পবিত্র রমজানে নিত্যপণ্যের সংকট হবে না: প্রধানমন্ত্রী

সময় ট্রিবিউন | ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৯:৪৯

পবিত্র রমজানে নিত্যপণ্যের সংকট হবে না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো সংকট হবে না বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘রমজানে কোনো কিছুর (অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের) অভাব হবে না। ইতোমধ্যেই সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোন সমস্যা হবে না।’

প্রধানমন্ত্রী আজ শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সাম্প্রতিক জার্মানী সফর সম্পর্কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।

রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ছোলা, খেজুর, চিনিসহ পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য আমদানির ব্যবস্থা রয়েছে।

‘সুতরাং, এটি নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না কারণ আমরা অনেক আগেই এর জন্য ব্যবস্থা করেছি,’ তিনি যোগ করেন।

আগামী পাঁচ বছরের সরকারের কাজের প্রাধান্য তুলে ধরার বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছর কাজ হবে যেহেতু আমাদের উন্নয়নশীল দেশের যাত্রা শুরু হবে ২০২৬ থেকে কাজেই যে সময়টুকু পাব সেটাকে কাজে লাগিয়ে যথাযথভাবে এগিয়ে যাওয়া এবং সেদিকে আমরা মনোযোগ দিয়েছি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কমিটি গঠন করে আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।

উন্নয়ন টেকসই করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছরে তাঁর সরকারের প্রধান গুরুত্বই থাকবে আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতির যেটা হয়েছে সেটা যেন টেকসই হয়। কারণ, যে পর্যায়ে থেকে আমরা উঠে এসেছি সেটা টেকসই করে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। একটা হচ্ছে জাতিসংঘের এসডিজি বাস্তবায়ন ২০৩০ সালের মধ্যে, সেটা আমরা সময় পেয়েছি ২০৩২ সাল পর্যন্ত এবং এরমধ্যে যেগুলো আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য সেগুলো আমরা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জয়লাভের পর টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে এটাই ছিল তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। তিনি গত ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ জার্মানীর মিউনিখ শহরে অনুষ্ঠিত ৬০তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দেন।


মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে মূলত, রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া, সুশীল সমাজ, সরকারি এবং বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। এটি সমকালীন ও ভবিষ্যত নিরাপত্তার স্বার্থে উচ্চ-পর্যায়ের নিয়মিত আলোচনার একটি শীর্ষস্থানীয় ফোরাম হিসেবে বিবেচিত। এ বছরের ফোরামে ৩৫ জনেরও বেশী রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান অংশগ্রহণ করেছেন।
সফরকে ফলপ্রসু উল্লেখ করে তাঁর লিখিত বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিউনিখে আমার এই ফলপ্রসূ সফরের ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের শান্তি, সার্বভৌমত্ব ও সর্বাঙ্গীন নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকার বলিষ্ঠরূপে প্রতিফলিত হয়েছে। দেশের আকার নয় বরং নীতির শক্তিতেই যে মানবতার রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক মুক্তি, এবারের সম্মেলনে আমি এই বার্তাই বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছি।’


পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসমূহের মাধ্যমে বন্ধুপ্রতিম দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সাথে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা আরও দৃঢ় হয়েছে এবং সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্যগণ, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিষয় হচ্ছে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দেশ উন্নত হয়। যে কারণে গত ১৫ বছরে আমরা দেশের উন্নতি করতে পেরেছি। মানুষের  আর্থ সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে, তাদের মন মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে, শিক্ষা-দীক্ষা সব দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক উপরে উঠে আসতে সক্ষম হয়েছে। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আসলে রাজনৈতিক দলের অভাব রয়েছে বাংলাদেশে। আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালে গঠিত হয়। গণমানুষের কথা বলে এবং আন্দোলন সংগ্রাম করেই আওয়ামী লীগ এগিয়ে গেছে। আমি যদি আমার প্রতিপক্ষ কয়েকটি দল দেখি, একটাতো যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাতে ইসলামী। তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। সংবিধান সংশোধন করে এদেরকে ভোটের অধিকার দিয়েছে, এমনকি পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে যে ফিরে গিয়েছিল তাকেও আবার ফিরিয়ে এনেছে এবং তাদেরকে দল করার অধিকার দিয়েছে। জাতির পিতার হত্যাকারীদের জনগণের ভোট চুরি করে খালেদা জিয়া সংসদে বসিয়েছিল। মিলিটারি ডিক্টেটরদের  পকেট থেকে দুটো পার্টি হয়েছে।একটি বিএনপি,  আরেকটি জাতীয় পার্টি। ক্ষমতার উচ্চ আসনে বসে যে দলগুলো তৈরি হয় সেগুলোরতো আসলে মাটি মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না। তাদের শিকড়ের সন্ধান কোথায়। কাজেই তাদের চিন্তা চেতনায় থাকে এমন একটা পরিবেশ হোক কেউ তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। সেটা করতে গিয়ে তারা প্রথম ধরা খেলো ২০০৮ সালের নির্বাচনে। এ নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন করতে পারেনি । সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসন পেল আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় ঐক্য জোট পেল ৩০ টি আসন। এরপর থেকেই শুরু হলো এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা। বারবার সে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু আমরা যেভাবে পারি সেখান থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে পেরেছি।
তিনি বলেন,যে গণতান্ত্রিক ধারা আমরা স্থায়ী করেছি, তার শুভ ফল দেশবাসী পাচ্ছে। তাদের জীবন মান উন্নত হয়েছে । এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিয়ে যাব। ইতোমধ্যে আমরা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১ থেকে ২০৪১ ঘোষণা করেছি। এতে প্রতিটি মানুষের জীবনমান আরো উন্নত হবে এবং বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু আমাদের প্রতিপক্ষরা জ্বালাও পোড়াও, মানুষ খুন, ট্রেন ও বাসে আগুন দেয়া,মা ও শিশুকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতি যদি জনগণের জন্য হয় সে রাজনীতি জনগণের জন্যই এবং জনগণের কল্যাণেই কাজ করে । আর রাজনীতি যদি হয় শুধু ক্ষমতা দখল আর ক্ষমতা উপভোগ করা তাহলে তো মানুষ কিছু পাবে না।
তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তার পরনের শাড়িটি ফ্রেঞ্চ  শিফন  নয় (খালেদা জিয়ার বহুল ব্যবহৃত  দামি শাড়ি)  শফিপুর আনসার একাডেমি  থেকে কেনা একটি তাঁতের শাড়ি, যাকে তিনি শফিপুর শিফন বলে পরিচয় করিয়ে দেন।
তিনি বলেন, এটা বুঝতে হবে যে আমি এদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে আছি। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি ও তিনি ব্যবহার করেন এবং এর পেটেন্ট রাইটসের জন্য আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরা তাঁকে যেমন অভিনন্দিত করেছেন তেমনি মিউনিখ সম্মেলনে গিয়েও অভিনন্দনে ভ’ষিত হয়েছেন এবং নির্বাচন নিয়ে কেউ যেমন কোন উদ্বেগ প্রকাশ করেনি তেমনি কোন প্রশ্ন তোলা হয়নি বলেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান।

তিনি বলেন,“নির্বাচন নিয়ে তাদের কোন উদ্বেগও নেই প্রশ্নও নেই। নির্বাচন নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। বেশির ভাগই আলোচনা হয়েছে দ্বিপাক্ষিক। আমরা যে ১শ’টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি তাতে তাদের বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে কেউ কোন কথা বলেনি। কারণ তারা নিজেরাও জানতো যে নির্বাচনে আমি জিতে আসবো। আর এটা যারা চায় নাই তারাই কথা ওঠায় বা প্রশ্ন তোলে।
নির্বাচন দিয়ে সমালোচকদের এভাবেও প্রতিউত্তর দেন তিনি। ‘একটি দেশে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় ১২/১৩ দিন সময় লাগলেও সে ইলেকশন ফ্রি এন্ড ফেয়ার আর বাংলাদেশে নির্বাচনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে রেজাল্ট এসে গেল সেটা নাকি ফ্রি এন্ড ফেয়ার নয়। কাজেই এই রোগের কোন ওষুধ আমাদের কাছে নাই’। এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ষড়যন্ত্র ছিল (নির্বাচন নিয়ে)। ষড়যন্ত্র তো আছেই। ষড়যন্ত্র প্রত্যেকবারই হচ্ছে। বার বার করেছে। নির্বাচন যাতে না হয়, বিরাট চক্রান্ত ছিল। ২৮ অক্টোবরের ঘটনা আপনারা জানেন। এগুলো হঠাৎ করে নয়, পরিকল্পিতভাবে করেছে। নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না বুঝে গেছে। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল। তাই তারা পরিকল্পনা করেছে, দ্রব্যমূল্য বাড়বে আর তারা আন্দোলন করবে।
তিনি প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের প্রসঙ্গ ধরে বলেন, ডিম লুকিয়ে রেখে দাম বাড়ানোর কথা তো আপনিই বললেন। আপনার কি মনে হয় না, যারা সরকার উৎখাতে আন্দোলন করে তাদেরও এখানে কারসাজি আছে? এর আগে দেখলাম পেঁয়াজের খুব অভাব। পরে দেখা গেলো বস্তাকে বস্তা পেঁয়াজ পানিতে ফেলে দিচ্ছে।
আর মিয়ানমারের ব্যাপারে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি আগেই বলেছি ধৈর্য ধরে এগোনো এবং তাদের সাথে আলোচনাও করছি। দেখা যাক কি হয়।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


জনপ্রিয় খবর