তীব্র পানি সংকটে পড়েছেন লবণ অধ্যুষিত মোংলা পৌর এলাকার দুই লাখ মানুষ। চাহিদা অনুযায়ী পানি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পৌরবাসীর। প্রতিদিন দু বার পানি দিলেও ঠিকমত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। খরা মৌসুম এলেই নামতে শুরু করে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। ফলে প্রতি বছরই দেখা দেয় পানির জন্য হাহাকার। বর্ষা না হওয়ার ভেতর পানির সকংট যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে মোংলাবাসীর কাছে। এদিকে, পানি না পাওয়ায় মানুষ নামাজসহ নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় অনেক কাজ করতে পারছেন না।
জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে মোংলা পোর্ট পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করা হয়। সীমানা নির্ধারণ জটিলতার মামলা দিলেও দিতে পারেননি পৌরবাসীকে সুপেয় পানি! আজও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা হয়নি মোংলা পোর্ট পৌরসভায়। নিত্য ব্যবহারের জন্য যে পানির পাইপগুলোতে পানি অল্প উঠছে, সেগুলোর সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পানি নিচ্ছেন স্থানীয়রা। সুপেয় পানির অভাবে দিশেহারা তারা। সীমানা নির্ধারণ জটিলতা কাটলেও কাটেনি পানির সংকট!
এ সংকট সমাধানে গত ২০০৮ সালে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌর শহরের মাছমারা এলাকায় পুকুর খননসহ প্রয়োজনীয় স্থাপনা ও অবকাঠামো করে স্থানীয় বাসিন্দাদের সুপেয় পানির চাহিদা মেটানো হচ্ছে। তাতেও চাহিদা না মেটায় পুনরায় ২০১৬ সালে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও একটি পুকুর খননসহ আনুষাঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করা হয়। মোট ৮৩ একর জায়গার ওপর দুটি পুকুর খনন, দুটি ওভারহেড ট্যাঙ্ক নির্মাণসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
এ পুকুর দুটিতে বৃষ্টি ও নদীর পানি সংরক্ষণ করে তা রিফাইনারি (বিশুদ্ধকরণ) করে পৌরবাসীদের সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সরবরাহ করা সেই পানি চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হওয়া ও অনাবৃষ্টির কারণে পুকুর দুটি শুকিয়ে যাওয়ায় নতুন করে বিপাকে পড়েছেন পৌর কর্তৃপক্ষ। এর সাথে পৌর শহরের বাসিন্দাদেরও ভোগান্তি বেড়েছে। মূলত অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
পৌরবাসী বলেন, সাপ্লাইয়ের পানির এ সমস্যা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার জানালেও কোনো সমাধান মেলেনি। বর্তমান মেয়রও এ সমস্যার সমাধানের কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কিংবা নেবেন কিনা তাও বলতে পারে না পৌরবাসী।
পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ মিটার গভীরতার জায়গায় ৪ ফুটের গভীরতা করে পুকুরে নির্দিষ্ট পুরো অংশ খনন না করে দায়সারাভাবে কাজ শেষ করে টাকা তুলে ভেগে পড়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। আর এতে গাফিলতি রয়েছে স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদেরও।
পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডবাসীর অভিযোগ, পৌরসভার একমাত্র সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্প ছাড়া শহরের অন্য কোথাও কোনো মিষ্টি পানির পুকুর কিংবা বিকল্প উৎস নেই। পৌর কর্তৃপক্ষের একমাত্র সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে পানি দেওয়া হলেও তা ঠিকমতো পাই না। যতটুকু পাই তাতে আমাদের চাহিদা মিটে না। তার মধ্যে আবার পুকুরও শুকিয়ে গেছে। এখন তো আরও খারাপ অবস্থা। আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। শুল্ক মৌসুমে মোংলা পৌরসভাসহ আশপাশের এলাকায় এমনিতেই পানির সংকট থাকে। এসময় পানি না পাওয়া যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে।এতে করে নামাজ আদায়কারী মুসল্লিরা পড়েছে সবচেয়ে বড় সমস্যা। পানির অভাবে অনেকে ওজু করতে পারছে না।
শহরের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাছেল বলেন, পানি হচ্ছে মানুষের জীবন। সব সময়ই পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু পৌরসভা ঠিকমত পানি সরবরাহ করছে না। কারো কাছে অভিযোগ করার জায়গা নেই। পানির কষ্ট জীবনযাপন করছে পৌরবাসী।
শহরের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জোহরা বেগম জানান, পানির খুব কষ্ট। যারা বাসা-বাড়িতে ভাড়া থাকে তারা অনেকেই পৌরসভার সাপ্লাই পানির ওপর নির্ভর। এই পানিতেই তাদের গোসল, রান্নাবান্না চলে। কিন্তু পৌরসভা ঠিকমতো পানি দিচ্ছে না। যে কারণে পানি সকংট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এ পানির সমস্যা সমাধানে যেন কেউই নেই।
মোংলা পোর্ট পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার জাহিদ বলেন, পৌরসভার প্রায় দুই লাখ মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিন ৬০ লাখ লিটার পানির চাহিদা থাকলেও ৩০ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। আর পুকুরের গভীরতা কম থাকায় পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ৩০ লাখ লিটার পানির ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। আর এখন তো পুকুর শুকিয়ে গেছে, নদীর পানিও লবণ, তাও পুকুরে ঢুকানো যাচ্ছে না। এখন একমাত্র ভরসা হচ্ছে বৃষ্টি। বৃষ্টি হলে পানি বাড়বে। তা না হলে কোন উপায় থাকবে না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: