শিক্ষক উৎপল কুমারকে হত্যা, স্বপন কুমারকে লাঞ্চিত এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাকের জমি দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৯জুন) বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে শিক্ষক হত্যা এবং লাঞ্চনার প্রতিবাদ জানান তারা।
মানববন্ধনে ফলিত রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী নয়ন চন্দ্র দাস বলেন, নড়াইলের মির্জাপুরে শিক্ষককে যে জুতার মালা পরানো হয়েছে এটা উনাকে জুতা দেওয়া হয় নাই, পুরো শিক্ষক সমাজকে জুতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ৫১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের কেউ প্রতিবাদ জানায়নি। সমাজে ধর্মান্ধতা জেকে বসেছে। আমাদের নৈতিকতায় পঁচন ধরেছে, পচনটা ধীরে ধীরে বড় আকারে ধারণ করবে।
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাকের ঘটনাটি সমাজের সমন্বিত ব্যর্থতার উপসর্গ। আমাদের বস্তুগত উন্নয়ন হয়েছে মানবিক উন্নয়ন হয়নি। মানবিক উন্নয়ন ছাড়া সকল উন্নয়ন ব্যর্থ। অরুণ স্যারের সমস্যাটি দুই যুগ ধরে চলছে। তার সমস্যার সমসাধান হয়নি কারন তিনি শিক্ষাবিদ তার পেশি শক্তি নেই। শিক্ষক স্বপণ কুমারের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন,মহানবীর যে কোনো অবমাননা আমাকে কষ্ট দেয়। কিন্তু আমার ছাত্র সে যে কোনো ধরনের কথা-ই বলুক না কেন আমি তাকে আশ্রয় দেবো। আমি কখনো উন্মাদদের হাতে তুলে দেব না।
মাইক্রোবায়োলজির সহযোগী অধ্যাপক অমিত কুমার দত্ত বলেন, আমরা তিনটি ঘটনা নিয়ে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু তিনটি ঘটনার একটা বিষয় এক জায়গায় সেটা হলো নির্যাতিত ব্যক্তি শিক্ষক এবং সংখ্যালুঘু। এদের পার্শ্ববর্তী ক্ষমতাসীন লোকেরা এদের উপর অত্যাচার নিপিড়ন করে। পেশা হিসেবে শিক্ষকতা আজ হুমকির মুখে। তাদের জীবনে নিরাপদ নয়। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সংগঠনের মধ্যে তাদের শক্ত ভিত্তি রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, প্রতি বছর-ই আমরা কোনো না কোনো ঘটনা নিয়ে মানববন্ধন করি। কিছু দিন আগে এক শিক্ষার্থী আমাকে বলেন, 'আমার অপরাধ কোথায়। আমি তো ইচ্ছে করে এই ধর্ম বেছে নিইনি, আমার হাতে তো কোনো অপশন দেওয়া ছিল না। আমি যে পরিবারেরই হই না কেন, আমি আমাকে মানুষ হিসেবেই ভাবি। বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে মানসিকতায় উন্নয়ন ঘটেনি।'
তিনি আরও বলেন, আজ আমরা স্বপন কুমার সরকারকে জুতার মালা পরালাম কিন্তু বেশি দিন নেই যে, হয়তোবা আমাদেরও এই অপমান ভোগ করতে হবে। এর আগে বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়ার কারণে শিক্ষক হৃদয় কুণ্ডুকে অপমান ও জেল জরিমানা হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই, তাদের কে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক যাতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।
মানববন্ধনে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী মনু মোহন বাপ্পার সঞ্চালনায় আরোও বক্তব্য দেন মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক শুভ্রা রাণী চন্দ্র, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী, ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষার্থী রনজু হাসান। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী মানববন্ধনে অংশ নেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: