সম্প্রতি ইংরেজী দৈনিক দ্যা ডেইলী স্টারে 'Oxford of the East: A moniker that couldn't ring hollower' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের একটি ব্যঙ্গচিত্রও আঁকা হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যগুলোকে খণ্ডিত ও বিভ্রান্তিকর দাবি করে এটিকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গঠনমূলক সমালোচনা সহ্য করার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শ্রদ্ধাশীল । একইসঙ্গে, কেউ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সমালোচনার রীতিনীতি ও মূল্যবোধ উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত আক্রমণ বা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মানহানি ঘটায় তাহলে দেশের আইন যে তার প্রতিকার দেয় সে বিষয়েও কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ।
ইংরেজী দৈনিকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তুলনা করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাকালে যুক্তরােজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় যখন গবেষণা করছে তখন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাস্তার উপর বাঁশ দিয়ে বহিরাগতদের চলাচল সীমতি করতে ব্যস্ত।প্রতিবেদনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ক্যাফেটেরিয়াতে স্বল্প মূল্যে পাওয়া চা, চপ, সিঙ্গারা নিয়ে ২০১৯ সালে নবীন শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপাচার্যের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা করা হয়।
এর প্রতিবাদে জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেদিনের বক্তব্যকে খন্ডিতভাবে প্রচার করা হয়েছে । যমুনা টেলিভিশনের এক সাংবাদিক উপাচার্যের বক্তব্যের মূল অংশ কাটছাট করে এবং ক্ষেত্রবিশেষে বাক্য ও শব্দ অবলোপন করে ক্যাফেটেরিয়ার বিভিন্ন খাবার আইটেমের মূল্যমান সংক্রান্ত বক্তব্যের অংশবিশেষ নিয়ে ১৫-২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল করে। সেদিন উপাচার্য মূলত নবাগত শিক্ষার্থীদের সাথে হাস্যরসে ক্যাফেটেরিয়ার সাধারণ, স্বল্পমূল্যের খাবার মেন্যু ও সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধার অবারিত সেবাকার্যক্রমের কথাগুলো বলেছিলেন । বস্তুত সর্বজনীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমতাভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ঐতিহ্য হিসেবে উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের নিজেদের জীবনে এসবের প্রতিফলনের পরামর্শ দেন ।
এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ ব্যঙ্গ বিদ্রুপ' রূপে উপস্থাপন করেছেন। তখন সেটিকে বৃহত্তর সমাজের কিছু মানুষের ভিন্ন রুচি ও ভিন্ন মূল্যবোধ হিসেবে ধরে আমলে নেওয়া হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি, কোনো কোনো দায়িত্বশীল মহলও বিভিন্নভাবে সেসব যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করছেন, যা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। কিছু অসাধুচক্র কোনো অপতথ্য বার বার ব্যবহার করে সেটিকে তথ্যে পরিণত করতে চায়: যা জনমনে অনেক সময় বিভ্রান্তি তৈরি করে।
ইংরেজী দৈনিকের প্রতিবেদনে করোনা মহামারীর সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা তুলে ধরে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে সাড়া দেয়নি; কোভিড-১৯ টেস্টিং কার্যক্রম শুরু করে বেশ বিলম্বে; কিছুদিন পর আবার ল্যাব বন্ধ করে দেয়; এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ডজনেরও অধিক আরটি-পিসিআর মেশিন থাকা সত্ত্বেও সেসব দিয়ে জাতির মহাদুর্যোগে সেবাকার্যক্রম পরিচালনা না করে বসে আছে।
এটিকে বিভ্রান্তিকর দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোনো বিলম্ব ছাড়াই ১৯ মার্চ ২০২০ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞানী, জিন প্রকৌশলী ও প্রাণরসায়নবিদদের নিয়ে প্রথম "COVID-19 (Pandemic) রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি” গঠন করা হয়। তিনটি বিভাগের ল্যাবে পঠন-পাঠন ও নিয়মিত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ০১ (এক) টি করে মোট ০৩ (তিন) টি RT-PCR মেশিন ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যগুলো Conventional PCR মেশিন, সেগুলো কোভিড টেস্ট করার উপযোগী নয় । কমিটির মাধ্যমে বিভাগগুলো থেকে ০৩টি RT-PCR মেশিন এনে CARS ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব উদ্যোগে বায়োসেফটি নিশ্চিত করে তিন সপ্তাহে তৈরি করা হলো COVID-19 Testing ল্যাব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন পাওয়ার পর ৫ মে ২০২০ এটির উদ্বোধন করা হয়। প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং কয়েকজন শিক্ষক দ্বারা এটি পরিচালিত হতে থাকে।কোভিড-১৯ টেস্ট এর জন্য হাসপাতাল বা ডেডিকেটেড ল্যাবের ন্যায় কোনো ল্যাব ও প্রশিক্ষিত জনবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল না।এ পরিপ্রেক্ষিতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানিয়ে টেস্টিং কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হয়েছিল; ল্যাব বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। প্রায় দশদিন পর যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে, জনবল সংগ্রহ করে পুনরায় টেস্টিং সেবাকার্যক্রম শুরু হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অক্সফোর্ড বা জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মৌলিক গবেষণা পরিচালনা করে টিকা/ ঔষধ আবিষ্কার বা টেস্টিং কিট উদ্ভাবন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারেনি। তবে এর কারণ বোধকরি অনেকেই জানেন। উপাচার্যের সিনেট অভিভাষণে-এর প্রতিফলন থাকে।
বিজ্ঞপ্ততিতে, বিভ্রান্তিকর ও খণ্ডিত তথ্য ব্যবহার করে কোনো বিশেষ মহল যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করতে এবং মানহানি না ঘটাতে পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সকলের সদয় সহযোগিতা প্রত্যাশা করছেন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: