মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হওয়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
তার জায়গায় মেয়রের দায়িত্ব পেয়েছেন প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ।
বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে প্রেস ব্রিফিংয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম তার বহিষ্কার হওয়ার তথ্য জানান। পরে জাহাঙ্গীর আলমকে বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
তবে অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ভুয়া টেন্ডার, আরএফকিউ, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ও একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রতি বছর হাট-বাজার ইজারার অর্থ যথাযথভাবে নির্ধারিত খাতে জমা না রাখাসহ নানাবিধ অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এছাড়া ভূমি দখল ও ক্ষতিপূরণ ছাড়া রাস্তা প্রশস্তকরণ সংক্রান্ত প্রাপ্ত অভিযোগটির বিষয়ে সিটি করপোরেশনের মতামত জানতে চাওয়া হলে অদ্যাবধি কোনো মতামত প্রদান করা হয়নি।’
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ‘এই অভিযোগসমূহ- ক্ষমতার অপব্যবহার, বিধিনিষেধ পরিপন্থি কার্যকলাপ, দুর্নীতি ও ইচ্ছাকৃত অপশাসনের শামিল যা করপোরেশন আইনের ধারা ১৩ (১) (ঘ) অনুযায়ী অপসারণযোগ্য অপরাধ। এসব অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে ২০০৯ সালের সিটি করপোরেশন আইনের ১৩ ধারা মতে অপসারণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তাই সিটি করপোরেশন আইনের ধারা ১২ (১) অনুযায়ী, সুষ্ঠু তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের অপর এক আদেশে তিন সদস্যের মেয়র প্যানেল গঠন করা হয়। ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯’ এর ধারা ২০ (২)-এর বিধান অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের তিন কাউন্সিলরের সমন্বয়ে এই প্যানেল গঠন করা হয়।
গত সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ‘কটূক্তি’র একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ১১ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, হেফাজতের প্রয়াত নেতা জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে তার সখ্য ও রাষ্ট্রীয় দুটি সংস্থা নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্য করেন মেয়র জাহাঙ্গীর।
এরপর গাজীপুরে দলের নেতাকর্মীরা তার বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন। তার বহিষ্কার দাবি করে সড়ক অবরোধ করে মিছিল-সমাবেশও করেন নেতাকর্মীরা। দলের নেতাকর্মীরা এ ধরনের কাজকে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ হিসেবে দেখেন। এরপর গত ৩ অক্টোবর ‘দলের স্বার্থপরিপন্থি কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে’ তাকে শোকজ চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
এরপর গত ১৯ নভেম্বর বিকেল ৪টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর থেকে দল ও দলের বাইরে কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: