পার্বত্য জেলার বান্দরবানে সর্বপ্রথম গড়ে উঠে উঠেছে গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহারে ১২শ ফুট উচ্চতার দন্ডায়মান বৌদ্ধ মূর্তি। এটি তিন পার্বত্য জেলায় মধ্যে বান্দরবান জেলায় মধ্যে সর্বপ্রথম সবচেয়ে উঁচু মূর্তি। যার উচ্চতার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২শ ফুট। যা বৌদ্ধ বিহার ও বুদ্ধ মূর্তিসহ ২ একর জায়গায় জুড়ে স্থান। তৈরী করতে সময় লেগেছিল পুরো ৩ বছর।
জানা গেছে, এই বিহারটির নাম গোল্ডেন টেম্পল বৌদ্ধবিহার হলেও স্থানীয় মারমা ভাষায় বিহারটিকে বলা হয়" শৈ ফারা ক্যং "। অর্থাৎ স্বর্ণের বুদ্ধ বিহার। স্বর্ণাভাব আকর্ষণীয় এই মন্দিরটি এখন আলোকিত করে তুলেছে পুরো বান্দরবানকে। অপরূপ কারুকার্যমন্ডিত অনন্য স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন এই মন্দিরটিতে রয়েছে পদ্ম ফুলের উপর দণ্ডায়মান দেশের সর্ববৃহৎ বুদ্ধমূর্তি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বৌদ্ধ বিহারের ও বুদ্ধ মুর্তি তৈরী জন্য মায়ানমার থেকে আনা হয়েছে তিনটি পিতলের এবং একটি শ্বেত পাথরের আকর্ষণীয় বৌদ্ধ মূর্তি। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অভিজ্ঞ কারুশিল্পীদের সুদক্ষ হাতে প্রতিদিনই চলছে বিহারের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। যার বূদ্ধ মন্দিরে রয়েছে একটি সুদৃশ্য গেইট, দুইটি সিংহ, দুইটি ড্রাগন, দুইটি হাতি, একটি প্যাগোডা, একটি ফোয়ারা আর একটি আকর্ষণীয় আসন সহ বিভিন্নস্থাপনা।
গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটি সাধারণ সম্পাদক মংহ্লা রাখাইন জানিয়েছেন, উখিয়ায় ঘুমানোর অবস্থায় বুদ্ধমূর্তি দৈর্ঘ্য ১২৫ ফুট । পটিয়ায় বুদ্ধমূর্তিটি অবস্থায় প্রায় ১০০ ফুট। বান্দরবানের তাইংখালিতে পদ্মাসনে বসা মুর্তিটি উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। খাগড়াছড়িতে জেলায় বৌদ্ধ মন্দিরের ওপর বসানো রয়েছে এটিও প্রায় ৫৫ ফুট। তার মধ্যে বান্দরবানের গোল্ডেন টেম্পল বৌদ্ধ বিহারে যে মূর্তিটি বানানো হয়েছে তা মাটি থেকে উচ্চতা ৫৫ ফুট। পদ্ম ফুলের উপর দন্ডায়মান হিসেবে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মূর্তি।
এটি বান্দরবান শহর হতে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহার। বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের লালমোহন বাহাদুর বাগান এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির নিজস্ব জমিতে প্রায় ২ একর জায়গা জুড়ে সুদক্ষ কারিগর আর স্থাপত্য শিল্পীর অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে নির্মাণাধীন রয়েছে এই ‘গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহারের’ কাজ। চারিপাশে প্রাকৃতিক মনোরঞ্জন পরিবেশে গড়ে তুলেছে এ-ই বৌদ্ধ বিহারটি। বিহারটি উঁচু পাহাড়ের উঠে তাকালে দেখা যায়, বান্দরবান শহরে মধ্যখানে জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে এ-ই বূদ্ধ মূর্তি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উঁচু বৌদ্ধ মূর্তি বিভিন্ন জেলায় দেখা গেলেও এটি বান্দরবানে সর্বপ্রথম বৌদ্ধ মূর্তি। রাস্তাধারে হওয়াতেই সবার কাছে নজর কেড়েছে এ-ই বুদ্ধ বিহারটি। এই বিহার সাধারণ জনগণের প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত হলে এর রূপ দেখে পূজারি ও দর্শনার্থীরা বিমোহিত হবে বলে আশাবাদ স্থানীয়দের।
বৌদ্ধ মূর্তি কারীগর কিংমং রাখাইন জানান, তার বানানো সবচেয়ে সুন্দর মন্দির গুলোর মধ্যে অন্যতম এই গোল্ডেন টেম্পল বৌদ্ধবিহার। কয়েকটি ধাপে ধাপে আমরা পরিকল্পনা করে দন্ডায়মান বৌদ্ধ মূর্তি, সুদৃশ্য প্রবেশ দ্বার, বিশাল আকৃতির হাতি, ড্রাগন আর সিংহসহ মনোরম কয়েকটি স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, আমার ব্যক্তিগত উদ্যাগে এবং স্থানীয় দানবীরদের দান অনুদান আর বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সার্বিক সহযোগিতায় প্রায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে এই গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহারের কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিহারের সমস্ত কারুকাজ শেষ হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই বিহার পূজারি ও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এই গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহার এ আগামীতেও আরো কাজ করা হবে এবং যে সমস্ত অনাথ শিশু লেখাপড়া করতে পারে না তাদের বিনামূল্যে আবাসিকভাবে বসবাসের সুবিধা নিশ্চিত করে পড়ালেখা করানো হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: