বেরিয়ে এলো চিত্রনায়িকা শিমু হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য

সময় ট্রিবিউন | ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:৩৩

সংগৃহীত

রাগারাগির একপর্যায়ে স্ত্রী রাইমা ইসলাম শিমুর ওপর একসঙ্গে চড়াও হন স্বামী নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ। ফরহাদ ধরেন শিমুর গলা, আর নোবেল দুই হাত। একপর্যায়ে ফ্লোরে পড়ে যান শিমু। এ সময় শিমুর গলায় পা দিয়ে দাঁড়ান নোবেল। এতে প্রস্রাবও করে দেন শিমু। একসময় নিস্তেজ হয়ে যান চিত্রনায়িকা। এভাবেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

সম্প্রতি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শিমু হত্যার ঘটনায় স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ও তার বাল্যবন্ধু এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে। সেই অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে এমন ভয়ানক তথ্য।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। বর্তমানে গ্রেফতার দুই আসামি শাখাওয়াত ও ফরহাদ কারাগারে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বাবা-মাকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতেন নায়িকা শিমু। তাদের বাসার পাশে ছিল নোবেলের বাসা। ফলে নিয়মিত দেখা হতো। একসময় তাদের মাঝে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। পরে বাবা-মায়ের অমতে শিমুকে বিয়ে করেন নোবেল। ফলে নোবেলের বাবা-মা আলাদা বসবাস করতে থাকেন। রাজধানীর গ্রিনরোডে স্ত্রী-সন্তানসহ বসবাস করতেন নোবেল।

বিয়ের পর বিভিন্ন বিষয়ে মনোমালিন্য দেখা দেয় দুজনের। এর মধ্যে নোবেল শিমুকে সিনেমায় অভিনয় করতে নিষেধ করেন। তার কথামতো সিনেমা ছেড়ে বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলে চাকরি নেন শিমু। চাকরি বিষয়টিও ভালোভাবে নেননি নোবেল। এ নিয়ে নোবেল ও শিমুর মধ্যে চলছিল কলহ। এ কলহের কথা নোবেল তার বাল্যবন্ধু ফরহাদের সঙ্গে শেয়ার করতেন।

চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি সকাল সোয়া ৮টায় নোবেলের বাসায় যান ফরহাদ। এ সময় ফরহাদকে ড্রইংরুমে বসতে দিয়ে নোবেলকে জানান শিমু। নোবেল গিয়ে ফরহাদের সঙ্গে দেখা করে রান্নাঘরে চা বানাতে যান।

এ সময় বেডরুমে বসে মোবাইল দেখছিলেন শিমু। তখন নোবেল সেই মোবাইল দেখতে চান। কিন্তু শিমু দেখাতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। হইচই শুনে ফরহাদ উঠে শিমুর রুমে যান। তখন নোবেল ফরহাদকে বলেন, শিমুকে ধর, ওকে আজ মেরেই ফেলব।

কথামতো ফরহাদ ধরতে গেলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন শিমু। এরপর নোবেল প্রথমে শিমুর গলা ধরতে গেলে তাকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। এবার ফরহাদকে শিমুর গলা ধরার জন্য বলেন নোবেল। ফরহাদ গলা আর নোবেল দুই হাত চেপে ধরেন। একপর্যায়ে নিচে পড়ে যান শিমু। নোবেল শিমুর গলার ওপর পা দিয়ে দাঁড়ান। এতে প্রস্রাব করে দেন শিমু। একসময় শিমু নিস্তেজ হয়ে পড়েন।

এ সময় নোবেল ফরহাদকে দেখতে বলেন শিমু বেঁচে আছে কি না। ফরহাদ শিমুর হাত দেখে বলেন, শিমু বেঁচে নেই। তখন তারা দুজনে মিলে মরদেহ লুকানোর পরিকল্পনা করতে থাকেন।

একপর্যায়ে নোবেল রান্নাঘর থেকে দুটি পাটের বস্তা এবং ফ্রিজের ওপর থেকে মিষ্টির প্যাকেট বাঁধার প্লাস্টিকের রশি আনেন। ফরহাদ শিমুর মাথা উঁচু করে ধরেন। আর নোবেল একটি বস্তার ভেতর শিমুর মাথার অংশ এবং আরেকটি বস্তায় পায়ের অংশ ভরেন।

এরপর প্লাস্টিকের রশি দিয়ে দুটি বস্তা একসঙ্গে সেলাই করে দেন নোবেল। পরে শিমুর মরদেহ নোবেলের গাড়ির পেছনের সিটে উঠান ফরহাদ। এরপর কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন আলীপুর ব্রিজ এলাকার একটি ঝোপে মরদেহ ফেলে দেন তারা।

মরদেহের পরিচয় পেয়েই রাইমা ইসলাম শিমুর কলাবাগানের বাসায় যায় পুলিশ। নোবেল সে সময় বাসাতেই ছিলেন। পুলিশের প্রশ্নের জবাবে নোবেল বলেন, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় শিমু বলেছিলেন, তিনি মাওয়া যাচ্ছেন। স্বামীর এ বক্তব্যে খটকা লাগে পুলিশের। কারণ, শিমুর পরনে ছিল সালোয়ার-কামিজ। ব্যক্তিজীবনে পরিপাটি হয়ে বাইরে যেতেন তিনি। তাই বেড়াতে গেলে তার এমন পোশাক পরার কথা নয়।

এরপর পুলিশ তাদের ব্যক্তিগত গাড়িটি দেখতে যায়। গাড়ির পেছনে থাকা সুতার বান্ডিল দেখে শিমুর হত্যাকাণ্ডে স্বামীর সম্পৃক্ততার বিষয়ে সন্দেহ জোরালো হয় পুলিশের। শিমুকে বস্তায় ভরে যে সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল, গাড়ির পেছনে পাওয়া যায় একই সুতা। গাড়িটি সেদিনই ধোয়া হয়েছিল। গাড়ির ভেতরের দুর্গন্ধ দূর করতে ছিটানো হয়েছিল ব্লিচিং পাউডার।

ঘটনার পর রাতেই কলাবাগান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। জিডিতে বলা হয়, স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর কলাবাগান এলাকার বাসায় থাকতেন শিমু। ১৬ জানুয়ারি সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি আর ফেরেননি। তার মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যায়।

পরদিন ১৭ জানুয়ারি আলীপুর এলাকার রাস্তার পাশ থেকে শিমুর বস্তাবন্দি খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে তার পরিচয় মিলছিল না। পরে ওইদিন রাতে তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে নাম-পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

এরপর ১৮ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় নোবেল ও তার বাল্যবন্ধুর বিরুদ্ধে মামলা করেন শিমুর ভাই হারুনুর রশীদ। এ ছাড়া মামলায় বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। ওইদিন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া বেগম আসামিদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে এ মামলার দুই আসামি ২০ জানুয়ারি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

শিমু সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন ১৯৯৮ সালে। ২০০৪ সাল পর্যন্ত নিয়মিত বড় পর্দায় দেখা যায় তাকে। প্রথম সারির পরিচালকদের সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন শিমু। কয়েক বছর ধরে তিনি নাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


  1. জামায়াত নেতা আজহারুলের মুক্তির দাবিতে শেরপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ
    জামায়াত নেতা আজহারুলের মুক্তির দাবিতে শেরপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ
  1. শেরপুরে হরতাল পালন ও রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করেছে ছাত্রলীগ
    শেরপুরে হরতাল পালন ও রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করেছে ছাত্রলীগ
  1. শেরপুরে বিএনপি নেতা মাসুদের বিরুদ্ধে প্রকাশিত মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদের প্রতিবাদ
    শেরপুরে বিএনপি নেতা মাসুদের বিরুদ্ধে প্রকাশিত মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদের প্রতিবাদ
  1. শেরপুরে সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে প্রেসক্লাবের স্মারকলিপি প্রদান
    শেরপুরে সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে প্রেসক্লাবের স্মারকলিপি প্রদান
  1. শেখ হাসিনার আসন্ন 'ভার্চুয়াল বৈঠক' ঘিরে আওয়ামী লীগে কী চলছে
    শেখ হাসিনার আসন্ন 'ভার্চুয়াল বৈঠক' ঘিরে আওয়ামী লীগে কী চলছে
  1. শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে হত্যা মামলার আসামি ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার ২
    শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে হত্যা মামলার আসামি ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার ২
  1. মার্চ ফর ইউনিটি : শহীদ মিনারে সমাবেশ শুরু
    মার্চ ফর ইউনিটি : শহীদ মিনারে সমাবেশ শুরু
  1. ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি নেতা মাসুদ
    ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি নেতা মাসুদ
  1. শেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে কফি চাষ
    শেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে কফি চাষ
  1. সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার মারা গেছেন
    সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার মারা গেছেন
জনপ্রিয় খবর