নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রথম স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে স্বামী স্বপন কুমার বিশ্বাসকে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া তাকে কনডেম সেল থেকে নরমাল সেলে স্থানান্তর করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
এদিকে আদালতে স্বপনের পক্ষে বিনা ফিতে মামলা পরিচালনা করায় সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান আপিল বিভাগ। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিনা ফিতে তিনি মামলা পরিচালনা করেছেন একথাটিও উল্লেখ থাকবে বলে জানান বিচারপতিরা।
এর আগে গত ৮ জুলাই শুনানিতে ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, স্ত্রী স্বপ্না ঘোষকে পূর্বপরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়নি। পারিবারিক কলহের এক পর্যায়ে উত্তেজিত অবস্থায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে আসামি স্বপন কুমার বিশ্বাসকে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন দণ্ড কোনোটাই দেয়া সমীচীন হবে না। এ মামলায় প্যানেল কোডের ৩০৪/২ ধারা অনুযায়ী আসামির সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছরের বেশি হতে পারে না।
সোমবার আদালতে খন্দকার মাহবুব হোসেনকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরসেদ।
কিন্তু খন্দকার মাহবুব হোসেনের মতো একজন বড় আইনজীবী কেন বিনা পয়সায় স্বপনের মামলাটি লড়ছেন। এর জবাবে তিনি বলেন, কারাগার থেকে স্বপন কুমার বিশ্বাস নামে ওই ফাঁসির আসামির অনেক কাকুতি মিনতির কারণে এমনটা করেছি।
ওই আসামি চিঠিতে লিখেছিলেন তিনি দরিদ্র মানুষ। আইনজীবী রেখে মামলা পরিচালনা করার সামর্থ্য তার নেই। এ কারণে তার মামলাটি বিনামূল্যে পরিচালনা করছি। এর আগেও কিছু মামলা আমি বিনামূল্যে পরিচালনা করেছি।
এ মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, প্রথম স্ত্রী স্বপ্না ঘোষকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করা নিয়ে ২০০৬ সালের ১৬ অক্টোবর পারিবারিক কলহের এক পর্যায়ে স্ত্রীর মাথায় আঘাত করেন স্বপন। এতে স্বপ্না ঘোষ মারা যান। এ হত্যাকাণ্ডের মামলায় ২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর নীলফামারীর দায়রা জজ আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
এরপর ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল বিচারপতি সাহিদুল ইসলাম ও বিচারপতি আব্দুর রবের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামি স্বপন কুমার বিশ্বাস আপিল করেন। আপিল বিভাগে শুনানি শেষে রায়ের জন্য ১২ জুলাই দিন ধার্য করেন আদালত।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: