হঠাৎ টানা অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি জেলা। পানিবন্দী প্রায় সিলেট সুনামগঞ্জের প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ। এইরকম আকস্মিক বন্যার কারণে মানুষের জীবন দূর্বিষহ হয়ে পড়েছে। না খেয়ে দিন-রাত কাটাতে হচ্ছে এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের। এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছে ছায়াতল বাংলাদেশ নামে একটি (এনজিও) সংস্থা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার বানভাসি ৫০০ পরিবারের হাতে খাবার সামগ্রী তুলে দিয়েছে সংস্থাটির স্বেচ্ছাসেবকরা।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) রাতে "বন্যার্তদের পাশে ছায়াতল" স্লোগান নিয়ে একটি দল ঢাকাস্থ মোহাম্মদপুর অফিস থেকে ১৪ জন স্বেচ্ছাসেবকসহ খাবার সামগ্রী নিয়ে সিলেটের সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্য রওনা করে সংস্থাটি।
শুক্রবার দুপুরে সুনামগঞ্জে পৌঁছে সেখানে অবস্থান করে, অন্ধকারে মোমবাতির আলোতে রাত জেগে স্বেচ্ছাসেবক টিম প্যাকেটিং এর কাজ করে। পরেরদিন সকাল থেকেই পানিবন্দী মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে দিনভর নৌকার মাধ্যমে খাবার সামগ্রীর প্যাক পৌঁছে দিয়েছে সংস্থাটির স্বেচ্ছাসেবীরা। প্রতিটি প্যাক এর মধ্যে ছিলো চাল, ডাল, তেল, আলু, বিস্কুট, শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য, ঔষধ ও পানিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী। এছাড়া বানভাসি মেয়ে ও মহিলাদের কথা মাথায় রেখে স্যানেটারি ন্যাপকিন দেওয়া হয়েছে। কোথাও হাঁটুপানি তো কোথাও কোমর পানিতে নেমে সেচ্ছাসেবকরা নিরলসভাবে কাজ করে গেছে। মাথায় বস্তা নিয়ে খাবার পৌঁছে দিয়েছে পানিবন্দী পরিবারের কাছে।
এবিষয়ে সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সোহেল রানা জানান, 'ছায়াতল বাংলাদেশ' মূলত সুবিধাবঞ্চিত ও পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন। সিলেট অঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় মানুষের দুঃখ কষ্ট আমাদের মর্মাহত করেছে। লাখ লাখ মানুষ যখন পানিবন্দী সে সময় আমরা এসব বানভাসি মানুষের পাশে দাড়িয়েছি। এটা আমাদের কর্তব্য ছিলো। আমরা চাল, ডাল, তেল, ঔষধ ও পানিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী মানুষের বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছি। যতদিন এই মানুষগুলো বিপদমুক্ত না হবে ততদিন আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
পানির মধ্যে মাথায় খাবারের বস্তা নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে খাবার পৌছে দেয়া সংগঠনের এক স্বেচ্ছাসেবী আকাশ ভূইয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মানুষের সুখে দুঃখে তাদের পাশে থাকার সংগঠনের নামই ছায়াতল বাংলাদেশ। যে দেশেরই হোক না কেন সাধারন মানুষ যদি বিপদে থাকে তাহলে তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করে যাবে ছায়াতল বাংলাদেশ।
কোমর পানিতে নেমে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন সংগঠনটির এক স্বেচ্ছাসেবী মাহমুদা আফরোজ শান্তা (তানভী)। তিনি বলেন, আমরা সুনামগঞ্জের মানুষের কষ্ট কাছে থেকে দেখে এসেছি। ওখানকার মানুষরা এখনো পানিবন্দী। বিদ্যুৎ নেই, বিশুদ্ধ পানি নেই অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। আমরা ছায়াতল বাংলাদেশ তাদের জন্য কিছু করতে পেরেছি তার জন্য ভালো লাগছে।
উল্লেখ্য, ১৬ মার্চ ২০১৬ সালে সোহেল রানার হাতে ছায়াতল বাংলাদেশ নামে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। 'আমরা চাই না একটা শিশু রাস্তায় বেড়ে উঠুক" এ স্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। শিশুদের খাদ্য, বস্ত্র, সুশিক্ষা, চিকিৎসা, সংস্কৃতি চর্চায় কাজ করছে। বিশেষ দক্ষতা অর্জনে নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে। সংস্থাটি ৪৩ জন ভলান্টিয়ার নিয়ে ৪ টি স্কুল পরিচালনা করছে যেখানে ১৬৩ জন সুবিধাবঞ্চিত ও পথশিশু রয়েছে। সম্প্রতি ১৩ জুন ২০২২ ছায়াতল বাংলাদেশ এনজিওর স্বীকৃতি লাভ করেছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: