদুর রহমান বাকি ও ছাব্বির হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
অপরদিকে এ বিষয়ে অপর গ্রুপের নেতা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহমেদ সিফাত নিজেকে বর্তমানে সুস্থ দাবি করে কিছু জানাতে রাজি হননি। যদিও সৈয়দ রুম্মান ইসলাম দাবি করেছেন, তাদের পক্ষের কমপক্ষে ৬ জন আহত হয়েছেন এবং তিনিসহ আহতরা হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তাদের ওপর হামলার কারন সম্পর্কে তিনিও বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে হঠাৎ করেই দুইদল ছাত্রের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে ৬ জনের মতো আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। রাতেই খবর পেয়ে আমরা বিষয়টি ক্যাম্পাসের পরিবেশ শান্ত রাখার পাশাপাশি বিষয়টি খতিয়ে দেখার কার্যক্রম শুরু করেছি। বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিবেশ শান্ত রয়েছে। আজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সবাই বিষয়টি নিয়ে বসবেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে রাতের এ ঘটনায় থানা পুলিশের কর্মকর্তারা ক্যাম্পাসে গিয়ে পরিস্থিত শান্ত করার পাশাপাশি হাসপাতালে যান বলে জানিয়েছেন এসআই মেহেদি হাসান।
উল্লেখ্য, এরআগের রাতে শের ই বাংলা হলের বাসিন্দা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহামুদুল হাসান দোলনকে ডেকে নিয়ে মারধর করে ছাত্রলীগের একাংশের নেতা সৈয়দ রুম্মান ইসলাম । মাহামুদুল হাসান দোলন জানান, তাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়েছে এবং বর্তমানে সে আহত অব্স্থায় শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: