চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করা হবে। টানেলের ভেতর দিয়ে যান চলাচল সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে পরদিন রোববার ভোর ৬টা থেকে।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বনানীস্থ সেতুভবনে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ব্রিফিংয়ে সেতুমন্ত্রী জানান, ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধন করার পর আনোয়ারা প্রান্তে ইপিজেড এর মাঠে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন।
দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলকে আগলে রেখেছে যে কর্ণফুলী তার বুক চিঁড়ে তৈরি ৩.৩১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ। যার মধ্য দিয়ে খুলে যাবে বাণিজ্যের বহুমুখী নবদুয়ার। দেশের এ প্রবেশদ্বারে ব্যবসা বাণিজ্যের ভিত্তি আরও মজবুত করতে আলাদা শক্তি যোগাবে নবনির্মিত এ টানেল।
৩৩,৯০৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাণিজ্যিক রাজধানীতে আরও স্থাপন হবে নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা, পরিধি বাড়বে আমদানি রপ্তানির, গতি পাবে অর্থনীতি। সমৃদ্ধির অধিগম্যতায় প্রবেশ করবে চট্টগ্রাম। দেশের জিডিপিতে বার্ষিক শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়াতেও সাহায্য করবে টানেলটি।
এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ১৪ অক্টোবর ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংকে সাথে নিয়ে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার অর্থ সহায়তা দেয় ৪ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা ও চায়না এক্সিম ব্যাংক থেকে সহায়তা নেওয়া হয় ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকার।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অধীনে এরমধ্যে টানেলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। যার বর্ণাঢ্য উদ্বোধন হবে আগামী শনিবার। এ বিষয় সকালে সেতু ভবনে ব্রিফিংয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম মূল শহরের সাথে সাগর ও বিমান বন্দরেরও দূরত্ব কমে আসবে। যোগাযোগে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। অর্থনীতির গতিপথ আরও গতিশীল করতে এই টানেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
চট্টগ্রাম শহরের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ও আধুনিকায়ন করাই এই টানেলটি নির্মাণের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, এতে খরচ ও সময় বাঁচবে।
সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, টানেল নির্মাণকে ঘিরে চট্টগ্রাম শহরকে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ বা ‘এক নগর দুই শহর’ এর মডেলে গড়ে তোলা হবে।
দৈনিক ১৭ হাজার ২৬০ ও বছরে ৭৬ লাখ যানবাহন চলাচল করতে পারবে এ পথে। নদীর মধ্যভাগে কর্ণফুলী সুড়ঙ্গ সড়কটি অবস্থান করবে মাটি থেকে ১৫০ ফুট গভীরে। এর নির্মাণ কাজ শেষ করে চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)। এই সুড়ঙ্গটি কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করবে। এটিই হবে বাংলাদেশের প্রথম টানেল এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: