এই শীতের রাইতত (রাতে) ঠিক মতন নিন্দাবা (ঘুমাতে) পারু না। সারাদিন ভিক্ষা করে রাইতত জারের (শীতের) তানে নিন্দ (ঘুম) ধরে না। আইজ স্যার আসে একটা কম্বল দিল। এলা রাইতত শান্তিতে নিন্দাবা (ঘুমাতে) পারিম । জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে শীতে কম্বল পেয়ে এভাবেই নিজের অনুভুতি জানাচ্ছিলেন মোবারক (৫৬)।
শনিবার রাতে বছরের প্রথম দিনে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে শীতার্ত অসহায় ভবঘুরে দরিদ্র মানুষকে প্রায় ২ শত শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান ও তার পরিবার।
শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি মার্কেটের নিচেঁ ঠান্ডায় জড়োসরো হয়ে ঘুমিয়ে থাকা মোবারক কে ডেকে কম্বল দেন জেলা প্রশাসক। মোবারক তখন আবেগে এসব কথা বলেন। সারাদিন ভিক্ষা করে খাওয়ার ব্যাবস্থা হলেও রাতে ঘুমান মার্কেটের নিচে। ঠান্ডায় কোন কম্বল না থাকায় একটি ছেড়া বস্তা গায়েঁ দিয়ে শুয়ে ছিলেন। কম্বলটি পেয়ে আবেগে কান্না করেন এবং দোয়া করেন।
এসময় বাসস্ট্যান্ড এলাকার এক রিক্সা চালক মোখলেসুরকেও কম্বল দেন জেলা প্রশাসক। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারাদিন রিক্সা চালাই। সরকারের পক্ষ হতে শীতে কম্বল দেওয়া হয় ঠিকই কিন্তু অনেকক্ষন লাইনে দাড়িয়ে থেকে কম্বল নেওয়া সম্ভব হয় না। আজ হঠাৎ স্যার এভাবে কম্বল দিবে কোনদিন ভাবতেও পারি নাই আমি।
এর আগে জেলা প্রশাসক ও তার পরিবার শহরের কালিবাড়ি এলাকার হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কম্বল বিতরণ করেন। এছাড়াও শহরের রেল স্টেশন, রোড এলাকা, হসপিটাল, চৌরাস্তা সহ রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা অসহায় শীতার্ত মানুষদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের প্রকোপটা অনেক বেশি। আর প্রশাসন মানুষের দোড়গোড়ায় পৌছানোর জন্য এই উদ্যোগ। বছরের প্রথম দিন সন্তান স্ত্রী সহ শীতার্ত মানুষকে কম্বল দেওয়ার জন্য বের হয়েছি। এই শীতে যেসব মানুষ কষ্ট পাচ্ছে তাদের কষ্টগুলো কাছ থেকে জেনে সহযোগীতা করছে জেলা প্রশাসন। তবে সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে এই শীতে অনেক অসহায় মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। আর আমার সন্তানদের অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোটা এখন থেকেই শেখানোর চেষ্টা করছি। বছরের প্রথম দিনে অসহায় শীতার্থদের কম্বল বিতরণ করতে পেরে ভালোই লাগছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: