ঝালকাঠিতে স্কুল বন্ধের সুযোগে খেলার মাঠেই করা হচ্ছে ধান চাষ। নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার পরিবেশ। অভিযোগ উঠেছে, এ কাজে সহায়তা করছেন, স্থানীয় যুবলীগ নেতা। জড়িত রয়েছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিও। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। বিদ্যালয়ের মাঠে ধান চাষ বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের খেলা-ধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এ সুযোগে তিনটি বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ধান চাষ করছেন ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক মাইনুল ইসলাম।
বিদ্যালয় তিনটি হচ্ছে—দক্ষিণ রাজাপুর (বলাই বাড়ি) ইউসুফ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও এর পাশে অবস্থিত দক্ষিণ রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দুটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একই মাঠে খেলাধুলা করে। এই মাঠে ট্রাক্টর দিয়ে চষে বীজতলার জন্য জমি প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া পাশের ফিরোজা মজিদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এরই মধ্যে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এ ঘটনায় যুবলীগ নেতার ভয়ে কেউ কোনো প্রতিবাদ না করলেও শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে ফিরোজা মজিদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে প্রথম বীজতলা তৈরির কাজ শুরু করেন দুই অফিস সহকারী (দপ্তরি) হেমায়েত হোসেন ও সুলতান হোসেন। আর পাশের ইউসুফ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করেন স্থানীয় কৃষক মোশারফ আলী হাওলাদার।
কৃষক মোশারফ আলী বলেন, ইউসুফ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিকের কাছ থেকে মাইনুল ইসলাম জমি বর্গা নিয়েছেন। তাই আমি মাইনুলের নির্দেশে জমি চাষ করছি।
তবে প্রধান শিক্ষক আবু বকরএসব অস্বীকার করে বলেন, আমি কারো কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নিইনি। জমি চাষাবাদের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। সব করেছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলিম আল মাসুদ।
আলিম আল মাসুদ বলেন, এখন তো বিদ্যালয় বন্ধ। তাই কৃষকদের সুবিধার জন্য বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে। এর সুবিধা স্থানীয় সবাই পাবে।
এদিকে ফিরোজা মজিদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম ফিরোজ জামান বলেন, দপ্তরিরা আমার অনুমতি নিয়েই বীজতলা তৈরি করেছে। বর্ষা মৌসুমে এলাকায় বীজের সংকট হয়। তাই বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় মাঠে চাষ করার অনুমতি দিয়েছি।
অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা মাইনুল ইসলাম বলেন, কারো কাছ থেকে জমি বর্গা নেওয়া হয়নি। শুধু বীজ তৈরির জন্য জমি চাষ করা হয়েছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধ করায় ইউসুফ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠের চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছি। আর ফিরোজা মজিদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠের বীজতলা একটু বড় হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে তা তুলে নিয়ে মাঠ পরিষ্কার করে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম ডি আবুল বাশার তালুকদার বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোক্তার হোসেন বলছেন, স্কুল মাঠে ধান চাষের সুযোগ নেই। এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: