সরকারি জলাশয় থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পার-ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আতিক খানের বিরুদ্ধে। স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মৌখিক অনুমতি নিয়ে তিনি মাটি কাটছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার হাটগ্রাম মৌজায় থাকা প্রায় ছয় একর আয়তনের ঐ জলাশয়ের নাম চন্ডীদুয়ার। জলাশয়টি ছয় বছরের জন্য স্থানীয় হাটগ্রাম মৎস্য সমবায় সমিতির কাছে ইজারা দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর। ইউপি সদস্য আতিক খান নিজেই ওই সমিতির সভাপতি। এর আগে ঐ জলাশয় সংস্কারের জন্য বিশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয় জেলা পরিষদ। সংস্কারের মাত্র তিন বছরের মাথায় ঐ সমিতির সভাপতি ইউপি সদস্য অবৈধভাবে জলাশয়ের পানি শুকিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। প্রতি ট্রলি মাটি পাঁচশ’ থেকে সাড়ে পাঁচশ’ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ছয় একর আয়তনের জলাশয়ের মাঝ বরাবার বাঁধ দিয়ে এক অংশ শুকিয়ে ফেলা হয়েছে। শুকনো অংশ থেকে এক্সকেভটর (ভ্যেকু) দিয়ে এলোমেলোভাবে কাটা হচ্ছে মাটি। সেই মাটি পরিবহনের জন্য কাজ করছে দশ থেকে বারোটি শ্যালোইঞ্জিন চালিত ট্রলি গাড়ি। গ্রামে গ্রামে সেই মাটি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকায়।
জলাশয় থেকো কাটা ট্রলি মাটি কিনেছেন এমন একজন হাটগ্রামের ফিরোজ আলী। তিনি বলেন, বাড়ির সামনের খাল ভরাটের জন্য আতিক মেম্বারের দায়িত্ব দেয়া লোক হেলালের কাছ থেকে প্রতি গাড়ি মাটি সাড়ে পাঁচশ টাকা করে কিনছেন তিনি ।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীর উপস্থিতি টের পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন ইউপি সদস্য আতিক খানের নিয়োজিত লোক হেলাল খান। এ সময় তিনি এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রচার না করতে ঘুষ দেয়ার চেষ্টা করেন।
অধিক অনুসন্ধানে জানা যায়, হাটগ্রাম মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি আতিক খান জলাশয়ের মাটি কেটে বিক্রির জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন। মাত্র তিন বছর আগে ঐ জলাশয় সংস্কার করায় মৎস্য অফিস তার আবেদন ফিরিয়ে দেন। এরপর তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মৌখিক অনুমতি নিয়ে মাটি কেটে বিক্রি শুরু করেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
অবৈধ এই কাজ সহজ করতে তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা আকবর আলীর বাড়িতে টাকা ছাড়া মাটি সরবরাহ করেন। ইতোমধ্যে তিনি কয়েক লক্ষ টাকার মাটি কেটে নিয়েছেন। এছাড়া এলোমেলোভাবে মাটি কাটায় ঐ জলাশয় মাছ চাষের অনুপোযুক্ত হয়ে পড়েছে।
আতিক খান জানান, প্রথমে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা আকবর আলী ইউএনও’র কাছ থেকে মাটি কাটার অনুমতি নেন। কিন্তু আতিক বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে মঙ্গলবার (১৪ জুন) নিজেই ইউএনও নাহিদ হাসান খানের সাথে সাক্ষাত করেন। সেখান থেকে তিনি মাটি কাটার মৌখিক অনুমতি নিয়ে আসেন বলে জানান।
জেলা পরিষদ সদস্য গুলশান আরা পারভীন লিপি বলেন, মাত্র তিন বছর আগে ঐ জলাশয় বিশ লক্ষ টাকায় সংস্কার করা হয়েছে। এত দ্রুত কিভাবে সংস্কার প্রয়োজন হয় বুঝতে পারছি না।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই বাছাই শেষে জলাশয় খননের অনুমতি দেয়া হয় নাই। তবে উপজেলা সরকারী জলাশয়ে সরকারী অনুমোদন ছাড়া ব্যাক্তি পর্যায়ে মাটি খননের কোনো সুযোগ নেই।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান বলেন, জলশয়টি ভরাট হয়ে গিয়েছিলো, তাই অনুমতি দেয়া হয়েছিলো। তবে মাটি কাটার জন্য নয়, জলাশয় সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। আদৌ জলাশয় ভরাট হয়েছে কিনা এটা জানার জন্য কোনো যাচাই বাছাই করেছেন কি না? এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, এখন মাটি কাটতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: