সরিষাবাড়ী বাংলাদেশের জামালপুর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এটি ৮টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এটি ময়মনসিংহ বিভাগের অধীন জামালপুর জেলার ৭ টি উপজেলার একটি এবং এটি জেলার দক্ষিণভাগে অবস্থিত। এ উপজেলার উত্তরে মাদারগঞ্জ ও জামালপুর সদর উপজেলা, দক্ষিণে ভূঞাপুর উপজেলা, পূর্বে গোপালপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা, পশ্চিমে সারিয়াকান্দি, কাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা অবস্থিত। এটি একটি গুরত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা। এখানে দেশের সবচেয়ে বড় সার কারখানা 'যমুনা সার কারখানা' অবস্থিত।
বাংলাদেশে সরিষাবাড়ী পাকিস্তান শাসনামলে ১৯৬০ সালে সরিষাবাড়ী থানা গঠিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৮৩ সালে সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরিষাবাড়ী উপজেলা জামালপুর-৪ সংসদীয় আসনের অন্তর্ভুক্ত । এ আসনটি জাতীয় সংসদে ১৪১ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত।
সরিষাবাড়ী উপজেলার আয়তন ২৬৩.৫০ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ২০১১ সনের আদম শুমারী অনুযায়ী ৩,২৫,৩২০ জন। পুরষ ও নারীর অনুপাত ১০০ঃ৯৬, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১২৩৫ জন, শিক্ষার হার ৪৪.৬%।
ধান পাট,সরিষা এই নিয়ে আমাদের সরিষাবাড়ি। গোলা ভরা ধান,মাঠে হলুদের সমারোহে চোখ জুড়ানো সরিষা সেই সাথে ছিলো সোনালী আঁশ খ্যাত পাট যা উৎপাদন ও বাজারজাত করণে ছিলো সরিষাবাড়ি উপজেলা জামালপুর জেলার মধ্যে শীর্ষে।
সরিষাবাড়ীতে এক সময় গর্ব করার মতো অনেক কিছুই ছিলো। এশিয়ার বৃহত্তম যমুনা ইউরিয়া সার কারখানা তারাকান্দি গেট পাড়, রেলওয়ে সংযোগ। সাথে পাট শিল্প। প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জের পরেই ছিল সরিষাবাড়ীর স্হান।
২২ টি পাট কুঠিরের সাথে ছিল চারটি জুটমিল। আলহাজ্ব জুট মিলস, এ আর এ জুট মিলস, পপুলার জুট মিলস এবং মিমকো জুট মিলস পোগলদিঘা। কুঠিগুলো আগেই বন্ধ হলেও জুটমিল গুলো টিকে ছিল তিন বছর আগ পর্যন্ত।
শুধু মাত্র আলহাজ্ব জুট মিলে শ্রমিকদের সংখ্যা ছিল ৩৫০০। এ মিলে কর্মরত শ্রমিকদের সংখ্যা ছিল ৭০০০। সাত হাজার মানুষ জুট মিলে কাজ করতো মানে সাত হাজার পরিবার চলতো। প্রতি পরিবারে চারজন করে মানুষ থাকলেও ২৮০০০ মানুষ সরাসরি জুট মিলের উপর নির্ভর করে চলতো। সেই সাথে পাট ব্যবসায়ী, পরিবহন মালিক শ্রমিক, জুটমিলকে কেন্দ্র করে আশে পাশে গড়ে উঠা দোকানপাট সব মিলিয়ে কমপক্ষে ৪০,০০০ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এই চারটা জুট মিলের উপর নির্ভরশীল ছিলো।
কালের বিবর্তনে দেশের ভাগ্য পাল্টালেও, ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি এসব প্রতিষ্ঠানের। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ন্যে ধারাবাহিকভাবে মিলগুলো একের পর এক বন্ধ হতে থাকে। যার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শ্রমিকদের একটা বড় অংশ হুমড়ি খেয়ে পরে। সংসারের চাহিদা পূরনের নিমিত্তে এদের অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করলেও কেউ,কেউ তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনে অটোরিকশা চালানো শুরু করছে। এসব কর্মের কিছু গেছে বকশিগঞ্জ, কিছু গাজীপুরের মাওনা, এবং কিছু কুমিল্লা জুট মিলে কাজ করে কোন রকমে দিনপাত পার করছে।
সর্বশেষ আলহাজ্ব জুটমিল বন্ধ হওয়ার তিন বছর পার হলেও এখনো খোলার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। হয়তো আর কখনোই খুলবে না।
স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, আলহাজ্ব জুট মিলের জায়গা নাকি প্লট আকারে বিক্রি করা হচ্ছে। খবরটা শুনে খুব খারাপ লাগলো। একটা অঞ্চলের উন্নয়নে শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম।
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পাট-শিল্প যদি টিকতে না-ই পারে তবে অন্তত শিল্প ট্রান্সফার করা উচিত। কিন্তু একবারে বন্ধ করে দেওয়া আত্মহননের সামিল।
চারটা জুট মিলসের অবকাঠামো আছে। এখানে গার্মেন্টস করা যেতে পারে, কিংবা লোহা রড বা সিমেন্ট কারখানা হতে পারে। হতে পারে পোল্ট্রি ফিড কারখানা যার মাধ্যমে হাজারটা পরিবারের কর্মের ব্যবস্থা করা সম্ভব।
সরিষাবাড়ীর সচেতন মহলের অনেকেই বলছেন,সরিষাবাড়ি থেকে উত্তরবঙ্গ কাছে। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো। জামালপুর টাঙ্গাইল এবং উত্তরবঙ্গের বাজার ধরতে পারে এমন কিছু তৈরি করা যেতে পারে।
যেমন গার্মেন্টস হোক আর চানাচুর ফ্যাক্টরী হোক সরিষাবাড়ীর সাধারণ মানুষের যেন কর্মসংস্থান হয় এই ব্যবস্থা করা উচিত।
এভাবে চলতে সরিষাবাড়ির ঐতিহ্য অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে যার উপজেলায় বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে। অভাবের তাড়নায় মানুষ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হবে যার মাধ্যমে সরিষাবাড়ি তার ঐতিহ্য হারাবে।
সরিষাবাড়ি আসনের সংসদ সদস্য এবং সরিষাবাড়ী নীতি নির্ধারকদের মাধ্যমে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান পুনরুদ্ধার করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে সরিষাবাড়ি উপজেলার ঐতিহ্য ফেরানোর জন্য সরিষাবাড়ির সচেতন মহল ও গুনীজনরা আহবান জানিয়েছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: