বাংলাদেশের পতাকা বিধি লঙ্ঘন করে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানোর অপরাধে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং বিসিবির নীরব ভূমিকার অপরাধে বিসিবি চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান পাপনের অপসারণের দাবিতে আজ ১৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন এর সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আরোও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা ও ভাস্কর শিল্পী রাশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, "পতাকা বিধি লঙ্ঘন করে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানের পতাকা মিরপুরে খেলার মাঠে ওড়ানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাকিস্তানি ক্রিকেট দলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এবিষয়ে বিসিবির নীরব ভূমিকার অপরাধে বিসিবির চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান পাপনকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। পাকিস্তানের সরবরাহকৃত গ্রেনেড দিয়ে বিএনপি-জামাত একুশে আগস্টে নাজমুল হাসান পাপনের মাতা শহীদ আইভি রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ বিরোধী অপকর্মের বিরুদ্ধে বিসিবি এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি যা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সাথে বেঈমানী।"
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন বলেন, "আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচ চলাকালীন সময় দুই দেশের পতাকা ওড়ানো হয়। কিন্তু অনুশীলনে কোন দেশের পতাকা ওড়ানো এটাই প্রথম এবং ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের সময় আমাদেরকে এধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা দেখতে হলো যা কখনোই মেনে নিবে না বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। আইসিসি ও বিসিবিকে অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণের নিকট এধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্য জবাবদিহি করতে হবে। পাকিস্তান ক্রিকেট দল বাংলাদেশের পতাকা বিধি লঙ্ঘন করে দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে পাকিস্তানের পতাকা বাংলাদেশে ওড়ানোর পিছনে মূল কারণ খুঁজে বের করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার মূলহোতা জেনারেল নিয়াজীর ভাতিজা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নির্দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এহেন ঘটনা সংঘটিত করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ একাত্তরে পরাজিত হওয়ার প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের নানাবিধ ষড়যন্ত্র এখনো চলমান রয়েছে। পাকিস্তানি ক্রিকেট দলের এমন ধৃষ্টতায় বিসিবি ও আইসিসির নীরবতার কারণে তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এবিষয়ে আইসিসি ও বিসিবিকে অবশ্যই তাদের অবস্থান জাতির সামনে পরিস্কার করতে হবে। এর আগেও ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে পাকিস্তান ক্রিকেট দল বাংলাদেশকে কটাক্ষ করেছিল। একাত্তর সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নৃশংসতা আমরা ভুলে যায়নি। এই মিরপুরেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী নারকীয় গণহত্যা, লুটপাট ও ধর্ষণ চালিয়েছিল। স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীতে সেই মিরপুরে পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসররা চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছে যা মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের জন্য চরম অবমাননাকর। বিসিবির নীরব ভূমিকার অপরাধে বিসিবি চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান পাপনকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। এহেন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে আইসিসি, বিসিবি এবং পাকিস্তান ক্রিকেট টিমকে বাংলাদেশের জনগণের নিকট নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানী ক্রিকেট দলের বিচার ও তাদের সকল ধরনের খেলা বাতিলের দাবিতে বিসিবি ঘেরাওসহ আরোও কঠোর কর্মসূচী পালন করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।"
ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন, "পতাকা বিধি লঙ্ঘন করে খেলার মাঠে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানোর মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিষয়ে বিসিবির নীরবতা আমাদেরকে হতাশ করেছে। বিসিবির চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান পাপনকে অবশ্যই দেশের জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে হবে। একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তান এখনো বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে সংবিধান ও আইন লঙ্ঘন আমরা কখনোই মেনে নিতে পারি না। পাকিস্তান ক্রিকেট দল ও বিসিবির দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।"
সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ বলেন, "পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিসিবির নীরবতাই সমর্থন করে তারা এধরনের ঘটনা সমর্থন করে। সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমরা প্রয়োজনে আইনী পদক্ষেপ নিবো। স্বাধীন বাংলাদেশে একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানের পতাকা ওড়তে দিবে না বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।"
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: