অবশেষে দেশে ‘নিষিদ্ধ’ উচ্চফলনশীল জাতের ভেনামি চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়েছে। যশোর বিসিক শিল্পনগরের এম ইউ সি ফুডস ও সাতক্ষীরার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলন যৌথ উদ্যোগে খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সেখানে প্রথম ধাপে থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা আট লাখ ভেনামি চিংড়ি পোনা সম্প্রতি অবমুক্ত করা হয়েছে।
দেশীয় চিংড়ির উৎপাদন দিন দিন কমে আসছে। যে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে হিমায়িত মৎস্য রপ্তানিতে সুবিধা করতে পারছে না বাংলাদেশ। তাই সরকার পরীক্ষামূলকভাবে উচ্চফলনশীল ভেনামি জাতের বিদেশি চিংড়ি চাষের অনুমতি দিয়েছে, যেটি এত দিন ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কায় নিষিদ্ধ ছিল। বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) অধীনে পরীক্ষামূলকভাবে খুলনার পাইকগাছায় ভেনামি চিংড়ি চাষের প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়েছে।
এম ইউ সি ফুডস লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, ভেনামি চাষের জন্যে বিএফআরআই ছয়টি পুকুর ছেড়ে দিয়েছে। এর মধ্যে চারটি পুকুরে ৮ লাখ চিংড়ি পোনা ছাড়া হয়েছে। চিংড়ি পোনা ছাড়া হয়েছে পঁচিশ দিন আগে। পোনা ছাড়ার ৯০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে চিংড়ি ধরা শুরু হবে।
এ বিষয়ে এম ইউ সি ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শ্যামল দাস বলেন, ‘দেশে বাগদা চিংড়ির উৎপাদন কমে যাচ্ছে। যে কারণে প্রতিবছর চিংড়ি রপ্তানি কমছে। চিংড়ির অভাবে অনেক কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু কোম্পানি ক্ষয়িষ্ণু অবস্থায় রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে উচ্চফলনশীল জাতের ভেনামি চিংড়ি চাষ করা ছাড়া আমাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই।’
শ্যামল দাস আরও বলেন, দেশীয় চিংড়ির উৎপাদন কমে যাওয়ায় ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমোদন পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস অ্যাসোসিয়েশন প্রায় ১২ বছর ধরে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গেছে। অবশেষে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সরকার পরীক্ষামূলকভাবে বিদেশি এই চিংড়ি চাষের অনুমতি দেয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে থাইল্যান্ড থেকে এই চিংড়ির পোনা আনতে কিছুটা দেরি হয়েছে। পোনা আনা হয়েছে বিমানে করে।
মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আট লাখ পোনা থেকে ১৬ মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদিত হবে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে ৬৫ থেকে ৭০ লাখ টাকায় বিক্রি হতে পারে। পোনা আমদানি, খাদ্য, শ্রমিকসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে এই চিংড়ি উৎপাদনে ৪০ লাখ টাকার মতো খরচ হবে। তার মানে, খরচ বাদে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা লাভ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাঁদের আশা, ভেনামি চিংড়ি চাষের মাধ্যমে দেশের মৎস্য খাতে বিপ্লব ঘটবে।
এম ইউ সি ফুডসের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৯ সালে দেশের মোট ২ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকার হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানির মধ্যে তাঁদের কোম্পানির হিস্যা হচ্ছে ১০০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। রপ্তানি আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে উচ্চফলনশীল জাতের ভেনামি চিংড়ি চাষের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তারা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, হংকং, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, ভিয়েতনাম, গ্রিস, পর্তুগাল, সাইপ্রাস, স্পেনসহ এশিয়া ও ইউরোপের ১৫টি দেশে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করে।
রপ্তানিতে বিশেষ অবদানের জন্য প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাসকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দুবার বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) ঘোষণা করে পদক দিয়েছে। এ ছাড়া তিনি ২০১৮ সালে জাতীয় মৎস্য পুরস্কারে রৌপ্যপদক পান।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: