শামসুল ইসলাম, রাজশাহী প্রতিনিধি:
বহুল আলোচিত ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি মামলায় অভিযুক্ত বোয়ালিয়া থানার সেই এসআই নাদিমের বিরুদ্ধে এবার পুকুর খনন, গ্রেফতার বানিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতে বর্তমানে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কর্ণহার থানার এসআই নাদিম অর্থের বিনিময়ে মদত দিচ্ছেন পুকুর খননে। এছাড়াও এসআই শাহিন ও এএসআই সিরাজুল ইসলামকে নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষজনকে থানায় এনে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, বোয়ালিয়া থানায় থাকা কালে এস আই নাদিম শিরোইল এলাকার একজন ব্যবসায়ীর কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা চান। সেই ঘটনায় ঐ ব্যবসায়ী আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলাও করেন। যা বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছেন। এ ঘটনায় তাকে বদলি করা হয় আরএমপি'র কর্ণহার থানায়। সেখানে দ্বায়িত্ব পান সেকেন্ড অফিসারের। এরপর বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি। এস আই শাহিন ও এএসআই সিরাজুল ইসলামকে নিয়ে গড়ে তুলেন সিভিল টিম। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন লোকজনকে ধরে থানায় নিয়ে চলে দেনদরবার। পর্যাপ্ত চাহিদা পূর্ণ হলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়, অন্যথায় দেওয়া হয় মামলা।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৪ জুন পুকুর খননের অপরাধে নয়ন ও জাহাঙ্গীর নামে দুজনকে ধরে থানায় নিয়ে আসে এসআই শাহিন ও এএসআই সিরাজুল ইসলাম। এরপর তাদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও পুকুর খনন বন্ধে ব্যবস্থা নিবেন ইউএনও অথবা এসি ল্যান্ড।
এছাড়া ৫ জুন টিকটক ভিডিও করার অপরাধে একটি প্রেম ঘটিত ঘটনার অভিযোগে তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে এসআই শাহিন। এরপর ৬০ হাজার টাকায় রফাদফা করে নগদ ৩০ হাজার টাকা এসআই নাদিম নিয়ে তাদের ছেড়ে দেন। আটকরা হলেন, রবিউল, রতন, শফিকুল।
স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, রবিউল, রতন, শফিকুলকে থানায় নিয়ে গিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে ৬০ হাজার টাকার চুক্তিতে ছেড়ে দেওয়া হয়। নগদ ৩০ হাজার টাকা সেই সময় দিলেও পরে আরও ৩০ হাজার টাকার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন এসআই শাহিন। সেই তিন যুবক আতংকে এলাকা ছাড়া হয়ে আছে। তাদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বড় মামলায় ফাঁসানোর।
এদিকে বিশ্বস্ত সুত্র নিশ্চিত করেন, লেবু নামে এক পুলিশ সদস্যকে মারধর করেছেন এস আই নাদিম। সে বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে বিচার চেয়েছেন লেবু।
এ বিষয়ে জানতে এসআই নাদিমকে ফোন দিলে তিনি বলেন, পুকুর খনন বন্ধ করতেই নয়ন ও জাহাঙ্গীরকে থানায় ডেকে আনা হয়েছিলো। টাকা পয়সা নেওয়া ঘটনা সত্য নয়। তাদের পুকুর খনন কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পুকুর খনন বন্ধ করায় একটি মহল মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে। চাঁদাবাজি মামলাটি আদালতে তদন্তাধীন আছে।
পুলিশ সদস্য লেবুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এত কথা তো ফোনে বলা যায় না, একদিন আসেন চা খেতে খেতে সব কথা বলা যাবে।
জানতে চাইলে এসআই শাহিন বলেন, আমি শুধু দুই ঘটনায় উক্ত ব্যক্তিদের থানা এনে দিয়েছি। থানার দ্বায়িত্বরত অফিসার এসআই নাদিম স্যার কি করেছে তা বলতে পারবো না।
এ বিষয়ে কর্ণহার থানার ওসি ঈসমাইল হোসেন বলেন, আমি রাজশাহীর বাহিরে ঢাকায় আছি। যতদুর জানি পুকুর খনন বন্ধ রাখতে তাদের থানায় ডেকে নিষেধ করা হয়েছে। এর বাহিরে কিছু বলতে পারবো না। পরে যে তিনজনকে ডেকে আনা হয়েছিলো। একটি মেয়ের মৌখিক অভিযোগে তাদের ডেকে আনা হয়। টাকা পয়সার বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: