দেশে প্রতিনিয়ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে ভয়ঙ্কর সব মাদক। লাইসার্জিক অ্যাসিড ডায়েথিলামাইড (এলএসডি) ও হ্যালুসিনোজেনিক ট্রিপটামিন ড্রাগ এন এন-ডাইমাইথাইল্রিপটামিনের (ডিএমটি) পর এবার ‘ম্যাজিক মাশরুম’ নামে নতুন মাদকের সন্ধান পেয়েছে র্যাব।
র্যাবের ভাষ্য, এটি সেবনের পর সেবনকারী কাল্পনিক জগতে বিচরণের পাশাপাশি জীব-জন্তুর সঙ্গে কথা বলা শুরু করে। মাঝে মধ্যে নিজের কাছে অক্সিজেন পাচ্ছে না এমন অনুভব করলে গাছ জড়িয়ে ধরার মতো কর্মকাণ্ডও করে থাকেন। এমনকি নিজেকে মাতৃগর্ভের স্মৃতিতেও চলে যেতে পারে।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা ভয়ঙ্কর এই মাদকচক্রের দুইজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১০ এর একটি দল। তারা হলেন- নাগিব হাসান অর্ণব ও তাইফুর রশিদ জাহিদ।
এসময় উদ্ধার করা হয় মাদক ম্যাজিক মাশরুমের পাঁচটি বারে ১২০টি স্লাইস এবং ২ বোতল বিদেশি মদ। প্রতিটি ম্যাজিক মাশরুম বার ২৫০০ মিলিগ্রাম।
র্যাব জানায়, আটকৃতরা কানাডা থেকে ৩০টি ম্যাজিক মাশরুম কিনে এনে তারা দেশে চড়া মূল্যে বিক্রি করছিলেন। ভয়ঙ্কর এই মাদক কেউ যদি ৫ থেকে ১০ মিলিগ্রাম সেবন করেন তাহলে তার হ্যালুসিনেশন তথা কাল্পনিক জগতে বিচরণ শুরু হয়। এর প্রতিক্রিয়া ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। এই চক্রের সদস্যরা একসঙ্গে ২৪ জন মিলে ম্যাজিক মাশরুমের একটি বার সেবন করতেন। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের মধ্যে এসব মাদক সেবনের প্রবণতা বেশি বলে বলে জানায় র্যাব।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এলিট ফোর্সটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ম্যাজিক মাশরুম একটি সাইকেলেডিক (হ্যালোসিনোজেন) ড্রাগ। এই ড্রাগটি বিভিন্ন খাবারে- কেক ও চকলেট মিক্সড অবস্থায় সেবন করা হয়। এছাড়াও পাউডার ক্যাপসুল হিসেবেও পাওয়া যায়। এই ড্রাগ ব্যবহারে সেবনকারীর নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এমনকি কেউ কেউ ছাদ থেকে ঝাঁপিয়েও পড়তে পারেন। ম্যাজিক মাশরুম সেবনে শারীরিক ক্ষতি ছাড়াও দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে মানসিক রোগ- সাইকোসিস ছাড়াও অবিরাম হ্যালুসিনেশনের কারণ হতে পারে। এই ধরনের অপ্রচলিত ড্রাগের চাহিদা তৈরি হয় মাদক সেবীদের নতুনত্বের প্রতি আগ্রহের মাধ্যমে।’
কমান্ডার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার তাইফুর রশিদ জাহিন প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশে জন্মানো বিভিন্ন মাশরুমের মধ্যে সাইকেডেলিক বা ম্যাজিক মাশরুম আছে কি না তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে ব্যর্থ হয়ে পরে ডার্ক সাইটে ম্যাজিক মাশরুমের খোঁজ করতে শুরু করেন। ডার্ক সাইটে ম্যাজিক মাশরুমের খোঁজ পাওয়ার পর জাহিন বিদেশে অবস্থানরত তার বন্ধু ও পরিচিতদের মাধ্যমে ‘ম্যাজিক মাশরুম’ দেশে নিয়ে আসেন।
র্যাব মুখপাত্র জানান, কানাডায় অবস্থানরত তার বাল্যবন্ধু গ্রেপ্তার নাগিব হাসান অর্ণব অধিক মুনাফা লাভের আশায় তাইফুর রশিদ জাহিনের এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। তাইফুর ম্যাজিক মাশরুমের বারগুলো বাংলাদেশে বিক্রির ব্যবস্থা করেন। গত মে মাসে নাগিব ম্যাজিক মাশরুমের একটি চালান বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে তাইফুর ও নাগিব এই ম্যাজিক বারগুলো বিভিন্নস্থানে বিক্রি করেন। অত্যন্ত বিপজ্জনক এই ম্যাজিক মাশরুম সেবন করে তাইফুর নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং অত্যন্ত বিভৎসভাবে নিজেই নিজের হাতের বিভিন্ন অংশ ধারালো বস্তু দিয়ে কেটে ফেলেন।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার নাগিব হাসান অর্ণব দেশে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এ সময় তাইফুর রশিদ জাহিদ তার সহপাঠী ছিলেন। অর্ণব পরবর্তীতে ২০১৪ সালে কানাডায় চলে যান। কানাডায় একটি ইউনিভার্সিটিতে পড়পাশোনা শেষে সেখানে চাকরি করছিলেন।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার তাইফুরের সঙ্গে যোগসাজসে কানাডা থেকে ৩০টির মতো ম্যাজিক মাশরুম কিনে আনেন অর্ণব। পরে সেগুলো দেশে চড়া মূল্যে বিক্রি করেছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: