ঈদ উপলক্ষে ভূমিসহ গৃহপ্রাপ্তরা নতুন ঘরে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ঈদ উদযাপন করতে চান। প্রধানমন্ত্রীকে তারা তাদের সাথে নতুন ঘরে বসে সেমাই আর ডাল ভাত খাওয়াতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। যিনি ঘর দিয়েছেন সেই প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েই নতুন বাড়ি পাওয়ার আনন্দে ঈদের বিকেলটি কাটাতে চান ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাফই কাইচাইল ভূমিসহ গৃহপ্রাপ্তরা। এই আহবান জানিয়েছেন তারা।
মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর পর এবার পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষ্যে ফরিদপুরের নগরকান্দায় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ভূমি ও গৃহহীনদের ভূমিসহ গৃহ প্রদান করা হচ্ছে। নতুন করে ১শ ১০টি পরিবার পাচ্ছে এই বাড়ি। সাথে সাথে জেলার মধ্যে নগরকান্দা উপজেলা ভূমিহীন মুক্ত হচ্ছে। এর আগে এই উপজেলায় আরো প্রায় ৩ শত ৫০ টি পরিবার জমিসহ ঘর পেয়েছে। এদিকে জেলায় ইতিমধ্যে ৫ হাজার পরিবার ভূমিসহ গৃহ প্রাপ্তের আওতায় এসেছে।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আগামী ২৬ এপ্রিল ২০২২ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি জেলার নগরকান্দা উপজেলার কাফই কাইচাইল এলাকায় জমিসহ নব নির্মিত গৃহ হস্তান্তর করবেন।
বৃহস্পতিবার (২১ শে এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার কাফই কাইচাইলের নব নির্মিত বসতি এলাকায় ঘর প্রাপ্তির তালিকায় থাকা অনেকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। নিজের বরাদ্দ প্রাপ্ত ঘরের বারান্দায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুজিব বর্ষের লোগোযুক্ত ঘরের নেমপ্লেটের দিকে নিবিষ্ট মনে তাকিয়ে থাকা জাকির হোসেন। জানালেন, পরিবার নিয়ে ১৪ বছর যাবত থাকেন উপজেলার কাইচাইল এলাকায় শশুর আফসার মাতুব্বরের বাড়িতে। নিজের কোন জমি বা বাড়ি নাই। স্কুল পড়ুয়া দুই সন্তান নিয়ে সেখানেই তাদের দিনাতিপাত ঘটে। এবার ঈদ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে জমিসহ নতুন ঘর দিয়েছেন। এলাকার পোড়াদিয়া বাজারের বটতলা ফুটপাতের চা বিক্রেতা জাকিরের এবারের ঈদ নিজ বাড়িতে হবে বলে খুব খুশি। বলেন, ‘আমার পোলাপান নিয়ে নিজের বাড়িতে নিজের ঘরে ঈদ করুম। যে ঘর দিছে, সেই প্রধানমন্ত্রীরে নিয়ে ঈদ করবার চাই। সিমাই আর একমুঠ ডাল ভাত তাকে আমাগের ঘরে বসায়ে খাওয়াব্যের চাই।’
স্বামী পবিত্র মালোকে নিয়ে মাঝিকান্দায় চাচা শশুড় উত্তম মালোর বাড়িতে থাকেন বাসন্তী রানী (৪৫)। তিন মেয়ের মধ্যে এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন; অপর দু মেয়ের একজন ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে। অপর জন পুরদিয়া স্কুলে পড়ে। স্বামী মাছ ধরে বিক্রি করেন। নিজের বাড়ি না থাকায় মেয়েদের বিয়ে নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন বাসন্তী। এবার সেই দুঃচিন্তা দূর হবে বলে জানালেন তিনি।
কাঠ মিস্ত্রি নূরে আলম। ‘দিন আনি দিন খাই’ অর্থনৈতিক অবস্থা থাকলেও বড় কষ্টের বিষয় ছিল নিজের বাড়ি না থাকা। বলেন, ‘যারা নিজের বা পৈত্রিক বাড়িতে থাকে তারা কোনদিনও পরের বাড়ি থাকার দুঃটা বুঝবে না। তিনি আরো বলেন, ঈদের দিনে বাচ্চাদের মুখে দু’চামুচ সেমাই তুলে দিতে পারি ঠিকই, কিন্তু ‘মাইনষের বাড়ি থাহে, নিজির বাড়ি নাই’ এই কথা শুনতি খুবই খাবার লাগতো। নিজেরে খুব ছোট মনে হত। মনটা সব সময় মরা থাকতো। সবাই দেখতেছে ঈদ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী জমি দিছে- ঘর দিছে। কিন্তু সে শুধু এগুলাই দেয় নাই, প্রধানমন্ত্রী আমাগো মনটা বড় করে দিছে। এখন বুক ফুলাইয়ে বলতি পারবো নিজের বাড়ি থাকি; মানইষের বাড়ি থাকি না। তিনি আরো বলেন, ঈদের দিন প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই নতুন ঘরে আসবেন- আমার বাচ্চাদের সাথে একটু সেমাই খাবেন এই চাই।
এলাকার জমিসহ নতুন ঘর প্রাপ্ত জান্নাতি আক্তার, সোহবারসহ বাসিন্দারা আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে, ঈদের উপহারের সাথে সাথে তিনি যেন একটু সময় করে তাদের আনন্দের ভাগাভাগি করেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: