সারা দেশে ভূমিসংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের জন্য উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ভূমি অফিস নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু নিজেই জমি জটিলতার জালে ভূমি অফিস নির্মাণ এই প্রকল্পটি। পাঁচ বছরে প্রকল্পটি সাত বছরে বাড়তি খরচেও অগ্রগতি নেই। অনুমোদনের সাত বছরে অগ্রগতি মাত্র ৬৮.৫৫ শতাংশ। খরচ বেড়েছে প্রায় ২১০ কোটি টাকা।
এখন আবার সময়ে বাড়নোর প্রস্তাব দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও উদ্যোগী মন্ত্রণালয়গুলোর আবদার পূরণ করেও প্রকল্প যথাসময়ে সমাপ্ত হচ্ছে না। রাবারের মতো টানা হচ্ছে বছরের পর বছর। নানা অজুহাতে খরচ ও মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, দেশের ভূমির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় জমির মালিকানা সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য, ভূমির রেকর্ড সংরক্ষণ, খাজনা আদায়, খাস জমি ব্যবহার, পরিচালনা, ভূমি নীতিমালা বাস্তবায়নসহ ভূমিসংক্রান্ত সব কার্যক্রম পরিচালনা করে। কিন্তু দেশের ভূমি অফিসগুলো পুরনো ও জরাজীর্ণ হওয়ায় মূল্যবান রেকর্ড যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। জনসাধারণকে সঠিক সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
দীর্ঘ দিন ধরে দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান নৈরাজ্য ও অরাজকতা বন্ধ করাসহ এর আধুনিকায়নের দাবি ওঠে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয় দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার পদ্ধতির উন্নয়নে ‘উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ (ষষ্ঠ পর্ব) (সংশোধিত)’ ২০১৪ সালের জুলাই থেকে শুরু করে। যা ২০১৯ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। এখানে ১৩৯টি উপজেলা এবং ৫০১টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ করা।
এসব ছাড়াও প্রয়োজনীয় অফিস সরঞ্জাম, আসবাবপত্র ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রও কেনা হবে।
বাস্তবায়ন খরচ ধরা হয় ৫৩৭ কোটি ২৪ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এরপর ব্যয় বাড়ানো হয় প্রায় ২১০ কোটি টাকা। মেয়াদও এক বছর বাড়ানো হয়। কিন্তু কাজের সেই ঢিমেতাল গতি। নতুন ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের পুরো টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়া হচ্ছে।
এটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় গণপূর্ত অধিদফতর বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদকাল বাড়ানো হলেও তাতেও অগ্রগতি নেই। ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থব্যয় হয়েছে ৫১১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বা মোট খরচের ৬৮.৫৪ শতাংশ। আর বাস্তব অগ্রগতি ৬৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ভূমি অফিস নতুন করে ভবণ নির্মাণ। উপজেলা ভূমি অফিস চারতলা ভিতে একতলার পরিবর্তে দুই তলা করা। আর পিডব্লিউডির রেট শিডিউলের কারণে এখন ব্যয় বেড়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় বলছে, বিদ্যমান কোভিডের কারণে একনেকের অনুশাসনের আলোকে প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২১ পর্যন্ত এক বছর বাড়ানো হয়। মামলা, জমির স্বল্পতাসহ নানা জটিলতায় প্রকল্পের মেয়াদে উপজেলা ও ইউনিয়ন মিলে মোট ১১টি ভবন নির্মাণ সম্ভব হবে না। এর মধ্যে পাঁচটি উপজেলা এবং ছয়টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস। ওই ১১টিতে পরিবর্তন নতুন করে এলাকা যুক্ত করা হয়েছে।
রাজধানী ঢাকার গুলশান, তেজগাঁও, মতিঝিল ও লালবাগে এবং শরীয়তপুর সদর উপজেলায় জমি জটিলতায় এবং ভাণ্ডারিয়া, মঠবাড়িয়া, মাদারীপুরের শিবচর, সাতক্ষীরার কলারোয়া এবং শরীয়তপুরের নড়িয়াকে যুক্ত করা হয়েছে। আর ইউনিয়নের মধ্যে যমোর, সিলেট, ঢাকা, কুমিল্লা ও মুন্সীগঞ্জের ইউনিয়নকে বাদ দিয়ে ময়মনসিংহ, পিরোজপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, নেত্রকোনা ও ঝিনাইদহের ইউনিয়নকে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে এখন এটার মেয়াদ আবারো ছয় মাস বাড়িয়ে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধানের মতামত হলো, প্রকল্পটি অনুমোদনের সাত বছর অতিক্রম করেছে। আশানুরূপ কোনো অগ্রগতি নেই। নতুন যেসব এলাকার ভবন নির্মাণ করার জন্য যুক্ত করা হয়েছে সেগুলো প্রস্তাবিত ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সমাপ্ত হবে কি না
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: