পিরোজপুরে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ফাতিমা আক্তারকে (ইতি) ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পাওয়া দুইজনকে খালাস দিয়েছে হাইকোর্ট।
বুধবার (৩০ জুন) আপিল এবং ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এ এসএম আব্দুল মবিনের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই রায় দেন।
খালাসপ্রাপ্ত দুইজন হলেন মেহেদি হাসান স্বপন (২২) ও সুমন জোমাদ্দার (২০)। এ মামলায় ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম কিবরিয়া দুইজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
ওই রায়ের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসার পর, ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিল শুনানি নিয়ে আদালত আজ এই রায় দেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ফাতেমা জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামের ফুল মিয়ার মেয়ে। সে একই উপজেলার বুখাইতলা-বান্ধবপাড়ায় নানা বাড়িতে থেকে স্থানীয় হাতেম আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো।
২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর সকালে গরুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য ওই বিদ্যালয়ের মাঠে যায় ফাতেমা। দুপুরেও ঘরে না ফেরায় স্বজনরা তাকে খুঁজতে শুরু করেন। পরদিন দুপুরে বাড়ির পাশের একটি বাগানে তার উলঙ্গ ও ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পিরোজপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। তদন্তে দেখা যায়, শিশুটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস এ ঘটনায় ফাতেমার মামাতো ভাই মেহেদী হাসান স্বপনের সংশ্লিষ্টতা পান। পরে মেহেদী ও তার সহযোগী সুমন জমাদ্দারকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
সুমন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, তিনি ও মেহেদী মেয়েটিকে বাগডাসা দেখানোর লোভ দেখিয়ে বাগানে নিয়ে প্রথমে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি যাতে জানাজানি না হয় সেজন্য পরে তারা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে শিশুটিকে হত্যা করেন।
এ মামলায় তদন্ত শেষ করে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা। ৭ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
আসামি সুমন জমাদ্দার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরবর্তী সময়ে এই জবানবন্দি প্রত্যাহার করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ সর্বমোট ১৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করে। অপরপক্ষে আসামিদ্বয় ১১ জন সাক্ষী হাজির করে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: