বৃদ্ধ দম্পতি শামসুল হক (৭২) ও ফিরোজা বেগম (৬০)। ঘর পেয়েছেন সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের। কিন্তু সেই ঘরে যাতায়াতের জন্যে নেই কোন রাস্তা। তাই মাঠের মধ্য দিয়ে হাঁটু পানি ডিঙিয়েই যাতায়াত করতে হয় এই দম্পতিকে। একে ত বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটতেও পারেন না শামসুল হক, এর ওপর যাতায়াতের জন্য রাস্তার অভাব নিদারুণ কষ্টের এই পরিবারের জন্য।— এমন চিত্রই দেখা গেছে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর মিঠাখালী গ্রামে গিয়ে।
উত্তর মিঠাখালী ২ নম্বর ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল সড়ক থেকে খানিকটা দূরেই সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্পে পাওয়া শামসুল হক দম্পতির বসতঘরটি। মূল সড়ক থেকে ঘরে যাতায়াতের জন্যে একটি মাঠ ছাড়া আর কোন বিকল্প রাস্তা নেই। আর সেই মাঠেই জমে আছে হাঁটু পানি। আর সেই পানি ডিঙিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে। তাদের সন্তানাদি না থাকায় বৃদ্ধ শামসুল হককেই বাজারঘাট করতে হয় পরিবারের জন্য। সামনেই বর্ষা মৌসুম। টানা বৃষ্টি হলে যাতায়াত বন্ধ হয়ে অনাহারে দিন কাটবে— এমন আশঙ্কায় দিন পার করছে পরিবারটি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় (পিআইও) সূত্রে জানা যায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের এর আওতায় সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের অনুকুলে ঘর দেয়া হচ্ছে। মঠবাড়িয়া উপজেলায় ইতোমধ্যে ৩৮১টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে শামসুক হক দম্পতির ঘরও।
শামসুল হকের স্ত্রী ফিরোজা বেগম বলেন, ‘ওই মাঠের মধ্যে দিয়ে পানি ডিঙিয়ে যাতায়াত করি। অনেক কষ্ট হয়। আমার স্বামী বেশি হাঁটা-চলা করতে পারেনা। তিনি স্ট্রোকের রোগী। এই অসুস্থতা নিয়েই এই হাঁটু পানির মধ্য দিয়ে আসা-যাওয়া করা লাগে।’
ফিরোজা বেগম জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’র কাছে অনুরোধ রেখে বলেন, ‘আমি ঘরে যাওয়ার জন্যে যেন একটু পথ পাই। এছাড়া আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। আমি যেন ঘরে যেতে পারি।’
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ঘর পাওয়ায় তারা বেশ খুশি। কিন্তু চলাচলের রাস্তা না থাকায় এই পানি ডিঙিয়ে তারা আসা-যাওয়া করে। আমাদেরও দেখে কষ্ট লাগে। এটা অনেক বড় একটি সমস্যা।
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা মো. রুস্তম আলী বলেন, ‘এদের সরকার ঘর দিয়েছে এই ঘরে যাওয়ার জন্যে ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আমরা গ্রামবাসী পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি যে, পথটা যেন খুব তাড়াতাড়ি ঠিক করে দেওয়া হয়। এরা খুব কষ্ট করে জীবনযাপন করছে।’
গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় সরকার প্রদত্ত পানির ট্যাংক স্থাপনের কাজের জন্যে আসা এক শ্রমিক বলেন, ‘এখানে রাস্তাঘাট নাই। আমাদেরও পানির ভেতর দিয়ে নেমে যাওয়া লাগছে। মালামাল নিয়ে যেতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।‘
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঊর্মি ভৌমিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি এখনও অবগত নই। যদি এমন সমস্যা হয়ে থাকে তবে আমি সরেজমিনে গিয়ে অতি দ্রুত চলাচলের রাস্তার ব্যবস্থা করে দেওয়ার চেষ্টা করবো।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: