দুই যুগ আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশকারী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) পাহাড়ে হানাহানি বন্ধে দিয়েছে নতুন চুক্তির প্রস্তাব। সরকারের কাছে পেশের জন্য মধ্যস্ততাকারীর মাধ্যমে এই লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি।
গত ৯ জুন খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার ২ নম্বর চেঙ্গী ইউনিয়নের বড়কলক এলাকায় এক অনুষ্ঠানে ইউপিডিএফের পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতা উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা এ দাবিনামা হস্তান্তর করেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. এমদাদুল ইসলামের কাছে।
প্রস্তাবে বর্তমান শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণের দাবি করা হয়েছে। প্রয়োজনে পাহাড়ের সব পক্ষকে নিয়ে সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসতেও অনাপত্তি জানানো হয়েছে। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও রক্তপাত বন্ধে চেষ্টা করছেন জানালেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এখনই ইউপিডিএফের এই প্রস্তাবের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পাহাড়ে বিদ্রোহ আর রক্তক্ষয় অবসানে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) এর সঙ্গে শান্তি চুক্তি করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
তখন জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) নেতৃত্বাধীন জেএসএসের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ ছিল পাহাড়িরা। কিন্তু চুক্তির বিরোধিতা করে পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ১৯৯৮ সালে প্রসিত বিকাশ খিসার নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ইউপিডিএফ।
তারপর জেএসএস-ইউপিডিএফ দ্বন্দ্বে পাহাড়ে অনেক রক্ত ঝরেছে। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে সন্তু লারমার ক্ষোভের মধ্যে পাহাড়ি সংগঠনগুলোর মধ্যেও দেখা দেয় বিভাজন। জেএসএস আবার ভেঙে গড়ে ওঠে জেএসএস (এমএন লারমা)। প্রসিত বিকাশ খিসার দল ভেঙেও গড়ে ওঠে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে আরেকটি সংগঠন।
এরপর গত কয়েক বছরে পাহাড়ি সংগঠনগুলোর মধ্যে অশান্তি চলার মধ্যেই শান্তির প্রস্তাব নিয়ে এল ইউপিডিএফ।
ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি ইউনিটের সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, সরকারের ‘প্রতিনিধিদের’ সঙ্গে ২০১৯ সাল থেকে কয়েক দফা আলোচনার পর এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
কেন এখন এই প্রস্তাব- প্রশ্নে তিনি বলেন, “পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। এত বছরেও চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। চুক্তির কিছু অসঙ্গতি দূর করারও বিষয় আছে। নানা কারণে পরিস্থিতি খুব নাজুক। তাই আমরা নতুন চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছি।”
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “আপনি যেমন শুনেছেন, আমিও শুনতে পাচ্ছি। অগ্রগতি তখনই বলি, যখন একটা কিছু হয়। এটা এখনো লিকুইড স্টেজে। একটা কিছু ফর্ম করুক, তারপর বলব।
তিনি বলেন, “যা করার... পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই চেষ্টা করছি। পাহাড়ে রক্তপাত বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করছি।”
প্রস্তাবটি পেয়েছেন কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “আমরা এখনই এ বিষয়ে বলতে পারছি না।”
চুক্তির আকারে পেশ করা ইউপিডিএফের দাবিনামায় আটটি ভাগ আছে। ৬৬ পৃষ্ঠার ওই প্রস্তাবে মোট ৮৭টি দাবি এবং প্রত্যেক দাবির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
দাবিনামার ভাগগুলো হলো- সাংবিধানিক অবস্থা, সাংবিধানিক আইন ব্যতিত অন্যান্য কতিপয় আইনের রহিতকরণ ও সংশোধন, সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ১৯৮৮ এর সংস্কার, পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন সমূহের সংস্কার, পুলিশ বাহিনী ও প্রশাসন, পুনর্বাসন মামলা প্রত্যাহারসহ অন্যান্য বিষয় এবং চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি ও চুক্তি বলবৎকরণ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: