কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিভিন্ন এনজিও ও মাইক্রো ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের নামে ঋণ তুলে কিস্তির টাকা পরিশোধ না করে ২৫ লাখ টাকাসহ ১২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে উধাও হয়ে গেছে মোসা: মাসুকা বেগম (৩৫) নামে এক নারী প্রতারক।
প্রতারণার এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেছে তার মা-বোন, স্বামীসহ পরিবারের লোকজন। মাসুকা উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের খিরনশাল গ্রামের উত্তরপাড়ার তাজুল ইসলামের মেয়ে ও একই গ্রামের আব্দুল খালেকের স্ত্রী। এ ঘটনায় আবুল কালাম সোহেল নামে এক ভুক্তভোগি মাসুকা ও তার স্বামী আব্দুল খালেক, ছেলে মাসুদ ভাই সাদ্দাম, সুমন ও মা হাজেরা বেগমকে বাদী করে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্র ও সরেজমিন পরিদর্শনে স্থানীয় জানা গেছে, মাসুকা বেগম তার এক ভাইকে বিদেশ পাঠানো ও বিদেশে থাকা অপর ভাইয়ের ব্যবসা-বানিজ্য প্রসারিত করার কথা বলে প্রতিবেশি মৃত ইউসুফ এর ছেলে আবুল কালাম সোহেলের কাছ থেকে ১ সপ্তাহের কথা বলে ১২ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার বন্ধকের দেয়ার জন্য নিয়ে যায়। পরে ওই স্বর্ণালঙ্কারগুলো বন্ধক থেকে ছাড়িয়ে আনার কথা বলে সোহেলের মায়ের নামে এনজিওসহ বিভিন্ন সমিতি থেকে অন্তত ৭ লাখ টাকার ঋণ তুলে আত্মসাত করে নেয়। এছাড়া নানা প্রলোভন দেখিয়ে একই গ্রামের শাহিনুর, তাসলিমা বেগম, আয়েশা বেগম, আতর ইসলাম, রুজিনা বেগম, হনুফা বেগম, নিলুফা বেগম, রতনা বেগম, পারভিন বেগম, রাজিয়া বেগম, তাহেরা বেগম, মাহফুজা বেগম, মানজুমা বেগম, আব্দুল খালেকসহ কমপক্ষে ২০ জনের নামে ব্র্যাক, ব্যুরো বাংলাদেশ, এসএসএস, প্রত্যাশীসহ বিভিন্ন এনজিও এবং মাইক্রো ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন পরিমানে ঋণ উত্তোলন করে। ঋণের এ টাকাগুলো উত্তোলন করে মাসুকা প্রথম প্রথম বিভিন্ন নামে উত্তোলনকৃত সে ঋণের বিপরীতে সাপ্তাহিক বা মাসিক হারে দুয়েক কিস্তি নিজে পরিশোধ করে। পরবর্তীতে মাসুকা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় ও উপরে উল্লেখিত ব্যক্তিদের নামে উত্তোলনকৃত কারো ঋণই পরিশোধ না করায় ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাঠ কর্মকর্তারা এসে যাদের নামে ঋণ দেয়া হয়েছে তাদের থেকে ঋণের কিস্তি আদায় করে। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে মাসুকা পলাতক থাকার পর এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থতার ধারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়ায় ভুক্তভোগিরা বিষয়টি স্থানীয় মেম্বারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে তারা সামাজিকভাবে মাসুকার পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করলে মাসুকাকে হাজির করে তার পরিবার। এরপর কয়েক দফা গ্রাম্য শালিসে মাসুকা টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে খুব শীঘ্রই পাওনাদারদের টাকা দিয়ে দিবে মর্মে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায়। এরপর কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও ভুক্তভোগিরা টাকা না পেয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগ দায়েরের পর থানার এসআই তোফায়েল ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্তারিত জেনে গত শুক্রবার (২৬ আগস্ট) বিষয়টি নিয়ে থানায় বৈঠকে বসার নিমিত্তে উভয় পক্ষকে থানায় আসতে বলে। কিন্তু এতে বিবাদী পক্ষ অনুপস্থিত থাকায় বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় ভুক্তভোগিরা সাংবাদিকদের স্মরণাপন্ন হন।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী আবুল কালাম সোহেলসহ অন্যান্য ভুক্তভোগিরা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘মাসুকা তার স্বামীসহ পরিবারের লোকজনের সার্বিক সহযোগিতায় নানা কৌশল অবলম্বন ও প্রলোভন দেখিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিবেশী অনেকের নামে কয়েকটি এনজিও থেকে বিভিন্ন পরিমানে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করে উধাও হয়ে যায়। আমাদের এ টাকা দিয়ে সে তার দুই ভাইকে বিদেশ পাঠায় এবং এ টাকা তারা সেখানে ব্যবসা বানিজ্য করছে। এছাড়াও মানুষের কাছ থেকে নেয়া সে টাকায় বাড়িতে ঘর নির্মাণসহ নিত্যনতুন নানা আসবাবপত্র ক্রয় করে বিলাসী জীবনযাপন শুরু করে মাসুকা। অবাক করা বিষয় হলো, কারো লেনদেনের বিষয়ে কেউ জানতো না। এখানে সে খুবই চতুরতা দেখিয়েছে। পরে তার আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় বিষয়গুলো এলাকায় জানাজানি হয়। আমরা সামাজিকভাবেও বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে কয়েকবার গ্রাম্য শালিসে পর্যায়ক্রমে টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রæতি দিয়েও তা রক্ষা না করায় আমরা আইনের দারস্ত হয়েছি। আমরা আমাদের পাওয়া টাকা ফেরৎ পেতে এবং মাসুকার মত এমন জগন্য প্রতারকের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করছি’।
এ ব্যাপারে জানতে মাসুকার বাড়ীতে গিয়ে তাকে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে, তার মা হাজেরা বেগমের সাথে কথা বললে তিনি মানুষের কাছ থেকে মাসুকার টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা। কেই যদি টাকা দিয়ে থাকে তারা আর যে টাকা নিয়েছে সে জানে’।
এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই মো: তোফায়েল হোসেন বলেন, ‘ভুক্তভোগি কর্তৃক থানায় অভিযোগ দায়েরের পর পুলিশি তৎপরতায় সামাজিকভাবে বৈঠকে বসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে। বিবাদী পক্ষের অনুপস্থিতির কারণে এখন পর্যন্ত সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়নি। প্রতারক চক্রটি বেশ ধূর্ত প্রকৃতির। তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধিন রয়েছে’।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাহাবউদ্দিন মজুমদার রানা বলেন, ‘মাসকা ও তার পরিবারের প্রতারণার বিষয়টি সত্য। তারা নানা কৌশলে এলাকার অসহায় মানুষদের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়ে গেছে। ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মীমাংশার চেষ্টা করা হয়েছে। গ্রাম্য শালিসে মাসুকা ও তার পরিবারের লোকজন টাকা পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে। সমাধান না হওয়ায় ভুক্তভোগিরা থানায় অভিযোগ করেছে। এরপরও অসহায় এ লোকগুলোর পাওনা টাকা উদ্ধারে একজন ইউপি সদস্য হিসেবে আমার যা করণীয় আমি তা করবো’।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: